বাসস
  ৩১ জুলাই ২০২৫, ২২:৪৬

রাশিয়ায় ‘সরকার পরিবর্তনের’ ডাক জেলেনস্কির

ঢাকা, ৩১ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বৃহস্পতিবার তার মিত্রদের প্রতি রাশিয়ায় ‘সরকার পরিবর্তনের’ লক্ষ্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। এর আগে রুশ ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কিয়েভে ৬ বছর বয়সী এক শিশুসহ ১১ জন নিহত হয়।

কিয়েভ থেকে এএফপি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাতে জানায়, রাতভর চালানো ওই হামলায় কিয়েভের পশ্চিমাঞ্চলে একটি নয়তলা আবাসিক ভবনের অংশ ধসে পড়ে এবং শহরজুড়ে শতাধিক মানুষ আহত হয়।

এদিকে রাশিয়ার সেনাবাহিনী জানিয়েছে তারা পূর্ব ইউক্রেনের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ পাহাড়ি শহর চাসিভ ইয়ার দখল করেছে, যেখানে গত কয়েক মাস ধরে তীব্র যুদ্ধ চলছে।

মস্কো সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইউক্রেনে প্রাণঘাতী আকাশ হামলা আরও বাড়িয়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সত্ত্বেও প্রায় সাড়ে তিন বছরের এই আগ্রাসন থামানোর কোনো ইঙ্গিত দিচ্ছে না।

শীতল যুদ্ধকালীন হেলসিংকি চুক্তির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক সম্মেলনে ভার্চুয়াল ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন রাশিয়াকে যুদ্ধ থামাতে ‘চাপ প্রয়োগ করা’ সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু যদি বিশ্ব রাশিয়ার শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্য না নেয়, তবে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরও মস্কো তার প্রতিবেশী দেশগুলোকে অস্থির করতে থাকবে।’

ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানায়, বুধবার গভীর রাত থেকে বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত রাশিয়া ইউক্রেনের দিকে ৩০০টিরও বেশি ড্রোন এবং ৮টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, যার মূল লক্ষ্য ছিল কিয়েভ।

একটি ক্ষেপণাস্ত্র কিয়েভের পশ্চিমাঞ্চলে একটি নয়তলা আবাসিক ভবনের এক পাশ ছিঁড়ে ফেলে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

এএফপির সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে দেখেন, উদ্ধারকর্মীরা ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন ধ্বংসস্তূপের মধ্যে বাসিন্দাদের ছড়িয়ে থাকা জিনিসপত্রের মাঝে খুঁজে চলেছে।

২৮ বছর বয়সী কিয়েভ বাসিন্দা ভালেন্তিনা চেস্তোপাল বলেন, ‘এটা এক ধাক্কা। আমি এখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। খুবই ভয়ের অভিজ্ঞতা।’

সলোমিয়ানস্কি জেলার বাসিন্দা টিমোফি বলেন, ‘একটা বিকট শব্দে ঘুম ভাঙে, মনে হচ্ছিল সব কিছু আমার ওপর পড়ে যাচ্ছে। এটা ছিল একটা দুঃস্বপ্নের মতো।’ তার ফ্ল্যাট পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।

নিহতদের মধ্যে ছিল একটি ছয় বছর বয়সী শিশু, যাকে হাসপাতালে নেয়ার পথে অ্যাম্বুলেন্সেই মৃত্যু হয়, জানিয়েছেন শহরের সামরিক প্রশাসনের প্রধান তিমুর তকাচেঙ্কো।

রুশ সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা একযোগে ড্রোন ও উচ্চ-নির্ভুল অস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনের সামরিক বিমানঘাঁটি, গোলাবারুদ গুদাম এবং ড্রোন উৎপাদন কেন্দ্রগুলোতে হামলা চালিয়েছে।

এই হামলা আসে এমন এক সময়, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়াকে ১০ দিনের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন যুদ্ধ থামাতে, না হলে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

রাশিয়া বৃহস্পতিবার জানায়, তারা ডোনেৎস্ক অঞ্চলের পূর্বাঞ্চলে ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কেন্দ্র চাসিভ ইয়ার শহরটি দখল করেছে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভাষ্য, শহরটি ‘রুশ বাহিনীর দ্বারা মুক্ত করা হয়েছে’, যদিও ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর মুখপাত্র একে "মিথ্যা দাবি" বলে প্রত্যাখ্যান করেন।

ইউক্রেনীয় সামরিক বিশ্লেষক ওলেক্সান্দ্র কোভালেনকো বলেন, রুশ বাহিনী চাসিভ ইয়ারের ‘উত্তর ও পূর্ব অংশ পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে’ নিয়েছে, যেখানে যুদ্ধ সবচেয়ে কঠিন ছিল।

তিনি আরও জানান, শহরের পশ্চিমাংশে এখনো লড়াই চলছে এবং পরিস্থিতি ‘অত্যন্ত কঠিন’। শহরটি গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে নগরভিত্তিক যুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে, যা এই যুদ্ধে একটি রেকর্ড।

চাসিভ ইয়ার দখল করতে পারা রাশিয়ার জন্য বড় ধরনের সামরিক সাফল্য হবে, কারণ তারা কয়েক মাস ধরে ছোট ছোট এলাকাভিত্তিক অগ্রগতি করে আসছে।

যুদ্ধ শুরুর আগে প্রায় ১২,০০০ জনসংখ্যার শহরটি এখন প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। এর পতনের পর রুশ বাহিনী পূর্ব ডোনেৎস্কের বাকি নাগরিক ঘাঁটিগুলোর দিকে এগিয়ে যেতে পারবে।

এই শহরগুলোর মধ্যে রয়েছে ক্রামাতোরস্ক ও স্লোভিয়ানস্ক — ইউক্রেনীয় বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ লজিস্টিক ঘাঁটি, যেখানে এখনো বহু বেসামরিক মানুষ রয়ে গেছেন।

ক্রেমলিন ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে দোনেৎস্ক অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে দাবি করার পর থেকে এই অঞ্চল দখলের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে।

রাশিয়া, যারা দাবি করে তারা বেসামরিক মানুষকে লক্ষ্য করে না, এখনো কিয়েভে হামলা বা জেলেনস্কির ‘সরকার পরিবর্তনের’ আহ্বান নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইতিপূর্বেই জেলেনস্কিকে অপসারণের আহ্বান জানিয়েছেন এবং তার বৈধতা নিয়ে বারবার প্রশ্ন তুলেছেন।

বৃহস্পতিবারের হামলা এমন সময় ঘটল, যখন ইউক্রেনের সংসদ একটি বিতর্কিত আইনের সংশোধনীতে ভোট দেয়, যা দুর্নীতিবিরোধী দুই সংস্থার ক্ষমতা খর্ব করেছিল।

জেলেনস্কি বৃহস্পতিবার ভোটের পরপরই নতুন আইনটিতে স্বাক্ষর করেন, যা আগের অবস্থান থেকে তার পিছু হটা হিসেবে দেখা হচ্ছে। আগের আইনটি ছিল জনগণের ব্যাপক ক্ষোভের কারণ।

প্রাথমিক আইনে জাতীয় দুর্নীতিবিরোধী ব্যুরো ও বিশেষ দুর্নীতিবিরোধী প্রসিকিউটরের কার্যালয়কে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেলের অধীনে নিয়ে আসা হয়েছিল।

সমালোচকরা বলেছিলেন, এতে জেলেনস্কি উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতির মামলায় প্রভাব খাটাতে পারতেন, আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্ক করেছিল যে, এই পদক্ষেপ তাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সংস্কার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে পারে।

অবশেষে ৩৩১ জন সংসদ সদস্য নতুন সংশোধনী আইনটিকে অনুমোদন দেন, যেখানে প্রয়োজন ছিল ২২৬ জনের ভোট।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন নতুন আইনটিকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি গুরুত্বপূর্ণ রক্ষাকবচ হিসেবে স্বাগত জানিয়েছে।