শিরোনাম

ঢাকা, ৩ নভেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসান সোমবার শপথ নিতে যাচ্ছেন। নির্বাচনী বিক্ষোভের পর ইন্টারনেট বন্ধ ও নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে কয়েক শত মানুষ নিহত হয়েছে বলে বিরোধীরা দাবি করছে।
বিরোধীদের অভিযোগ ও অসন্তোষের মধ্যেই সোমবার সামিয়ার শপথ গ্রহণের কথা রয়েছে।
দেশটির নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, হাসান ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।
নাইরোবি থেকে বার্তাসংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
তবে গত বুধবারের ভোটের ফলাফল বর্জন করেছে প্রধান বিরোধী চাদেমা দল।
দলটি জালিয়াতির অভিযোগ এনে নতুন নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে।
চাদেমা দলকে এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেওয়া হয়নি।
খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি রাজধানী ডোডোমার স্টেট হাউসে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। তবে এটি সচারাচর কোনো স্টেডিয়ামে হয়ে থাকে।
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, অনুষ্ঠানে জনসাধারণ উপস্থিত থাকবে না।
নির্বাচনের দিন বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে সম্পূর্ণ ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট থাকায়, পূর্ব আফ্রিকার দেশটিতে ধারাবাহিক তথ্যগুলো করা সম্ভব হয়নি।
একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, তানজানিয়ার আশপাশের হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয় কয়েক শত এমনকি কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যুর রেকর্ডের বিশ্বাসযোগ্য তথ্য জানা গেছে।
চাদেমা এএফপিকে বলেছে, শনিবার পর্যন্ত কমপক্ষে ৮০০ জন মৃত্যুর রেকর্ড করা হয়েছে।
তবে এসব পরিসংখ্যানের কোনোটিই সঠিকভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
সরকার মৃত্যুর বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
তবে বিপুল সংখ্যক বাহিনী মোতায়েনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে সরকার।
সোমবার স্কুল-কলেজ ও গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, পুলিশ ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট থাকার সুযোগে গত সপ্তাহে সংঘটিত নৃশংসতার ভিডিও থাকতে পারে, এমন বিরোধী সদস্য ও বিক্ষোভকারীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করার উদ্বেগজনক খবর পাওয়া গেছে।
দার-উস-সালাম ও অন্যান্য নগরীগুলো সপ্তাহের শেষে সম্পূর্ণ লকডাউন অবস্থায় থাকায় পরিস্থিতি অনেকটা শান্ত ছিল।
এএফপি’র একজন প্রতিবেদক বলেছেন, পুলিশ নগরীর আশপাশে ঘোরাফেরা করা প্রায় সকলকেই থামিয়ে পরিচয়পত্র ও ব্যাগ পরীক্ষা করছে।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র বিকেলে দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।
জাঞ্জিবার দ্বীপে খুব কম বিক্ষোভ দেখা গেছে।
এএফপি’র সাংবাদিকরা নির্বাচন পরবর্তী দিনগুলোয় মুখোশধারী সশস্ত্র ব্যক্তিদের পরিচয়পত্র ছাড়াই ঘোরাফেরা করতে দেখেছেন।
রোববার প্রতিবেশী রাষ্ট্র কেনিয়ার একটি মানবাধিকার গোষ্ঠীর প্রকাশিত ভয়াবহ ফুটেজে রাস্তায় স্তূপীকৃত লাশের ছবি দেখা গেছে।
তারা বলেছে যে তানজানিয়ার অভ্যন্তর থেকে সেগুলো ধারণ করা হয়েছে।
ছবিগুলোর সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
রোববার পোপ লিও চতুর্দশ তানজানিয়ার জন্য প্রার্থনার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় অসংখ্য হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।
পোপ বলেন, ‘আমি সকলকে সব ধরণের সহিংসতা এড়াতে ও সংলাপের পথ অনুসরণ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
-‘সন্ত্রাসের ঢেউ’-
২০২১ সালে তার পূর্বসূরি মাগুফুলির আকস্মিক মৃত্যুর পর হাসানকে ভাইস-প্রেসিডেন্ট পদ থেকে উন্নীত করা হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, তিনি তার স্থান সুদৃঢ় করতে ও ক্ষমতাসীন দলের সমালোচকদের চুপ করিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে, একটি জোরালো নির্বাচনী জয় চেয়েছিলেন।
বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন অভিযোগ করেছে যে, নির্বাচনের আগে তিনি দেশটিতে ব্যাপক সন্ত্রাস চালিয়েছেন।
সংগঠনগুলো দাবি দাবি করছে, ভোটের আগের সপ্তাহগুলোয় একাধিক আলোচিত অপহরণ ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা ঘটেছে— যা নির্বাচনের চূড়ান্ত দিনগুলোয় আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও, নির্বাচনের দিন বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। জনতা সারা দেশে রাস্তায় নেমে আসে, সামিয়ার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে এবং পুলিশ ও ভোটকেন্দ্রে হামলা চালায়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে ইন্টারনেট বন্ধ ও কারফিউ জারি করা হয়।
সহিংসতা শুরু হওয়ার আগে এএফপি’র সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকরা ভোটকেন্দ্রগুলোর বেশিরভাগই ফাঁকা দেখতে পান।
তবে নির্বাচন কমিশন পরে জানিয়েছে, এই নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি ছিল ৮৭ শতাংশ।
জাতিসংঘ প্রধান আন্তোনিও গুতেরেসের মুখপাত্র গত সপ্তাহে বলেন, তানজানিয়ার বিক্ষোভ ও হতাহতের খবরসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গুতেরেস ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’।