শিরোনাম

ঢাকা, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : তানজানিয়ায় বুধবার প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছাড়াই নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দেশটির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীদের হয় কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে অথবা প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
দেশটির প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসান (৬৫) একটি বড় ধরনের বিজয়ের মাধ্যমে তার অবস্থান সুদৃঢ় করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, তিনি যদি এই নির্বাচনে বড় ধরনের বিজয় অর্জন করতে পারেন, তবে তার নিজের দলের মধ্যে সমালোচকদের মুখ বন্ধ হয়ে যাবে।
খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।
তার পূর্বসূরী কঠোর হাতে দায়িত্ব পালনকারী জন মাগুফুলির মৃত্যুর পর ২০২১ সালে তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
সামিয়া জন মাগুফুলির শাসন আমলে তানজানিয়ার ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলেন।
তবে তার এই পথটি মসৃণ ছিল না। দেশের প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাকে বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
সামিয়ার আদিনিবাস আধা-স্বায়ত্তশাসিত দ্বীপ জাঞ্জিবা’য়।
বিরোধী দল ও গণমাধ্যমের ওপর বিধিনিষেধ শিথিল করার জন্য প্রথমে গণতান্ত্রিক প্রচারকদের দ্বারা তিনি সম্মানিত হয়েছিলেন। তবে শিগগিরই সে আশা ম্লান হয়ে যায়।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে ‘গুম ও নির্যাতন এবং বিরোধী নেতা ও কর্মীদের বিচারবহির্ভূত হত্যা’সহ নানা অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, ‘কর্তৃপক্ষ ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক বিরোধী দল ও সরকারের সমালোচকদের দমন করেছে, গণমাধ্যমকে দমন করেছে ও নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।’
সামিয়ার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী টুন্ডু লিসু রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে বিচারের সম্মুখীন। তিনি সম্ভাব্য মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি।
তার দল চাদেমাকে নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা দেওয়া হয়েছে।
অন্য একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী, এসিটি-ওয়াজালেন্দো’র লুহাগা এমপিনাকে কৌশলগত কারণে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে।
এমনকি, আশঙ্কা করা হচ্ছে যে ক্ষমতাসীন দল চামা চা মাপিনদুজি (সিসিএম)-এর সদস্যদেরও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের নজরে রাখা হচ্ছে।
সামিয়ার সমালোচনা করার পর সিসিএম-এর সাবেক মুখপাত্র ও কূটনীতিক হামফ্রে পোলেপোল এই মাসে তার বাড়ি থেকে নিখোঁজ হন। তার পরিবার তার বাড়িতে রক্তের দাগ খুঁজে পেয়েছে।
তিনি কিউবায় তানজানিয়ার রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
টাঙ্গানিকা ল সোসাইটি জানিয়েছে, সামিয়ার ক্ষমতায় আসার পর থেকে তারা ৮৩টি অপহরণের বিষয় নিশ্চিত করেছে।
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আরও ২০টি অপহরণের খবর পাওয়া গেছে।
গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ কঠোরভাবে দমন করে।
২০২০ সালের নির্বাচনের আগেও তারা বিরোধীদের দমন করেছে।
একজন বিশ্লেষক বলেন, আমরা ভেবেছিলাম মাগুফুলি একটি ব্যতিক্রম এবং ২০২০ সালের নির্বাচন ছিল একটি অস্বাভাবিক ঘটনা। আমার আশঙ্কা, এটিই এখন নতুন বাস্তবতা হয়ে উঠেছে।
তানজানিয়ায় বিক্ষোভ বিরল। আংশিকভাবে একটি অপেক্ষাকৃত গতিশীল অর্থনীতির কারণে জনমনে ক্ষোভ কম।
বিশ্বব্যাংকের মতে, শক্তিশালী কৃষি, পর্যটন এবং খনি খাতের কারণেই দেশটির অর্থনীতি চাঙ্গা।
সামিয়া ভোটারদের মন জয় করার জন্য বড় অবকাঠামো প্রকল্প ও সর্বজনীন স্বাস্থ্য বীমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
এদিকে, পুলিশ জানিয়েছে, তারা এই সপ্তাহান্তে উত্তর-পশ্চিম কাগেরা অঞ্চলে ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছে, যারা নির্বাচনের দিন অস্থিরতার পরিকল্পনা করছিল।
সামিয়া গত মাসে এক নির্বাচনী সমাবেশে বলেন, ‘আমি নাগরিকদের আশ্বস্ত করতে চাই যে ভোটের দিন কোনও নিরাপত্তার হুমকি থাকবে না।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা নিরাপত্তার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। যারা এই নির্বাচনি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন, তাদের নির্বাচন ব্যাহত করার চেষ্টা করা উচিত নয়।’