বাসস
  ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:০১

বিদেশি শান্তি পরিকল্পনা থেকে সরে দাঁড়াল সুদান সরকার

ঢাকা, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ (বাসস) : চার প্রভাবশালী বিদেশি শক্তির প্রস্তাবিত নতুন শান্তি পরিকল্পনার বিরুদ্ধে শনিবার আপত্তি জানিয়েছে সেনাবাহিনী সমর্থিত সুদান সরকার। 

খার্তুম থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি একথা জানিয়েছে।

সুদান সরকার জানিয়েছে যে যুদ্ধ পরবর্তী রাজনৈতিক রূপান্তর থেকে তাদের বাদ দেওয়ার যে কোনো প্রস্তাব তারা প্রত্যাখ্যান করে।

শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও মিসর যৌথভাবে সুদানে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে মানবিক অস্ত্রবিরতি, এরপর স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং বেসামরিক শাসনে উত্তরণের প্রস্তাব দেয়। 

তবে তারা ইঙ্গিত দেয়, কোনো যোদ্ধা পক্ষই এই রূপান্তরের অংশ হতে পারবে না।

খার্তুমের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, তারা যুদ্ধ বন্ধের প্রচেষ্টা স্বাগত জানায়। তবে এমন হস্তক্ষেপ মেনে নেবে না, যা সুদানি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও বৈধ প্রতিষ্ঠানকে সম্মান করে না এবং যা দেশের জনগণ ও ভূমি রক্ষার অধিকারের বিপরীতে যায়।

বর্তমানে সুদানের প্রতিষ্ঠানগুলো সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে, যারা এপ্রিল ২০২৩ থেকে আধাসামরিক র‌্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত।

গত মে মাসে সেনাবাহিনী একটি নতুন বেসামরিক নেতৃত্বাধীন সরকার গঠন করে, যার ঘোষিত লক্ষ্য ছিল রূপান্তরের কাজ সম্পন্ন করা এবং আরএসএফ থেকে সমগ্র সুদানকে মুক্ত করা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, সুদানকে কীভাবে শাসন করা হবে- তা জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে কেবল সুদানি জনগণই নির্ধারণ করবে আর রূপান্তর সরকার সেই প্রক্রিয়া নেতৃত্ব দেবে।

চার বিদেশি শক্তির প্রস্তাবে যা সাধারণত ‘কোয়াড’ নামে পরিচিত, তিন মাসের মানবিক অস্ত্রবিরতি, এরপর স্থায়ী যুদ্ধবিরতি এবং নয় মাসব্যাপী বেসামরিক নেতৃত্বাধীন সরকারের দিকে রূপান্তরের কথা বলা হয়েছিল।

কোয়াডের বিবৃতিতে বলা হয়, সুদানের ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্বচ্ছ রূপান্তর প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সুদানি জনগণের দ্বারা নির্ধারিত হবে, যা কোনো যোদ্ধা পক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে না।

কিন্তু সুদান সরকার পাল্টা জবাবে স্পষ্ট করে জানায়, তারা বিদেশি ভাড়াটে সন্ত্রাসী নিয়োগ করে সুদানি পরিচয় মুছে দেওয়ার চেষ্টা করা এক বর্ণবাদী সন্ত্রাসী মিলিশিয়ার (আরএসএফ) সঙ্গে নিজেদের সমতুল্য করার যেকোনো প্রচেষ্টা প্রত্যাখ্যান করে।

উল্লেখ্য যে আরএসএফ’র বিরুদ্ধে আমিরাতের অর্থায়নে বিদেশি যোদ্ধাদের সহায়তা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। তবে আবুধাবি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

একই দিনে কোয়াড জানায় যে মুসলিম ব্রাদারহুড সংশ্লিষ্ট সহিংসগোষ্ঠীগুলোকেও এই রূপান্তরে কোনো ভূমিকা দেওয়া হবে।

শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র সুদানের অর্থমন্ত্রী গেব্রেইল ইব্রাহিমের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তিনি দারফুরে সেনাবাহিনীর পক্ষে লড়াই করা এক সশস্ত্র গোষ্ঠীর নেতা। 

একই সঙ্গে সেনা-সমর্থিত ইসলামপন্থী মিলিশিয়া ‘বারা ইবনে মালিক ব্রিগেড’-এর বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

ইব্রাহিমের নেতৃত্বাধীন ন্যায় ও সমতা আন্দোলন (জেইএম) শনিবার নিষেধাজ্ঞাকে বাস্তব মূল্য বিবর্জিত, অন্যায় ও আইনি ভিত্তি বা যৌক্তিকতা বিহীন পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করে।

সুদানে চলমান সংঘাতে ইতিমধ্যে হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, লক্ষ লক্ষ লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং জাতিসংঘের মতে এটি বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকটে পরিণত হয়েছে ।

বারবার আন্তর্জাতিকভাবে যুদ্ধবিরতির চেষ্টা করা হলেও উভয় পক্ষই সমঝোতার অনীহা দেখিয়েছে। 

বর্তমানে সেনাবাহিনী সুদানের পূর্ব, উত্তর ও মধ্যাঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে আর আরএসএফ দক্ষিণের কিছু অংশ ও প্রায় পুরো পশ্চিম দারফুর অঞ্চল নিজেদের দখলে রেখেছে। সেখানে আরএসএফ একটি সরকার ঘোষণার পর দেশটিতে বিভক্তির আশঙ্কা তৈরি করেছে।