বাসস
  ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ২২:১১

রাজবাড়ি ও উপাধি নিয়ে চাপের মুখে ব্রিটেনের প্রিন্স অ্যান্ড্রু

ঢাকা, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস): ব্রিটেনের প্রিন্স অ্যান্ড্রু আবারও তার সরকারি বাড়ি ও উপাধি নিয়ে চাপের মুখে পড়েছেন। জানা গেছে, রাজা তৃতীয় চার্লস তার ছোট ভাই অ্যান্ড্রুকে উইন্ডসরের ৩০ কক্ষের বিশাল রাজ প্রাসাদ (রয়্যাল লজ) খালি করে দেওয়া নিয়ে কথা বলেছেন।

রোববার লন্ডন থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ তথ্য নিশ্চিত করে। 

কুখ্যাত মার্কিন যৌন অপরাধী জেফরি এপেস্টাইনের এক শিকারের অভিযোগের পর প্রিন্স অ্যান্ড্রুকে নিয়ে নতুন করে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। কয়েকদিন ধরেই গুঞ্জন চলছে, রাজা চার্লস হয়তো তার ভাইকে এ রাজবাড়ি থেকে বের করে দিতে পারেন। 

পরিস্থিতি নিয়ে চলমান উত্তেজনার কারণে ব্রিটেনের একটি সংবাদ সংস্থা উইন্ডসর প্রাসাদের প্রবেশমুখে ক্যামেরা বসিয়ে রেখেছে। তারা ধারণা করছে যে, ৬৫ বছর বয়সী এই প্রিন্সের বিরুদ্ধে যেকোনো মুহূর্তে আরও অপমানজনক পদক্ষেপের ঘোষণা আসতে পারে। 

এদিকে, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কিছু সদস্য প্রিন্স অ্যান্ড্রুর ‘ডিউক অব ইয়র্ক’ পদবি বাতিলের দাবি তুলেছেন।

তবে অ্যান্ড্রু ক’দিন আগে ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি উপাধিটি আর ব্যবহার করবেন না, তবু এমপিরা চান এটি আইনগতভাবেই বাতিল হোক। 

হাউস অব কমন্সে রাজপরিবারের কোনো সদস্যের আচরণ নিয়ে বিতর্কের  ঘটনা হবে নজিরবিহীন। তবে এটি কখন ঘটবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে এটি রাজা চার্লস ও সরকারের ওপর চাপ আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ভুক্তভোগী ভার্জিনিয়া জিওফ্রের সদ্য প্রকাশিত স্মৃতিকথা প্রকাশের পর এই বিতর্কের সূত্রপাত হয়। বইটিতে তিনি দাবি করেছেন, ১৭ বছর বয়সে প্রিন্স অ্যান্ড্রুর সঙ্গে তার তিনবার যৌন সম্পর্ক হয়। 

অ্যান্ড্রু বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে ২০২২ সালে জিওফ্রে যুক্তরাষ্ট্রে অ্যান্ড্রুর বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের মামলা করলে প্রিন্স অ্যান্ড্রু তাকে বেশ কয়েক লাখ ডলার দিয়ে সেই মামলার নিষ্পত্তি করতে বাধ্য হন।

দুঃখজনকভাবে, জিওফ্রে চলতি বছরের এপ্রিলে ৪১ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন। এর আগে ২০১৯ সালে জেফরি এপস্টাইনও কারাগারে আত্মহত্যা করেছিলেন।

জিওফ্রের বই নিয়ে বিতর্কের মধ্যেই ‘দ্য টাইমস’ পত্রিকা আরেকটি বিস্ফোরক তথ্য ফাঁস করে। জানা যায়, প্রিন্স অ্যান্ড্রুকে গত দুই দশক ধরে রয়্যাল লজ প্রাসাদের জন্য কোনো ভাড়া দিতে হয়নি। ২০০৩ সালে ক্রাউন অ্যাস্টেটের সঙ্গে এক বিশেষ চুক্তির সুবাদে তিনি এ সুবিধা ভোগ করছিলেন। এই তথ্য প্রকাশের পর রাজা চার্লস ও অ্যান্ড্রুর মধ্যে বাড়িটি খালি করা নিয়ে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমগুলো।

দ্য সানডে টাইমস পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে, অ্যান্ড্রু বর্তমানে পার্লামেন্ট এবং বাকিংহাম প্যালেসের দ্বিমুখী চাপে পড়েছেন। তাকে এক প্রকার উইন্ডসর থেকে নির্বাসিত করার প্রক্রিয়া চলছে। পত্রিকাটি আরও জানায়, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং থাকার ভালো বিকল্প ব্যববস্থা করা হলে অ্যান্ড্রু হয়তো বাড়িটি ছাড়তে রাজি হতে পারেন। 

ডেইলি মেইল পত্রিকা জানিয়েছে, ব্রিটিশ সিংহাসনের উত্তরাধিকারী প্রিন্স উইলিয়াম ও তার পরিবার রয়্যাল লজের কাছাকাছি একটি নতুন বাড়িতে উঠতে চাইছেন। তাই উইলিয়াম চাইছেন, তাদের আসার আগেই অ্যান্ড্রু ওই এলাকা ছেড়ে চলে যান।

এদিকে লিবারেল ডেমোক্র্যাট পার্টি পার্লামেন্টে এ বিষয়ে আলোচনার জন্য জোরালো দাবি তুলেছে। দলের একজন মুখপাত্র এএফপিকে বলেন, প্রিন্স অ্যান্ড্রুর রয়্যাল লজে থাকা থেকে তার ‘ডিউক’ উপাধি পর্যন্ত, সবকিছু খতিয়ে দেখতে আমরা পার্লামেন্টে আলোচনা করতে চাই।

তিনি আরও বলেন, এই বিষয়ে রাজাই উদ্যোগী হবেন। তবে প্রয়োজনে পার্লামেন্ট ও রাজপ্রাসাদ যেন মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, আমরা সেই পথেই এগোতে চাই।