বাসস
  ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৫৬

ট্রাম্পের জীবাশ্ম জ্বালানি নীতির বিরুদ্ধে তরুণদের মামলা

ঢাকা, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : জীবন, স্বাধীনতা ও একটি স্থিতিশীল জলবায়ুর অধিকার- যুক্তরাষ্ট্রের তরুণদের কাছে আজ এই প্রশ্নগুলোই এখন বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।

একদল তরুণ আমেরিকান মনে করে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জীবাশ্ম জ্বালানির প্রতি আগ্রাসী নীতি এবং ফেডারেল জলবায়ু বিজ্ঞানকে ধ্বংস করার মাধ্যমে তাদের জন্মগত অধিকার ক্ষুণ্ন করছেন। 

মঙ্গলবার এই অভিযোগ নিয়ে মন্টানার মিসুলার একটি গ্রামীণ আদালতে দুই পক্ষ মুখোমুখি হতে যাচ্ছে। 

‘লাইটহাইসার বনাম ট্রাম্প’ মামলা এটা স্পষ্ট করেছে যে, বিশ্বজুড়ে তরুণরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আইনি পদক্ষেপ নিচ্ছে। রাজনৈতিক নিষ্ক্রিয়তা বা সরাসরি বাধার মুখে আদালতই তাদের হাতিয়ার।

মামলার প্রধান বাদী ইভা লাইটহাইসার সম্প্রতি ওয়াশিংটনে এএফপিকে বলেন, ‘আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবলে আমি খুব ভয় পাই।’ 

সম্প্রতি ইভা ও মামলার অন্যান্য বাদীরা অলাভজনক সংস্থা ‘আওয়ার চিলড্রেন’স ট্রাস্ট’-এর প্রতিনিধি হয়ে আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে দেখা করে তাদের উদ্দেশ্য বোঝানোর চেষ্টা করেছেন।

মন্টানার লিভিংস্টনের ১৯ বছর বয়সী ওই তরুণী জানান, ধোঁয়ায় ঢাকা আকাশ, বারংবার বন্যা ও জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে তার পরিবারকে ঘরবাড়ি ছাড়া হতে হয়, যা ‘সদ্য প্রাপ্তবয়স্ক জীবনে প্রবেশ করা একজন মানুষের জন্য মানিয়ে নেওয়া বেশ কঠিন।

ইভার সঙ্গে রয়েছেন আরও ২১ জন তরুণ বা অপ্রাপ্তবয়স্ক বাদী, যারা দুই দিনের শুনানিতে ট্রাম্প প্রশাসনের পদক্ষেপের কারণে তাদের স্বাস্থ্য ও অন্যান্য ক্ষতির বিষয়ে আদালতে সাক্ষ্য দেবেন।

মামলার মূল বিষয়বস্তু হলো তিনটি নির্বাহী আদেশ, যা জীবাশ্ম জ্বালানির উত্তোলন বাড়িয়েছে, বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারকে সীমিত করেছে ও জরুরি ক্ষমতা ব্যবহার করে তেল ও গ্যাস উত্তোলনের কাজকে দ্রুত করেছে।
কয়লাকে ‘খনিজ’ হিসেবে ঘোষণা করে উত্তোলনের অগ্রাধিকার দেওয়া।

বাদীপক্ষ আরও অভিযোগ করেছে যে ফেডারেল গবেষণা থেকে জলবায়ু বিজ্ঞানকে বাদ দিয়ে ‘বৈশ্বিক উষ্ণতার ঝুঁকিগুলোকে’ গোপন করা হচ্ছে।

তাদের আইনজীবীরা বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ সাক্ষী ডেকেছেন, যাদের মধ্যে আছেন জলবায়ু বিজ্ঞানী, একজন শিশু বিশেষজ্ঞ এবং হোয়াইট হাউসের সাবেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জন পোডেস্টা। 

তারা প্রত্যেকেই মামলার বিষয়বস্তু সম্পর্কিত নির্বাহী আদেশগুলোর আইনগত বৈধতা নিয়ে মতামত দেবেন।

‘আওয়ার চিলড্রেন’স ট্রাস্ট’-এর একজন আইনজীবী আন্দ্রেয়া রজার্স এএফপিকে বলেন, ‘এই প্রথমবার বাদীপক্ষ সরাসরি আদালতে গিয়ে ফেডারেল সরকারের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে পারছেন এবং তাদেরও জেরা করা হচ্ছে যে কীভাবে সরকার জলবায়ু সংকট তৈরি করছে এবং তরুণদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে।’

বাদীপক্ষ একটি প্রাথমিক নিষেধাজ্ঞা চাইছে, যা পূর্ণাঙ্গ বিচারের পথ খুলে দিতে পারে। অন্যদিকে ফেডারেল সরকারের ১৯টি রক্ষণশীল রাজ্য ও গুয়াম অঞ্চল মামলাটি খারিজ করার জন্য আবেদন করেছে।

তবে অধিকাংশ পর্যবেক্ষকই তরুণদের জয়ের সম্ভাবনা কম দেখছেন। 

এদিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামার আমলে নিয়োগ পাওয়া পরিবেশবান্ধব রায়ের জন্য পরিচিত বিচারক ডানা ক্রিস্টেনসেন এই মামলার সভাপতিত্ব করছেন।

তরুণরা যদি জিতেও যায়, মামলাটি প্রায় নিশ্চিতভাবে রক্ষণশীল সংখ্যাগরিষ্ঠ সুপ্রিম কোর্টে যাবে।

কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ আইন অধ্যাপক মাইকেল জেরার্ড এএফপিকে বলেন, ‘ফেডারেল পর্যায়ে পরিবেশের জন্য সাংবিধানিক অধিকার আছে, এমন কোনো শক্তিশালী বিচারিক নজির আমাদের নেই।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা এটিকে মৌলিক অধিকার তুলে ধরার চেষ্টা করছে, কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এটি আদালতের নতুন রায় ছাড়া কার্যকর হবে না।’

জেরার্ড বলেন, ‘এই সুপ্রিম কোর্ট অধিকার দেওয়ার চেয়ে অধিকার কেড়ে নেওয়ার বিষয়ে বেশি আগ্রহী, যদি না আপনি একজন বন্দুকের মালিক হন।’

তবে, সাম্প্রতিক রাজ্য পর্যায়ের সাফল্যের কারণে আইনি দলটি আশাবাদী। কারণ, ২০২৩ সালে মন্টানার একজন বিচারক তরুণ বাদীদের পক্ষে রায় দেন। তারা যুক্তি দিয়েছিলেন যে তেল ও গ্যাস উত্তোলনের অনুমতি দেওয়ার সময় জলবায়ু প্রভাব উপেক্ষা করা হয়েছিল, যা তাদের একটি সুস্থ পরিবেশের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করে। 

এর এক বছর পর, হাওয়াইয়ের তরুণ সমাজসেবীরা একটি সমঝোতায় পৌঁছায়, যার ফলে তাদের রাজ্য পরিবহনখাতে কার্বন নিঃসরণ কমাতে বাধ্য হয়।

তবে ফেডারেল পর্যায়ে পরিস্থিতি হতাশাজনক। সবচেয়ে আলোচিত মামলাটি ছিল ২০১৫ সালে দায়ের করা ‘জুলিয়ানা বনাম ইউনাইটেড স্টেটস’, যা এই বছরের শুরুতে সুপ্রিম কোর্ট আপিল শুনতে অস্বীকৃতি জানালে শেষ পর্যন্ত খারিজ হয়ে যায়।

নতুন মামলায় বলা হয়েছে, সরকার মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়ে ন্যায়সংগত বিচার প্রক্রিয়া লঙ্ঘন করছে, ক্লিন এয়ার অ্যাক্টের মতো আইনের অধীনে নির্বাহী ক্ষমতা অতিক্রম করছে এবং ১৪তম সংশোধনী অনুযায়ী জলবায়ু ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়ে তার দায়িত্ব লঙ্ঘন করছে।

জেরার্ড বলেন, দেখার বিষয় হলো— সরকার বাদীর আনা বাস্তব দাবিগুলো চ্যালেঞ্জ করবে, না-কি শুধু আইনি যুক্তির ওপর মনোযোগ দেবে। ধারণা করা হচ্ছে, সরকার যুক্তি দেবে যে এসব নীতিগত প্রশ্ন নির্বাচিত প্রতিনিধিদের জন্য, আদালতের জন্য নয়।

কিন্তু রজার্স পাল্টা যুক্তি দিয়েছেন যে সরকার নিজেই তার সীমা অতিক্রম করেছে। 

তিনি বলেন, ‘নির্বাহী বিভাগ তরুণদের সাংবিধানিক অধিকার লঙ্ঘন করছে কিনা, এমন প্রশ্ন আদালত যুগ যুগ ধরে সমাধান করে আসছে।’