শিরোনাম

ঢাকা, ২৫ অক্টোবর, ২০২৫ (বাসস) : ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে শনিবার প্রথমবারের মত সাইবার অপরাধ দমনে চুক্তি স্বাক্ষর করতে যাচ্ছে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলো। তবে, কিছু বড় প্রযুক্তি কোম্পানি এবং মানবাধিকার সংস্থা রাষ্ট্রীয় নজরদারি বাড়ার আশঙ্কায় এর বিরোধিতা করছে।
নতুন এই বৈশ্বিক আইনটি ডিজিটাল অপরাধের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা জোরদারের লক্ষ্যে করা হচ্ছে। এর মধ্যে শিশু পর্নোগ্রাফি, আন্তর্জাতিক সাইবার প্রতারণা ও অর্থপাচারের মত অপরাধ মোকাবিলা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
হ্যানয় থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি লুয়ং কুয়ং চুক্তি সইকে ‘ঐতিহাসিক মাইলফলক’ বলে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘এটি প্রমাণ করে যে আমরা সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং শান্তি, ন্যায় ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যা বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য দরকার।’
সাইবার অপরাধ দমনে জাতিসংঘ সংক্রান্ত চুক্তিটি ২০১৭ সালে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার কূটনীতিকরা প্রস্তাব করেন। দীর্ঘ আলোচনার পর গত বছর সদস্য দেশগুলো সর্বসম্মতভাবে এটি অনুমোদন করে।
কিন্তু সমালোচকরা বলছেন, চুক্তিটির ভাষা এতটা বিস্তৃত যে রাষ্ট্রক্ষমতায় এর অপব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। এমনকি সরকার চাইলে দেশের বাইরে অবস্থানরত সমালোচকদের দমনেও এটি ব্যবহার করতে পারবে।
টেক গ্লোবাল ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা সাবাহানাজ রশিদ দিয়া বলেন, ‘চুক্তি নিয়ে আলোচনার সময় অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছেন, এটি কোম্পানিগুলোকে তথ্য শেয়ারে বাধ্য করবে।’
তিনি এএফপি’র কাছে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, চুক্তির মাধ্যমে বিতর্কিত কিছু প্রথাকে আনুষ্ঠানিক বৈধতা দেওয়া হচ্ছে, যা সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এবং স্বৈরশাসকের পক্ষে ব্যবহার করা হতে পারে।
৪০টি দেশ আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিলে চুক্তিটি কার্যকর হবে। হ্যানয়ে চুক্তি সই অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও উপস্থিত থাকবেন।
ভিয়েতনাম সরকার জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই ৬০টি দেশ স্বাক্ষরের জন্য নিবন্ধন করেছে। তবে সেসব দেশের নাম প্রকাশ করা হয়নি। তালিকাটি রাশিয়া, চীন ও তাদের মিত্র দেশগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সাবহানাজ রশিদ দিয়া বলেন, সাইবার অপরাধ একটি বৈশ্বিক সমস্যা। প্রতিটি দেশ এ নিয়ে নাজেহাল।
জানা যায়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অনলাইন প্রতারণা সম্প্রতি ব্যাপক হারে বেড়েছে। হাজার হাজার প্রতারক এ কাজে জড়িত। প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে লাখো ভুক্তভোগী তাদের কোটি কোটি ডলার হারাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক দেশগুলোর অনেক সময় কিছু তথ্যের অ্যাক্সেস দরকার হয়, যা বর্তমান ব্যবস্থায় অনেকক্ষেত্রে সম্ভব হয় না।
মানবাধিকার সংরক্ষণের কিছু বিধান থাকায় গণতান্ত্রিক দেশগুলো জাতিসংঘের এই চুক্তিটিকে ‘সমঝোতা দলিল’ হিসেবে দেখছে। তবে মানবাধিকার সংস্থাগুলো বিধানগুলোকে ‘দুর্বল’ বলে সমালোচনা করেছে।
এদিকে প্রযুক্তি খাতের বড় কোম্পানিগুলোও চুক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন।
মেটা, ডেল ও ভারতের ইনফোসিসসহ ১৬০টিরও বেশি কোম্পানির প্রতিনিধিত্ব করা ‘সাইবার সিকিউরিটি টেক অ্যাকর্ড’-এর প্রতিনিধি দল চুক্তি আলোচনায় অংশ নিয়েছিল। তবে হ্যানয়ে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন না বলে জানান দলের প্রধান নিক অ্যাশটন-হার্ট।
ওই কোম্পানিগুলো আগেই সতর্ক করে জানিয়েছে, চুক্তিটি সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ক গবেষকদের অপরাধী হিসেবে দাঁড় করাতে পারবে এবং রাষ্ট্রগুলোকে অনেক ধরনের অপরাধমূলক কাজে জন্য সহযোগিতার সুযোগ করে দেবে।
তাদের দাবি, কর্তৃপক্ষের অতিরিক্ত ক্ষমতা দৈনিক কোটি কোটি মানুষের ওপর নির্ভরশীল কর্পোরেট আইটি সিস্টেমের জন্য বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
বিপরীতে বিদ্যমান ‘বুদাপেস্ট কনভেনশন অন সাইবারক্রাইম’ নামক আন্তর্জাতিক চুক্তিটি সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় মানবাধিকার সম্মতভাবে ব্যবহারের নির্দেশনা দেয়।
চুক্তি স্বাক্ষরের স্থান নিয়েও সমালোচনা চলছে। কারণ, খোদ ভিয়েতনামেই বিরোধী মত দমনের রেকর্ড আছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ডেবোরাহ ব্রাউন বলেন, দেশটিতে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সমালোচনা করলেই স্থানীয় অনলাইন প্রকাশনা বন্ধ করতে আইন ব্যবহার করে ভিয়েতনাম সরকার।
তিনি আরও বলেন, রাশিয়া এই চুক্তির পেছনের প্রধান শক্তি। স্বাক্ষরিত হলে তারা খুশি হবে। তবে বিশ্বব্যাপী সাইবারক্রাইমের বড় অংশই রাশিয়ার থেকে করা হয়। কিন্তু নিজেদের সীমান্তের মধ্যে সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় তাদের তো কোন চুক্তির প্রয়োজন পড়েনি।
এই চুক্তি দিয়ে রাশিয়ার রাজনৈতিক ইচ্ছার অভাব পূরণ হবে না বলেও মন্তব্য করেন ডেবোরাহ ব্রাউন।