শিরোনাম
ঢাকা, ২৭ জুলাই, ২০২৫ (বাসস) : সুদানের র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-নেতৃত্বাধীন একটি জোট শনিবার এক বেসামরিক প্রধানমন্ত্রী ও একটি প্রেসিডেন্ট কাউন্সিল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে, যা সেনা-সমর্থিত সরকারের প্রতি প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ এবং যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে আরও বিভক্তির দিকে ঠেলে দেওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে।
পোর্ট সুদান থেকে এএফপি জানায়, সুদান দক্ষিণ দারফুরের আরএসএফ-নিয়ন্ত্রিত নায়ালা শহর থেকে সম্প্রচারিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেওয়া হয়, যা আরএসএফ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে চলমান দুই বছরেরও বেশি সময়ের সংঘাতের মধ্যে এসেছে।
আরএসএফ মোহাম্মদ হাসান আল-তায়িশিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে, যিনি ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থান পর্যন্ত সুদানের অন্তর্বর্তী সার্বভৌম পরিষদের সদস্য ছিলেন। নতুন এই সরকারকে তারা বলছে ‘শান্তি ও ঐক্যের সরকার’।
সুদান এখন কার্যত বিভক্ত। সেনাবাহিনী উত্তর, পূর্ব ও কেন্দ্রীয় অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে এবং সম্প্রতি রাজধানী খার্তুম পুনর্দখল করেছে। অপরদিকে আরএসএফ দারফুরের বেশিরভাগ অংশ ও কর্ডোফানের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণে রেখেছে, যেখানে সাম্প্রতিক হামলায় শত শত মানুষ নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য।
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সেনা-সমর্থিত সরকার মে মাসে গঠিত হয়, যার প্রধান সাবেক জাতিসংঘ কর্মকর্তা কামিল ইদরিস। তবে এখনো তিনটি মন্ত্রিত্ব খালি রয়েছে।
জাতিসংঘ কর্মকর্তারা সতর্ক করে বলছেন, প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট কাউন্সিলসহ আরএসএফ-এর সমান্তরাল সরকার গঠন সুদানের বিভক্তিকে আরও গভীর করতে পারে এবং ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে চলমান সংঘাতের কূটনৈতিক সমাধান জটিল করে তুলবে।
একজন আরএসএফ সদস্য এএফপিকে জানান, নাম প্রকাশ না করার শর্তে, আল-তায়িশি শিগগিরই একটি পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রিসভা গঠনের কাজ শুরু করবেন।
শনিবার, আরএসএফ-নেতৃত্বাধীন জোট একটি ১৫ সদস্যের প্রেসিডেন্ট কাউন্সিলও প্রকাশ করে। এতে আরএসএফ কমান্ডার মোহাম্মদ হামদান ডাগালো সভাপতি এবং বিদ্রোহী নেতা আবদুল আজিজ আল-হিলু—যিনি দক্ষিণ সুদানের কিছু অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করেন, সহ-সভাপতি হিসেবে রয়েছেন।
এই কাউন্সিলে রাজনৈতিক নেতা, সাবেক কর্মকর্তা ও নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত আঞ্চলিক গভর্নররাও আছেন।
নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছেন আল-হাদি ইদরিস, যিনি দারফুর অঞ্চলের গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। এখন এই অঞ্চলে দুজন প্রতিদ্বন্দ্বী গভর্নর রয়েছেন, একজন আরএসএফ-এর দ্বারা নিয়োগপ্রাপ্ত এবং অন্যজন সেনাবাহিনীর ঘনিষ্ঠ মিনি আরকো মিনাওয়ি।
মিনাওয়ি আরএসএফ-এর এই পদক্ষেপকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, এটি ‘তাদের মিত্রদের সঙ্গে সংঘটিত অপরাধ ও লঙ্ঘনের দায় শেয়ার করার মতো মনে হচ্ছে।’
শনিবারের এই নিয়োগগুলো ফেব্রুয়ারিতে নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত আলোচনা চলাকালীন আরএসএফ এবং তাদের মিত্র সশস্ত্র ও বেসামরিক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে স্বাক্ষরিত রাজনৈতিক ঘোষণাপত্রের ধারাবাহিকতা।
আরএসএফ-এর ঘোষণার পর সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান ও আরএসএফ প্রধান ডাগালো-র মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব থেকে। এক সময়ের মিত্র এই দুই ব্যক্তি ২০১৯ সালে ওমর আল-বাশিরকে উৎখাতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
এর দুই বছর পর, ২০২১ সালে, তারা আবার একত্র হয়ে একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে সুদানের বেসামরিক শাসনের রূপান্তর প্রক্রিয়া বানচাল করেন।
জাতিসংঘ একাধিকবার বলেছে, সুদান এখন বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকটে পড়েছে।
দশ-হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন, লাখ লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন এবং দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা, পানি সরবরাহসহ মৌলিক সেবাগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে।