শিরোনাম
ঢাকা, ১৪ জুলাই, ২০২৫ (বাসস): ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্লিন ট্রানজিশনের জন্য নিযুক্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট তেরেসা রিবেরা সোমবার বেইজিংয়ে এএফপির সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ইউরোপ চীনের সঙ্গে মজুরি ও পরিবেশগত মানের দিক দিয়ে নিম্ন মানের প্রতিযোগিতা নয়, ‘ন্যায়সংগত প্রতিযোগিতা’ চায়।
ইইউ-চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে গভীর উত্তেজনা বিরাজ করছে। ইউরোপ উদ্বিগ্ন যে, সরকার-অনুদাননির্ভর অতিমাত্রায় উৎপাদনের ফলে সস্তা চীনা পণ্য ইউরোপে ঢুকে পড়বে এবং সেখানে ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর জন্য এক অসম প্রতিযোগিতা তৈরি হবে।
এ মাসেই বেইজিংয়ে অনুষ্ঠেয় উচ্চপর্যায়ের ইইউ-চীন সম্মেলনের আগে চীন সফরে এসে রিবেরা চীনের ‘সংরক্ষণবাদ’ নিয়ে করা অভিযোগ নাকচ করে দেন।
তিনি বলেন, ‘আমরা ইউরোপীয়রা মজুরি কমিয়ে, শ্রম অধিকারের মান নামিয়ে কিংবা পরিবেশগত মান বিসর্জন দিয়ে প্রতিযোগিতা করতে চাই না। এটা স্পষ্ট যে যদি আমাদের বাজার সস্তা পণ্যে ভরে যায়, যার দাম বাস্তব উৎপাদনমূল্যকে প্রতিফলিত করে না, তাহলে আমাদের পক্ষে ভালো কিছু আশা করা যায় না।’
উল্লেখ্য, গত অক্টোবরেই ইউরোপ চীনা ইলেকট্রিক গাড়ির ওপর ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে। একইসঙ্গে চীনা মালিকানাধীন সৌর প্যানেল কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু করে।
চীনা সবুজ জ্বালানি কোম্পানির বিরুদ্ধে নেওয়া এসব পদক্ষেপ বিশ্বব্যাপী নবায়নযোগ্য জ্বালানির উত্তরণে প্রভাব ফেলতে পারে কিনা—এমন প্রশ্নের জবাবে রিবেরা বলেন, ‘হ্যাঁ, স্বল্পমেয়াদে আমরা সস্তা আমদানিতে লাভবান হতে পারি। তবে এটি দীর্ঘমেয়াদে বিনিয়োগের সম্ভাবনাকে হত্যা করে দিতে পারে।’
সোমবার চীনের উপ-প্রধানমন্ত্রী ডিং শুয়েশিয়াংয়ের সঙ্গে গোলটেবিল বৈঠকে মিলিত হন রিবেরা। উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বড় দূষণকারীদের পক্ষ থেকে যদি উদ্যোগের অভাব দেখা যায়, তাহলে সেটি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও সাধারণ নাগরিকদের জন্য উদ্বেগজনক।’
জবাবে ডিং চীনের ‘বিশ্বব্যাপী পরিবেশ শাসনে অংশগ্রহণ’-এর প্রশংসা করেন।
পরবর্তীতে সংবাদ সম্মেলনে রিবেরা বলেন, ‘চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমাদের গভীর ও ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে।’ তবে তিনি যোগ করেন, ‘উন্নতির যথেষ্ট সুযোগ রয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘উন্নতির জন্য প্রথমে আমাদের জানতে হবে দুই পক্ষের উদ্বেগগুলো কী কী।’
ব্রাসেলসের আশঙ্কা অনুযায়ী চীনের অতিরিক্ত শিল্প উৎপাদনের কারণে সৃষ্টি হওয়া বাণিজ্যিক টানাপোড়েনের একটি সমাধান ‘অবশ্যই আসবে’, তবে ‘এখনই নয়, বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
উল্লেখ্য, রিবেরার এই সফর এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন চীন বিশ্ব পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে প্রতিযোগিতার প্রেক্ষাপটে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একাধিক আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে সরে এসে বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনায় অস্থিরতা তৈরি করেছেন।
রিবেরা বলেন, ‘এমনটা অতীতে খুব একটা দেখা যায়নি যে, কোনো বড় দেশ নিজেকে এভাবে আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।’
তিনি বলেন, ‘চীন হয়তো মনে করছে, এতে করে তাদের জন্য বৈশ্বিক ক্ষেত্রে নিজেদের গুরুত্ব বাড়ানোর একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে।’
উল্লেখ্য, ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনায় রয়েছে, যেখানে শনিবার ট্রাম্প হঠাৎ করেই নতুন করে ইইউর পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে আলোচনাকে অচল করে দেন।
রিবেরা বলেন, ‘আমরা আমাদের কোম্পানি, সমাজ ও ব্যবসার স্বার্থ রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
চুক্তির সম্ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কে জানে? আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।’
তবে তিনি পরিষ্কার করে দেন যে, ইইউর ডিজিটাল প্রতিযোগিতা সংক্রান্ত বিধান, যা ট্রাম্প বারবার ‘অশুল্ক বাধা’ বলে অভিযোগ করেছেন, তা আলোচনার টেবিলে নেই।
তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের সার্বভৌমত্বের বিষয়। আমরা আমাদের নাগরিক, সমাজ, মূল্যবোধ ও বাজার রক্ষার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেব না।’