শিরোনাম

ঢাকা, ২৭ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): জাপানে ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্রাটের সঙ্গে দেখা করবেন, নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সঙ্গে আলোচনা করবেন এবং ইউএসএস জর্জ ওয়াশিংটন বিমানবাহী রণতরী সম্পর্কেও বক্তৃতা দেবেন।
খবর বার্তা সংস্থা এএফপি’র।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত জাপানে অবস্থানকালে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও জাহাজ নির্মাণের বিষয়েও চুক্তি স্বাক্ষর করবেন।
তিনি কিছু সোনার প্রলেপযুক্ত গল্ফ বলও উপহার পেতে পারেন ।
এএফপি এই সফরের মূল বিষয়গুলো পর্যালোচনা করেছে।
-মার্কিন সেনাদের আবাসন-
টোকিও ওয়াশিংটনের নিকটতম আঞ্চলিক মিত্র। একটি নিরাপত্তা চুক্তির অধীনে জাপান আক্রমণের শিকার হলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেশটিকে রক্ষা করতে বাধ্য থাকবে। এই নিরাপত্তা চুক্তির আওতায় সেখানে মার্কিন সেনাদের মোতায়েন করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
কিন্তু কয়েক দশক পুরনো এই চুক্তিকে একটি বিনামূল্যের যাত্রা বলে উপহাস করেন ট্রাম্প।
তিনি চান, বর্তমানে জাপানে থাকা প্রায় ৬০ হাজার মার্কিন সামরিক কর্মীর আবাসনের জন্য টোকিও আরো বেশি অর্থ প্রদান করুক।
ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে বলেছিলেন, যদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আক্রমণ করা হয়, তাহলে জাপানকে ‘আমাদের কোনো সাহায্য করতে হবে না’ এবং ‘সনি টেলিভিশনে এটি দেখার’ স্বাধীনতা রয়েছে।
-সামরিক ব্যয়-
প্রতিবেশী রাষ্ট্র চীনের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকায়, দীর্ঘস্থায়ী শান্তিবাদী জাপান আরো শক্তিশালী সামরিক অবস্থান গ্রহণ করছে। নিকটতম জাপানি দ্বীপ থেকে স্পষ্ট দৃশ্যমান তাইওয়ানের ওপর তার আঞ্চলিক দাবি আরো দৃঢ় করছে বেইজিং।
জাপান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ‘কাউন্টার-স্ট্রাইক’ ক্ষমতা অর্জনের জন্য পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, এবং সামরিক ঘাঁটিতে দেশীয়ভাবে উন্নত, দূর-পাল্লার টাইপ ১২ ভূমি থেকে জাহাজে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের পরিকল্পনা করছে।
প্রধানমন্ত্রী তাকাইচি শুক্রবার বলেছেন, এই অর্থবছরে জাপানের প্রতিরক্ষা খাতে তার মোট দেশজ উৎপাদনের দুই শতাংশ ব্যয় করার লক্ষ্য অর্জন করা হবে, যা পরিকল্পনায় থাকা নির্ধারিত সময়ের চেয়ে দুই বছর আগে।
তিনি গত সপ্তাহে নির্বাচিত হয়েছেন।
কিন্তু মার্কিন কর্মকর্তারা চান যে জাপান আরো বেশি ব্যয় করুক, যা জুনে স্পেন ছাড়া বাকি ন্যাটো সদস্যদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জিডিপি’র পাঁচ শতাংশের সঙ্গে মিলে যেতে পারে।
-বাণিজ্য-
যুক্তরাষ্ট্রে জাপানের বেশিরভাগ আমদানি পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়, তবে প্রথমে এই শুল্ক ২৫ শতাংশ করার হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
সেপ্টেম্বরে জাপানের যুক্তরাষ্ট্রগামী গাড়ি রফতানিতে বছরের পর বছর থাকা মূল্যের ২৪ শতাংশ কমেছে, যা এশীয় দেশটির প্রায় আট শতাংশ কর্মসংস্থানের উৎস মোটরগাড়ি খাতের জন্য একটি ধাক্কা।
বুধবার সন্ধ্যায় ট্রাম্প গাড়ি নির্মানকারী প্রতিষ্ঠান টয়োটার চেয়ারম্যান ও অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে নৈশভোজে যোগ দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
হোয়াইট হাউসের জানিয়েছে, জুলাইয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৫৫০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের কথা রয়েছে জাপানের।
যদিও জাপান বলেছে, ট্রাম্প ‘সাইনিং বোনাস’ যাকে বলছেন, তার মাত্র এক থেকে দুই শতাংশ প্রকৃত বিনিয়োগ হবে এবং বাকিটা ঋণ ও ঋণের গ্যারান্টি দ্বারা আচ্ছাদিত থাকবে ।
ওয়াশিংটনও চায় যে জাপান রাশিয়ান জ্বালানি কেনা বন্ধ করুক, মার্কিন গ্যাস আমদানি করুক এবং মার্কিন প্রেসিডেন্টের ঘোষণা অনুযায়ী আলাস্কায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা পাইপলাইন প্রকল্পে বিনিয়োগ করুক।
-‘উত্তপ্ত’ পিকআপ ট্রাক -
তার সফরের আগে, ট্রাম্প জাপানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী তাকাইচির প্রশংসা করেন এবং নিহত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সঙ্গে তাদের উভয়েরই ঘনিষ্ঠতার কথা উল্লেখ করেন।
ট্রাম্প বলেন, ‘আমি তার সম্পর্কে দারুণ কিছু শুনেছি।’ তিনি ‘একজন অসাধারণ ব্যক্তি ছিলেন এবং তিনি তাকে অনেক পছন্দ করতেন।’
আবে ট্রাম্পকে একটি সোনালী রঙের গলফ বল উপহার দিয়েছিলেন, যা তিনি পরে হারিয়ে ফেলেছিলেন।
ট্রাম্প চান জাপান চাল, গাড়ি ও ফোর্ড এফ-১৫০ পিকআপ ট্রাকসহ আরো মার্কিন পণ্য আমদানি করুক।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, জাপান রাস্তা ও বাঁধ পরিদর্শনের জন্য ১০০টি ট্রাক কিনতে পারে এবং ট্রাম্পের সফরের সময় রাষ্ট্রীয় অতিথিশালার বাইরে কিছু প্রদর্শন করা হতে পারে।
প্রতিবেদনটির প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প বলেন, তাকাইচির ভালো রুচি আছে। এটি একটি ‘হট ট্রাক’।