শিরোনাম

ঢাকা, ৮ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : প্রাচীন পারস্য জয়ের স্মৃতিস্তম্ভ উন্মোচন অনুষ্ঠানকে ঘিরে শুক্রবার তেহরানের কেন্দ্রে মানুষের ঢল নামে। এই স্মারক উন্মোচনকে সম্প্রতি ইসরাইল-ইরানের ১২ দিনের যুদ্ধের পর সমসাময়িক শত্রুদের প্রতি শক্তি ও প্রতিরোধ প্রদর্শনের বার্তা হিসেবে ধরা হচ্ছে।
তেহরান থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
শুক্রবার হাজার হাজার মানুষ এনঘেলাব স্কোয়ারে জমায়েত হন। স্মৃতিস্তম্ভে দেখা যাচ্ছে সাসানিয়ান রাজা শাপুর প্রথমকে। তিনি ঘোড়ার ওপর বসে আছেন, আর তার সামনে হাটু গেড়ে বসে আছেন পরাজিত রোমান সম্রাট ভ্যালেরিয়ান। শাপুর তাকে তৃতীয় শতকে বন্দি করেছিলেন।
শাপুরের পিঠের উপরের দিকে আরও দু’টি ভাস্কর্য রাখা হয়েছে। একটি প্রাচীন পারস্য যোদ্ধা ও একটি আধুনিক ইরানি সৈন্যের। উভয়েই একই বর্শা ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের ঢালে খোদাই করা স্লোগান ছিল- ‘তুমি আবার ইরানের সামনে হাঁটু গেড়ে বসবে।’
৪০ বছর বয়সি ফাতেমে রোশান বক্স জানান, ‘ইতিহাসে এমন ঘটনা বহুবার ঘটেছে। ভবিষ্যতেও যারা ইরানে হামলা চালাবে, তাদেরকে একই ভাগ্য বরণ করতে হবে।’
নতুন এই স্মারক ভাস্কর্যটি তৈরি করা হয়েছে দক্ষিণ ইরানের একটি প্রাচীন পাথরের খোদাইয়ের অনুকরণে। সেটি মূল বিজয়ের পরপরই খোদাই করা হয়েছিল।
২১ বছর বয়সি শিক্ষার্থী মঈন বলেন, ‘আমরা ইতিহাসের বইয়ে এর সম্পর্কে পড়েছি। এমন সমাবেশ মানুষের মনোবল জাগায়। আমাদের দেশ সবসময় জয়ী হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও হবে।’
শাপুরের মূর্তির পাশে আয়োজকরা নিহত সামরিক কর্মকর্তাদের ছবির ব্যানারও টানিয়েছিল। যার মধ্যে ছিল ২০২০ সালে বাগদাদে মার্কিন হামলায় নিহত রেভল্যুশনারি গার্ডস কমান্ডার কাসেম সোলেমানি ও ইসরাইলি হামলায় নিহত গার্ডসের অ্যারোস্পেস প্রধান আমিরালি হাজিজাদেহর ছবি।
জুনে ইসরাইল ইরানের ওপর সামরিক অভিযান চালায়। সরকারি তথ্যমতে, ওই হামলায় ১ হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। পরবর্তীতে তেহরান পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালালে ইসরাইলেও বেশ কয়েকজন নিহত করেছে।
মনোবিজ্ঞানী রোশান বক্স বলেন, ইতিহাসে আছে, ইরানি জেনারেলরা সবসময় অবমাননাকারী ও অহংকারী শক্তিকে পরাস্ত করে আসছে। তিনি গত জুনে তেহরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলার ইঙ্গিত দিয়ে এই মন্তব্য করেন।
‘সুখকর উৎসাহ’
স্কোয়ারের বিশাল ব্যানারে পারস্য সাহিত্যের পৌরাণিক নায়কদেরও দেখানো হয়। যেমন, মহাকাব্য ‘শাহনামা’-এর রোস্তম শত্রুদের পরাজিত করছে।
অন্য ব্যানারে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের বিভিন্ন দৃশ্য তুলে ধরা হয়। ২০১৬ সালে ইরান রেভল্যুশনারি গার্ডস কর্তৃক মার্কিন নেভি জাহাজ জব্দের ছবিও প্রদর্শিত হয়।
এর আগে জুনে তেহরানের উত্তরাঞ্চলের ভানাক স্কোয়ারে প্রাচীন নায়ক আরশের ১৬ মিটার উঁচু ব্রোঞ্জ ভাস্কর্য উন্মোচন করা হয়।
তেহরান মিউনিসিপ্যালিটির কর্মকর্তা দাভুদ গুদারজি জানান, প্রকল্পটি আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির নির্দেশনায় ডিজাইন ও বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, স্মৃতিস্তম্ভটি আপাতত এনঘেলাব স্কোয়ারেই থাকবে। পরে তেহরানের প্রধান প্রবেশপথে স্থাপন করা হবে, যাতে বিদেশি কূটনীতিক ও পর্যটকরা দেখতে পারেন।
উন্মোচন অনুষ্ঠানে পাঁচ ইরানি পপ শিল্পী ফ্রি কনসার্ট করেন। দর্শকদের একজন সাজাদ পেজেশকিয়ান বলেন, ‘মন ভালো করতে এবং গান শুনতে’ এসেছি।