শিরোনাম
ঢাকা, ২৫ জুলাই, ২০২৫ (বাসস): থাইল্যান্ডের সঙ্গে কাম্বোডিয়ার এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সীমান্ত সংঘর্ষে থাইল্যান্ডের এক লাখেরও বেশি বেসামরিক মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশে সরে গেছে।
শুক্রবার ব্যাংকক জানিয়েছে, নিহতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় সংঘর্ষ বন্ধে আন্তর্জাতিক মহল জোরালো আহ্বান জানিয়েছে।
থাইল্যান্ডের সুরিন থেকে এএফপি এই তথ্য জানিয়েছে।
দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ বৃহস্পতিবার হঠাৎ তীব্র সংঘর্ষে রূপ নেয়। এতে যুদ্ধবিমান, কামান, ট্যাংক ও স্থলসেনা ব্যবহার করে দুই পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়েছে।
পরিস্থিতি গুরুতর হওয়ায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ আজ শুক্রবার এ সংকট নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসতে যাচ্ছে।
থাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সীমান্তবর্তী চারটি প্রদেশ থেকে এক লাখেরও বেশি বেসামরিক মানুষকে সরিয়ে প্রায় ৩শ’টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ১৪ জন নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ১৩ জন বেসামরিক নাগরিক এবং এক সেনাসদস্য রয়েছে।
সীমান্ত থেকে ২০ কিলোমিটার দূরের কাম্বোডিয়ার সামরোং শহরে অবস্থানরত এএফপি’র সাংবাদিকরা শুক্রবার সকালেও দূর থেকে কামানের গোলার শব্দ শুনেছেন।
স্থানীয় সময় সকাল ৬টার দিকে গোলাগুলি শুরু হলে অনেক পরিবার শিশু ও মালপত্র নিয়ে তড়িঘড়ি করে গাড়িতে উঠে পালিয়ে যেতে দেখা গেছে।
প্রো বাক নামে ৪১ বছর বয়সী একজন ব্যক্তি এএফপিকে বলেন, ‘আমি সীমান্তের খুব কাছাকাছি থাকি। ভোরে আবার গোলাগুলি শুরু হওয়ায় আমরা ভীষণ ভয়ে আছি। এখন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মন্দিরে আশ্রয়ের খোঁজে যাচ্ছি। কবে বাড়ি ফিরতে পারবো, জানি না।’
এএফপি’র সাংবাদিকরা জানান, তারা সেনাদের রকেট লাঞ্চার নিয়ে সীমান্তের দিকে দ্রুত ছুটে যেতে দেখেছেন।
লাখ লাখ বিদেশি পর্যটকদের জনপ্রিয় গন্তব্য এই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সীমান্ত বিরোধ হঠাৎ করে ভয়াবহ সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। প্রায় ৮শ’ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সীমান্ত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধ চলছে।
দীর্ঘ এই সীমান্তের বেশ কিছু এলাকার মালিকানা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। ২০০৮ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে এসব এলাকায় কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়। ওই হামলায় অন্তত ২৮ জন নিহত এবং দশ হাজারের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হন।
২০১৩ সালে জাতিসংঘের একটি আদালতের রায়ে সীমান্ত বিরোধ এক দশকের বেশি সময়ের জন্য শান্ত থাকে। তবে চলতি বছরের মে মাসে এক কম্বোডিয়ান সেনা নিহত হওয়ার পর ফের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
থাই সেনাবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার ছয়টি এলাকায় সংঘর্ষ হয়েছে । এর মধ্যে দুটি প্রাচীন মন্দিরের কাছেই সংঘর্ষ হয়। ট্যাংকের সহায়তায় স্থল সেনারা ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালায়।
কাম্বোডিয়া থাইল্যান্ডে রকেট ও গোলা ছোড়ে, জবাবে থাইল্যান্ড এফ-১৬ যুদ্ধবিমান দিয়ে কাম্বোডিয়ান সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়।
এদিকে, উভয় দেশই প্রথম গুলি চালানোর জন্য একে অপরকে দায়ী করছে। থাইল্যান্ড অভিযোগ করেছে, তাদের সাধারণ নাগরিকদের বাড়ি-ঘরে হামলা চালিয়েছে কম্বোডিয়া। একটি হাসপাতাল কামানের গোলার আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং একটি রকেট একটি পেট্রোলপাম্পে আঘাত হানে।
বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষের কয়েক ঘণ্টা আগে, থাইল্যান্ড কাম্বোডিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বহিষ্কার করে এবং নিজেদের রাষ্ট্রদূতকে ফিরিয়ে আনে। এর পেছনে কারণ ছিল, থাই সামরিক টহল দলের পাঁচ সদস্য ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণে আহত হওয়া।
এর প্রতিক্রিয়ায় কাম্বোডিয়া দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ‘সর্বনিম্ন পর্যায়ে’ নামিয়ে আনে। রাজধানী নম পেন থেকে থাই কূটনীতিকদের বহিষ্কার করে এবং নিজ দেশের একজন ছাড়া সব কূটনীতিককেও ফিরিয়ে আনে।
কাম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন মানেতের অনুরোধে শুক্রবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্স ‘অবিলম্বে’ সংঘর্ষ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে, কম্বোডিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন সংঘর্ষ নিয়ে ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি, শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে।