শিরোনাম

ঢাকা, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): হারিকেন ‘মেলিসা’ ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে ওঠেছে।
সোমবার জ্যামাইকা এবং ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের অন্যান্য অংশে ক্যাটাগরি ৫-এ পরিণত হয়ে আঘাত হানে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে ভয়াবহ বন্যার আভাস দিয়েছে এবং বাসিন্দাদের অবিলম্বে নিরাপদে আশ্রয় নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
এই সপ্তাহে হাইতি এবং ডোমিনিকান-প্রজাতন্ত্রে কমপক্ষে চারজনের মৃত্যুর জন্য মেলিসাকে দায়ী করা হয়েছে, কারণ এর বাইরের ব্যান্ডগুলো ভারী বৃষ্টিপাত এবং ভূমিধসের সৃষ্টি করেছে।
কিংস্টন থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
মার্কিন জাতীয় হারিকেন সেন্টার (এনএইচসি) জানিয়েছে, মেলিসা’র প্রভাবে বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ প্রতি ঘন্টায় ১৬০ মাইল (২৬০ কিলোমিটার) কাছাকাছি।
৪০ ইঞ্চি (প্রায় এক মিটার) পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, বন্যার ফলে জ্যামাইকা, হাইতি এবং ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধস হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এনএইচসি-র উপ-পরিচালক জেমি রোম একটি ওয়েবকাস্ট ব্রিফিংয়ে বলেছেন, ‘ধীর গতির কারণে চরম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা জ্যামাইকার জন্য একটি বিপর্যয়কর পরিস্থিতি তৈরি করতে চলেছে’।
মেলিসা বর্তমানে প্রতি ঘন্টায় মাত্র তিন মাইল বেগে চলছে।
রোম বলেন, ‘আপনার যেখানেই থাকুন না কেন এবং কয়েক দিন ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে’।
‘আগামী কয়েক ঘন্টার মধ্যে এখানে পরিস্থিতি সত্যিই, সত্যিই দ্রুত অবনতি হবে। সূর্যাস্তের পর বাইরে বেরোবেন না।’
শনিবার সেখানকার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ডমিনিকান প্রজাতন্ত্রে ৭৯ বছর বয়সী এক ব্যক্তিকে স্রোতে ভেসে যাওয়ার পর মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। ১৩ বছর বয়সী এক ছেলে নিখোঁজ রয়েছে।
প্রতিবেশী হাইতিতে ঝড়ের কারণে তিনজনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে বেসামরিক সুরক্ষা সংস্থা।
ডমিনিকান প্রজাতন্ত্রের তার পাড়া থেকে পালিয়ে আসা ৬৬ বছর বয়সী গৃহিণী অ্যাঞ্জেলিটা ফ্রান্সিসকো কান্নাজড়িত কণ্ঠে এএফপি’কে বলেন, ‘আপনি শক্তিহীন বোধ করেন। কিছু করতে অক্ষম বোধ করেন, কেবল পালিয়ে যান এবং সবকিছু ফেলে যান’।
বন্যার পানিতে তার ঘর ডুবে গেলে তার রেফ্রিজারেটর ভেসে যায় এবং ঘরের চারপাশে আবর্জনা জমে যায়।
সোমবার পর্যন্ত মেলিসা থেকে জ্যামাইকার পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার ভোরবেলা ভূমিধ্বসের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এনএইচসি সতর্ক করেছে, জ্যামাইকায় ‘বিপর্যয়কর এবং প্রাণঘাতী আকস্মিক বন্যা এবং অসংখ্য ভূমিধস এবং সম্ভাব্য’।
এনএইচকে আরো বলেছে, বিধ্বংসী বাতাসের ফলে ‘ব্যাপক অবকাঠামোগত ক্ষতি, দীর্ঘস্থায়ী বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন’ হয়ে যেতে পারে’।
জ্যামাইকার আবহাওয়া পরিষেবা অনুসারে, দেশের দক্ষিণ উপকূলরেখায় ১৩ ফুট (চার মিটার) পর্যন্ত ঝড়ের ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে এবং দ্বীপরাষ্ট্রের বেশ কয়েকটি উপকূলীয় অঞ্চলে জনগণকে জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
১৯৮৮ সালের হারিকেন গিলবার্টের চেয়েও খারাপ হতে পারে এমন সতর্কবার্তায় জনগণ বিশেষভাবে উদ্বিগ্ন। যার ফলে জ্যামাইকায় ৪০ জনেরও বেশি এবং ক্যারিবীয় অঞ্চল এবং মেক্সিকোতে শত শত মানুষ মারা যায়।
কিংস্টনের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর শনিবার রাতে বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং সমস্ত সমুদ্রবন্দরও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সরকারি কর্মকর্তা ডেসমন্ড ম্যাকেঞ্জি এক ব্রিফিংয়ে বলেছেন, দ্বীপপুঞ্জ জুড়ে ঝড়ের আশ্রয়কেন্দ্রগুলো সক্রিয় করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সরকার হিসেবে আমাদের আর কিছুই করার নেই, কেবল সতর্কবার্তাটি মেনে চলার জন্য অনুরোধ করা গেল’।
তিনি সতর্ক করে দেন, ‘এটি এমন একটি বাজি যা আপনি জিততে পারবেন না। মেলিসার বিরুদ্ধে আপনি বাজি ধরতে পারবেন না’ ।
সোমবার ০৯০০ জিএমটি-হারিকেনটি কিংস্টনের প্রায় ১৩০ মাইল দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং কিউবার গুয়ান্তানামো উপসাগরের ৩১৫ মাইল দক্ষিণ-দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
জ্যামাইকা অতিক্রম করার পর, মঙ্গলবার রাতে ঝড়টি উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে পূর্ব কিউবার ওপর দিয়ে অতিক্রম করার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। একই সাথে হাইতি এবং ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে বৃষ্টিপাত এবং প্রবল বাতাস বয়ে আনবে।
ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের জরুরি অপারেশন সেন্টার আকস্মিক বন্যা, নদীর উত্থান এবং ভূমিধসের ঝুঁকির কারণে ৩১টি প্রদেশের মধ্যে নয়টিতে ‘রেড এলার্ট’ জারি করেছে।
মেলিসা আটলান্টিক হারিকেন মৌসুমের ১৩তম ঝড়, যা জুনের শুরু থেকে নভেম্বরের শেষের দিকে আঘাত হানে।
জ্যামাইকাকে আঘাত করা শেষ বড় হারিকেন ছিল ‘বেরিল’। এই ঝড় বছরের জুলাইয়ের শুরুতে আঘাত হানে এটি একটি অস্বাভাবিক শক্তিশালী ঝড়।
বেরিল দ্বীপের দক্ষিণ উপকূল অতিক্রম করার সময় জ্যামাইকায় মুষলধারে বৃষ্টিপাত এবং প্রবল বাতাস নিয়ে আসে। যার ফলে কমপক্ষে চারজন মারা যায়।