বাসস
  ১৪ জুলাই ২০২৫, ১২:২৪
আপডেট : ১৪ জুলাই ২০২৫, ২০:৩৭

সিরিয়ার সুইদায় গোষ্ঠীগত সংঘাতে নিহত ৮৯

দামেস্ক, ১৪ জুলাই, ২০২৫ (বাসস): দক্ষিণ সিরিয়ার সুইদা প্রদেশে সুন্নি বেদুইন গোত্র ও দ্রুজ যোদ্ধাদের মধ্যে দ্বিতীয় দিনের মতো চলমান সংঘর্ষে অন্তত ৮৯ জন নিহত হয়েছেন, এক পর্যবেক্ষক সংস্থা সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে।

সহিংসতা বাড়তে থাকায় ইসরাইল সুইদায় ‘একাধিক ট্যাঙ্কে’ হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে। তবে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। তারা আগেই দ্রুজ সম্প্রদায়কে রক্ষায় সিরিয়ায় হস্তক্ষেপ করবে বলে ঘোষণা দিয়েছিল। 

২০১১ সাল থেকে চলমান গৃহযুদ্ধের পর সদ্য ক্ষমতা গ্রহণ করা অন্তর্বর্তীকালীন নেতা আহমাদ আল-শারার জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ডিসেম্বরে তাঁর ইসলামপন্থি বাহিনী সাবেক প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে।

সিরিয়ার প্রতিরক্ষা ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা সেনা মোতায়েন করেছে, বেসামরিক নাগরিকদের জন্য নিরাপদ করিডোর খুলেছে এবং সহিংসতা ‘দ্রুত ও কঠোরভাবে’ দমন করার অঙ্গীকার করেছে।

রোববার বেদুইন বন্দুকধারীরা দ্রুজ সম্প্রদায়ের এক সবজি বিক্রেতাকে একটি মহাসড়ক থেকে অপহরণ করে। এর জবাবে পাল্টা অপহরণ ঘটে। শুরু হয় সহিংসতা।

যদিও পরে অপহৃতদের মুক্তি দেওয়া হয়, সোমবারও সুইদা শহরের বাইরে লড়াই অব্যাহত থাকে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সুইদা ২৪ জানায়, মর্টার হামলায় একাধিক গ্রামে গোলাবর্ষণ হয়, বহু মানুষ আহত হন।

এএফপির এক চিত্রসংবাদিক জানান, সুইদার রাস্তাগুলো ফাঁকা, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার সময়ও গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে।

৫১ বছর বয়সী আবু তাইম বলেন, ‘আমরা চরম ভয়ের মধ্যে ছিলাম, এলোপাতাড়ি গুলি পড়ছিল।’ ‘রাস্তায় কোনো যান চলাচল নেই, দোকানপাট বন্ধ।’

সুইদা ২৪ জানায়, প্রদেশের পশ্চিমাঞ্চলে গ্রামাঞ্চলে গোলাবর্ষণ এবং লড়াইয়ে ‘ডজন ডজন হতাহত’ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস নিহতের সংখ্যা বাড়িয়ে ৮৯ জনে উন্নীত করে বলেছে, নিহতদের মধ্যে ৪৬ জন দ্রুজ, ১৮ জন বেদুইন যোদ্ধা, ৪ জন বেসামরিক এবং ৭ জন অজ্ঞাত পোশাকধারী।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, সুইদার সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ৬ সদস্য নিহত হয়েছেন।

এএফপির এক সংবাদদাতা সুইদার উপকণ্ঠে বেসামরিক যানবাহনে যোদ্ধা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিশাল সেনাবহর, মোটরসাইকেলে অস্ত্রধারী এবং অ্যাম্বুলেন্সে করে আহতদের দামেস্কে পাঠাতে দেখেছেন।

দ্রুজ আধ্যাত্মিক নেতা শাইখ হিকমত আল-হিজরি সরকারি বাহিনীর প্রদেশে প্রবেশের বিরোধিতা করে ‘আন্তর্জাতিক সুরক্ষা’ দাবি করেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আনাস খাত্তাব এক্স-এ লিখেছেন, ‘সামরিক ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুপস্থিতিই সুইদার চলমান উত্তেজনার প্রধান কারণ। এর একমাত্র সমাধান হলো এসব প্রতিষ্ঠানকে সক্রিয় করে তোলা।’

এপ্রিলে ও মে মাসে দ্রুজ এলাকায় সরকারবিরোধী যোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষে ১০০ জনের বেশি নিহত হন। তখন স্থানীয় নেতারা চুক্তির মাধ্যমে উত্তেজনা কমিয়ে সুইদায় দ্রুজদেরকেই নিরাপত্তা দানের দায়িত্ব দেন। যদিও বেদুইন যোদ্ধারা এখনও কিছু এলাকায় সক্রিয়।

সুইদার গভর্নর মুস্তাফা আল-বাকুর জনগণকে ‘আত্মসংযম বজায় রাখার’ আহ্বান জানান।

পরিস্থিতির কারণে সোমবারের মাধ্যমিক স্কুল পরীক্ষাও স্থগিত ঘোষণা করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

গৃহযুদ্ধ-পূর্ব সময়ে সিরিয়ায় দ্রুজ জনসংখ্যা ছিল প্রায় ৭ লাখ, যাদের বেশিরভাগই সুইদা প্রদেশে বসবাস করেন।

দ্রুজ একটি গুপ্ত ধর্ম বিশ্বাস, যা শিয়া ইসলামের শাখা থেকে উদ্ভূত হলেও আলাদা। তারা মূলত সিরিয়া, লেবানন ও ইসরাইলে বাস করেন।

সুইদায় দ্রুজ ও বেদুইনদের মধ্যে বহুদিন ধরে শত্রুতা চলছে, মাঝে মাঝে তা সহিংসতায় রূপ নেয়।

গত মার্চে আলাভি সম্প্রদায়ের ওপর হামলায় ১,৭০০ জনের বেশি নিহত হন, এর পরেই দ্রুজদের ওপর হামলা হয়, যা নতুন সরকারে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

এই পরিস্থিতিতে ইসরাইল, যারা ১৯৬৭ সাল থেকে গোলান মালভূমির একটি অংশ দখল করে রেখেছে, দ্রুজদের রক্ষার কথা বলে একাধিক হামলা চালায়, যার মধ্যে মে মাসে প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের কাছাকাছি একটি হামলা রয়েছে।

বর্তমানে ইসরাইলে প্রায় ১,৫২,০০০ দ্রুজ বাস করেন, যাদের মধ্যে ২৪,০০০ জন দখলকৃত গোলান মালভূমিতে, এবং তাদের মধ্যে ৫ শতাংশেরও কম ইসরায়েলি নাগরিকত্ব গ্রহণ করেছেন।