শিরোনাম
ঢাকা, ৩০ জুন, ২০২৫ (বাসস) : ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো রোববার সাও পাওলোতে হাজার হাজার সমর্থকদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে বলেছেন, তিনি ‘ব্রাজিলের ভাগ্য পরিবর্তনের’ জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। অভ্যুত্থান চেষ্টার অভিযোগে কয়েক দশক ধরে কারাদণ্ড ভোগ করার পর ন্যায় বিচার চেয়েছেন বলসেনারো।
সাও পাওলো থেকে এএফপি এ খবর জানায়।
বিভেদমূলক উগ্র ডানপন্থী অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়াই করা এই ব্যক্তি ‘ন্যায়বিচারের’ দাবিতে দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম মহানগরীর একটি প্রধান সড়কে বিক্ষোভের ডাক দেন।
বলসোনারো জনতাকে বলেন, ‘যারা আমাকে অভিযুক্ত করে তাদের হাতে অনেক তুরুপের তাস থাকতে পারে, কিন্তু আমার পক্ষে ঈশ্বর, স্বাধীনতা এবং ব্রাজিলের জনসংখ্যার একটি বৃহৎ অংশের সমর্থন তিনটি জিনিস আছে, যা তাদের নেই।’ এ সময় অনেকেই ব্রাজিলের পতাকার সবুজ-হলুদ রঙে সজ্জিত ছিলেন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট তার বিরুদ্ধে আইনি কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে বেশ কয়েকটি বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এসব বিক্ষেভে উপস্থিতি হ্রাস পেয়েছে।
সাও পাওলো বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী, রোববার পাউলিস্তা অ্যাভিনিউতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে প্রায় ১২ হাজার ৪০০ জন অংশগ্রহণ করেছিলেন, এপ্রিলে অংশগ্রহণ করেন ৪৫ হাজার এবং ফেব্রুয়ারিতে বলসোনারোর পক্ষে মিছিল করেছিলেন আনুমানিক ১ লাখ ৮৫ হাজার মানুৃষ।
উল্লোসিত সমর্থকদের উদ্দেশ্যে নীল ট্র্যাকস্যুট পরিহিত বলসোনারো বলেন ‘আমাকে ৫০ শতাংশ ডেপুটি ও সিনেটর দিন, আমি ব্রাজিলের ভাগ্য বদলে দেব।’
পূর্ববর্তী অনুষ্ঠানের মতো, ৭০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি ২০২৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য রক্ষণশীল শিবিরের প্রার্থী হিসেবে নিজেকে স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করেননি।
তিনি বলেন, ‘আমি ক্ষমতার প্রতি আচ্ছন্ন নই, আমি আমার দেশের প্রতি ভালোবাসায় মগ্ন।’
সাবেক নেতার জন্য কয়েক সপ্তাহ ধরে তীব্র বিক্ষোভের পর নতুন করে এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে।
এই মাসের শুরুতে সুপ্রিম কোর্টে তার বিচারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে, তিনি ২০২২ সালের অক্টোবরে বামপন্থী লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার কাছে অল্পের জন্য পরাজিত হওয়ার পর ক্ষমতা পুনরুদ্ধারের জন্য একটি কথিত অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
প্রসিকিউটরের অফিস জানিয়েছে, লুলা এবং অন্যান্য কর্তৃপক্ষেকে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, কিন্তু ঊর্ধ্বতন সামরিক কমান্ডের সমর্থনের অভাবে তা বাস্তবায়িত হয়নি।
বলসোনারো তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং তিনি রোববার আবারও দাবি করেছেন যে এসব মামলা ছিল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, যাতে করে তিনি ২০২৬ সালের নির্বাচনে ফিরে আসতে না পারেন।
ফরাসি কট্টর-ডানপন্থী নেতার কথা উল্লেখ করে তিনি এএফপিকে বলেন, ‘তারা আমার সাথে মেরিন লে পেনের মতোই করেছে।’ লে পেন মার্চ মাসে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন এবং তাকে পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে বিরত থাকবেন।
২০২৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রক্ষণশীলদের প্রতিনিধিত্ব করার সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে পরিচিত সাও পাওলোর গভর্নর তারসিসিও ডি ফ্রেইটাস, রোববার বলসোনারোকে ‘দেশের ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ নেতা’ বলে অভিহিত করে তার প্রতি পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন।
প্রেসিডেন্ট লুলার জনপ্রিয়তা এখন অনেকটাই কমে গেছে। তিনি অন্য মেয়াদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন কিনা সে সম্পর্কে এখনও ঘোষণা দেননি।
বলসোনারোর লিবারেল পার্টির (পিএল) সভাপতি ভালদেমার কোস্টা নেটো বলেছেন, দলটিকে রাজনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী করার সময় এসেছে।
তিনি বলেন,‘জনগণ যে তার সাথে আছে তা বিচার বিভাগকে দেখানোর জন্য বোলসোনারোকে এই ধরণের বিক্ষোভে উপস্থিত থাকতে হবে।’‘যতক্ষণ তিনি পিএলের সম্মানসূচক সভাপতি থাকবেন, আমরা তিনি যা চান তাই করব, কারণ ভোটগুলো তাঁরই।’
পলিস্তা অ্যাভিনিউয়ের একজন রেকর্ড বিক্রেতা ডিওনিসিও টেক্সেইরা বলেন, ‘এই ব্যক্তি ব্রাসিলিয়ায় বিস্ফোরণ ঘটাতে চেয়েছিল এবং তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যা করতে চেয়েছিল, তার জেলে যাওয়া উচিত।’ তিনি বলেন, ‘আমি জানি না কিভাবে মানুষ এখনও তাকে রক্ষা করতে এখানে আসতে পারে।’
২০২৩ সালের, ৮ জানুয়ারি হাজার হাজার বলসোনারোবাদী ব্রাজিলের রাজধানীর কেন্দ্রগুলো দখল করে নেয় এবং লুলা তার শপথ গ্রহণের এক সপ্তাহ পরে তাকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার জন্য সামরিক হস্তক্ষেপের দাবি জানায়।