বাসস
  ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩৮

কলম্বিয়ায় বিমান হামলায় ১৯ গেরিলা নিহত

ঢাকা, ১২ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : কলম্বিয়ার শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা মঙ্গলবার মাদক পাচারকারী একটি গেরিলা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে একটি বড় ধরনের অভিযান পরিচালনার কথা প্রকাশ করেছেন। 

তারা বলেছেন, দেশটির আমাজন অঞ্চলে বিমান হামলায় ১৯ জন যোদ্ধা নিহত হয়েছেন।

খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।

ফার্কের একটি ভিন্নমতাবলম্বী সাবেক বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে।

এই গ্রুপটির কারণে দেশটির প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেট্রো নির্বাচন-পূর্ব সমালোচনা ও সশস্ত্র কোকেন-পাচারকারী গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে অনীহার অভিযোগে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হন।

অ্যাডমিরাল ফ্রান্সিসকো কিউবিডস বলেছেন, ‘১০ নভেম্বর ভোরে’ এই ঘটনা ঘটে এবং এই অভিযানের ফলে ‘১৯ সন্ত্রাসী নিহত’ হয়েছে। পাশাপাশি একজনকে আটক ও সামরিক সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।

তিনি বলেন, সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ‘আসন্ন’ বিদ্রোহী হামলার প্রতিক্রিয়ায় এ বিমান হামলা চালানো হয়েছে।

পেট্রো বলেন, শান্তি আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর, তিনি দেশের মোস্ট ওয়ান্টেড বিদ্রোহী গোষ্ঠী ইভান মর্ডিস্কোর যোদ্ধার নেতৃত্বাধীন এই গোষ্ঠীর উপর ‘বোমা হামলা ও সামরিকভাবে বিলুপ্তির’ নির্দেশ দিয়েছিলেন।

মর্ডিস্কো সেন্ট্রাল জেনারেল স্টাফ (ইএমসি) দ্রুপের নেতৃত্ব দেন, তারা কলম্বিয়ান সরকারের সাথে ২০১৬ সালের শান্তি চুক্তি প্রত্যাখ্যান করেছিল।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ফার্ক-এর নিরস্ত্রীকরণের পর থেকে ইএমসি শক্তিশালী হয়েছে। 

কলম্বিয়ার সশস্ত্র গোষ্ঠী ইএমসি বা কেন্দ্রীয় সামরিক কমান্ড সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উল্লেখযোগ্যভাবে তাদের প্রভাব ও ক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে। 

বিশেষজ্ঞদের মতে, ফার্ক গেরিলা বাহিনীর নিরস্ত্রীকরণের পর দেশের বহু দুর্গম অঞ্চলে ইএমসি পুনরায় প্রভাব বিস্তার করছে।

ফার্কের সাবেক সদস্যদের একাংশ অস্ত্র সমর্পণ না করে, নতুন করে সংগঠিত হয়ে ইএমসি নামে কার্যক্রম শুরু করে। 

বর্তমানে এই গোষ্ঠী মাদক পাচার, চাঁদাবাজি ও অবৈধ খনন কার্যক্রমের মাধ্যমে বিপুল অর্থনৈতিক শক্তি অর্জন করছে। এর ফলে কলম্বিয়ার বহু গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিরাপত্তা পরিস্থিতির আবারও অবনতি ঘটছে।

নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, সরকারের উপস্থিতি সীমিত—এমন এলাকাগুলোতে ইএমসি এখন প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের মতো প্রভাব বিস্তার করছে। তারা স্থানীয় জনগণের ওপর কর আরোপ, পাচার রুট নিয়ন্ত্রণ ও অবৈধ খনন থেকে আয় করছে।

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে যদি সরকারের পক্ষ থেকে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়া হয়, তবে ইএমসি ভবিষ্যতে কলম্বিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে উঠতে পারে।

অক্টোবরে ওয়াশিংটন কলম্বিয়ার বামপন্থী প্রেসিডেন্ট, তার স্ত্রী, ছেলে ও একজন শীর্ষ সহযোগীর বিরুদ্ধে মাদক কার্টেলদের মদদ দেওয়ার অভিযোগ এনে, তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।

মার্কিন ট্রেজারি পেট্রো, ফার্স্ট লেডি ভেরোনিকা অ্যালকোসার, তার বড় ছেলে নিকোলাস ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরমান্ডো বেনেদেত্তিকে কালো তালিকাভুক্ত করেছে। তাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ নিষিদ্ধ এবং তাদের কাছে থাকা যে কোন ধরনের মার্কিন সম্পদ জব্দ করা হয়েছে।

যদিও যক্তরাষ্ট্র সরকার পেট্রো যে সরাসরি মাদক পাচারের সঙ্গে যুক্ত তার কোনও প্রমাণ দেয়নি।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকা সাধারণত মাদকের কর্তাব্যক্তি, সন্ত্রাসী কর্মী ও ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত একনায়কদের জন্য সংরক্ষিত থাকে।

দক্ষিণ আমেরিকার উপকূলে সন্দেহভাজন মাদক নৌযানগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের হামলা নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পেট্রোর মধ্যে কয়েক মাস ধরে চলা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের অবসান ঘটেছে।

২০২২ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে, পেট্রো খোলা যুদ্ধ পরিচালনার পরিবর্তে সুসজ্জিত কোকেন উৎপাদনকারী গোষ্ঠীগুলোকে আলোচনায় যুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

সমালোচকরা বলছেন, নীতিটি কার্টেল ও গেরিলা গোষ্ঠীগুলোকে সমৃদ্ধ হতে দিয়েছে, অঞ্চল দখল করেছে ও রেকর্ড পরিমাণে কোকেন উৎপাদন করেছে।

পেট্রোর আবারও প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সাংবিধানিকভাবে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

তবে, সমালোচনার ফলে আগামী বছরের নির্বাচনে তার রাজনৈতিক মিত্রদের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।