শিরোনাম

ঢাকা, ১১ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : নতুন পার্লামেন্ট নির্বাচনের জন্য মঙ্গলবার ভোট দিচ্ছেন ইরাকিরা। চার বছরের মেয়াদের এই নির্বাচনকে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে ওয়াশিংটন ও তেহরান।
বাগদাদ থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
নির্বাচনের পর কী হতে পারে এবং এর আঞ্চলিক প্রভাব কী—তা নিয়েই সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ।
ভোটের পর কী হবে?
প্রথমে ইরাকের সুপ্রিম কোর্টকে ফলাফল অনুমোদন করতে হবে।
এর দুই সপ্তাহ পর নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শপথ নেবেন এবং স্পিকার নির্বাচন করবেন। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী সুন্নি সম্প্রদায়ের একজন স্পিকার হবেন।
প্রথম বৈঠকের ৩০ দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে হবে। প্রেসিডেন্ট হবেন একজন কুর্দি এবং তাকে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে নির্বাচিত হতে হবে।
নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ১৫ দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ দিবেন। নির্বাচনের পর গঠিত বৃহত্তম শিয়া জোট ওই পদে প্রার্থী মনোনয়ন দেয়।
এরপর নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে ১ মাসের মধ্যে সরকার গঠন করতে হবে এবং তা সংসদে উপস্থাপন করে আস্থা ভোটে পাশ করাতে হবে।
তবে, এসব প্রক্রিয়া প্রায়ই জটিল হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বন্দ্বে নির্ধারিত সময়সীমা মানা হয় না। দীর্ঘ আলোচনা ও সমঝোতার কারণে সংসদীয় কার্যক্রম বিলম্বিত হয় এবং কখনও কখনও অস্থিরতাও সৃষ্টি হয়।
সরকার গঠনের প্রক্রিয়া -
প্রধানমন্ত্রী মনোনয়ন এবং সরকার গঠনই সবচেয়ে কঠিন ধাপ।
আগের সংসদগুলোতে শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দলগুলো আপস করে একত্রে সরকার গঠন করেছে।
এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তাই যে জোট সবচেয়ে বেশি সমর্থন পাবে, তারাই সরকার গঠন করবে।
২০২১ সালে প্রভাবশালী শিয়া নেতা মোক্তাদা আল সদর-এর দল সবচেয়ে বেশি আসন পেলেও এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি।
পরে সরকার গঠনের জন্য চেষ্টা চালালেও শিয়া দলগুলোর সমর্থন না পাওয়ায় তিনি সংসদ থেকে সরে দাঁড়ান।
পরবর্তীতে ইরানপন্থী দলগুলো ‘কো-অর্ডিনেশন ফ্রেমওয়ার্ক’ নামে একটি বড় জোট গঠন করে। এই জোটই মোহাম্মদ শিয়া আল-সুদানিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতায় আনে।
আঞ্চলিক প্রভাব
নতুন প্রধানমন্ত্রীকেও আগের নেতার মতো ইরাকের দুই প্রধান মিত্র ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন আগ্রাসনের পর থেকেই ইরান ইরাকের রাজনীতিতে বড় প্রভাব ধরে রেখেছে। তেহরান শুধু প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদেরই নয়, সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকেও সমর্থন দেয়।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক হামজেহ হাদাদ বলছেন, ‘২০০৩ সালের পর ইরান এখন সবচেয়ে দুর্বল অবস্থায় আছে।’
গত দুই বছরে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোর ওপর ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এর মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনের হামাস, লেবাননের হিজবুল্লাহ এবং ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা।
এমনকি ইরান নিজেও জুন মাসে ইসরাইলের নজিরবিহীন বিমান হামলার শিকার হয়েছিল।
নির্বাচনের আগে ইরাক নিয়ে ইরানের কয়েকটি লক্ষ্য রয়েছে-প্রভাব ধরে রাখা, যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করা এবং ইরানি পণ্য ইরাকের বাজারে প্রবেশ করানো।
তবে হাদাদ বলছেন, ‘তেহরান জানে, ইরাকে প্রকাশ্যে হস্তক্ষেপ করাটা তাদের জন্য ভালো হবে না।’ কারণ ইরাকই একমাত্র ঘনিষ্ঠ মিত্র, যেটি ইসরাইলের হামলার বাইরে রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘ইরান দুর্বল হলেও ইরাকে তাদের স্বাভাবিক প্রভাব বজায় থাকে। কারণ ইরাকি নেতারা স্বাভাবিকভাবেই ইরানকে অগ্রাধিকার দেয়।’
অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরানের প্রভাব কমাতে।
তারা দীর্ঘদিন ধরে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোকে নিরস্ত্রীকরণের জন্য ইরাকের ওপর চাপ দিয়ে আসছে।
ইরান যাতে নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে যেতে না পারে, সে জন্য যুক্তরাষ্ট্র ইরাকি ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনেছে। ধারণা করা হচ্ছে, মঙ্গলবারের ভোটের পরও এই কৌশল অব্যাহত থাকবে।