বাসস
  ২৯ জুন ২০২৫, ১৫:৩১

গ্রীষ্মের প্রথম তাপপ্রবাহে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ইউরোপ

ঢাকা, ২৯ জুন, ২০২৫ (বাসস) :  উত্তর গোলার্ধের গ্রীষ্মের প্রথম তাপপ্রবাহে জন্য প্রস্তুত হচ্ছে দক্ষিণ ইউরোপ, কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত উষ্ণ হওয়া এই মহাদেশে তাপমাত্রা ক্রমেই লাল সীমার দিকে ছুটছে।

বিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরেই সতর্ক করে আসছেন যে, ‘মানবজাতির জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে, এর ফলে পরিবেশের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে। তাদের মতে, ইউরোপে ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রা ও ঘন ঘন তীব্র গ্রীষ্মকালীন তাপপ্রবাহ এ উষ্ণায়নের সরাসরি ফল।’

ফ্রান্সের মার্সেই থেকে এএফপি জানায়, ইতালিতে মিলান থেকে পালেরমো পর্যন্ত ১৭টি শহরে চরম তাপমাত্রার কারণে রেড অ্যালার্ট জারি করা হয়েছে, যেখানকার তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০২ ফারেনহাইট) পর্যন্ত উঠেছে। রোমে, তাপমাত্রার তীব্রতায় হাজারো পর্যটক ও তীর্থযাত্রী ২ হাজার ৫০০টি পাবলিক ফোয়ারা থেকে স্বস্তি খুঁজছিলেন। ভেনিসে, অ্যামাজন প্রধান জেফ বেজোসের বিয়েতে আগত অতিথি ও বিক্ষোভকারীরাও গরমে কাহিল হয়ে পড়েন।

৪০ বছর বয়সী মেক্সিকান পর্যটক আলেহান্দ্রা একেভারিয়া বলেন, তাপপ্রবাহ রোববার আরও উত্তপ্ত হবে, কোন বাতাস নেই, আর্দ্রতা অনেক বেশি, আমরা ঘেমে যাচ্ছি, রাতে শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। 

ফ্রান্সের মার্সেই শহরে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছালে, কর্তৃপক্ষ সেখানকার বাসিন্দাদের জন্য সাঁতারের পুল বিনামূল্যে উন্মুক্ত করে দেয়।

পর্তুগালের দুই-তৃতীয়াংশ অঞ্চলে রোববার চরম তাপদাহ ও অগ্নিকাণ্ডের সতর্কতা থাকবে। লিসবনে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৮ ফারেনহাইট) পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠতে পারে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে।

স্পেনের অনেক অংশে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি ছাড়িয়ে যেতে পারে। দেশটির দক্ষিণ-পশ্চিমের হুয়েলভা অঞ্চলের এল গ্রানাডোতে ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস  তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে, যা নিশ্চিত হলে জুন মাসে স্পেনে রেকর্ড সর্বোচ্চ তাপমাত্রা হবে।

গত তিন বছরই স্পেনের ইতিহাসে সবচেয়ে উষ্ণ বছর হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছে।

ব্যবস্থাসিসিলির পালেরমোতে ৩৯ ডিগ্রি তাপমাত্রার সতর্কতামূলক পূর্বাভাস থাকায় গরমের সময় বাইরে কাজ করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইতালির উত্তরাঞ্চলীয় লিগুরিয়াতেও একই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। দেশটির শ্রম সংগঠনগুলো এই নিষেধাজ্ঞা পুরো দেশে কার্যকর করার দাবি জানিয়েছে।

ফ্রান্সে তাপপ্রবাহ সতর্কতা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ট্যুরস শহর কর্তৃপক্ষ সোমবার ও মঙ্গলবার দুপুরে স্কুল বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে।

ওরলিয়াঁ শহর কিছু শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত জাদুঘরে বিনামূল্যে প্রবেশের ব্যবস্থা করেছে এবং পার্ক ও উদ্যান রাত অবধি খোলা রাখছে।

ফরাসি শহর নিস-এ দুপুরে তাপমাত্রা ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে বাসিন্দা ও পর্যটকরা কুয়াশাচ্ছন্ন পার্ক ও জাদুঘরে স্বস্তি খুঁজে নেন।

শহরের কেন্দ্রীয় সবুজ এলাকা ‘প্রোমোনেড দ্য পায়োঁ’ এর ছায়ায় বিশ্রাম নিতে নিতে এক প্রবীণ বলেন, আমরা সারা দিন ঘরের ভেতরে বসে থাকব না। অনেক পরিবার শিশুদের নিয়ে ছুটে যান জলফোয়ারা ও ঠান্ডা জলের স্প্রের দিকে।

৩৫ বছর বয়সী চিকিৎসক ফ্লোরেন্স ওলেয়ারি বলেন, আমরা শহরের মাঝখানে ফ্ল্যাটে থাকি, পুল নেই, আর দুই বছর বয়সী সন্তানকে নিয়ে সমুদ্রতীরে যাওয়া কঠিন।

‘আলবের্ট ফার্স্ট’ উদ্যানের আয়োজকেরা রোববারের ট্রায়াথলনের ৪ হাজার প্রতিযোগীকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে অবহিত করেন। যার মধ্যে ছিল বরফ স্টেশন ও ইলেকট্রোলাইট স্টেশন। প্রতিযোগিতায় থাকবে ৩.৮ কিমি সাঁতার, ১৮০ কিমি সাইকেল চালানো এবং এক পূর্ণ ম্যারাথন।

ব্রাসেলস থেকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে আসা ফ্রেডেরিক ডেভরোয়ে বলেন. “আমি অসুস্থ বোধ করলে থেমে যাব,।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ গত দুই সপ্তাহে স্কুলগুলোতে প্রায় ২৫০টি পাখা বিতরণ করেছে। অন্যদিকে পর্যটক জঁ-লুক ইদচ্যাক নিসের শীতল জাদুঘর ঘুরে দেখার পথ বেছে নিয়েছেন।

তিনি বলেন এই গরমে জাদুঘর একেবারে পারফেক্ট,” শহরের ফটোগ্রাফি জাদুঘরে ঢোকার সময়।

স্পেনের সেভিয়াতে, যেখানে তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে ধারণা, সেখানকার মানুষজন ও পর্যটকরা হাতপাখা ও টুপি ব্যবহার করছেন রোদ থেকে বাঁচতে।

৬০ বছর বয়সী পর্যটক মার্তা করোন বলেন, অনেক ক্রিম, রোদে পোড়া ঠেকাতে সানস্ক্রিন, মুখে ও শরীরজুড়ে, আর খুব হালকা পোশাক।

 ৬৯ বছর বয়সী কিয়স্ক মালিক ফের্নান্দো সেরানেবলেন, মানুষ পানি আর ঠান্ডা পানীয় চাইছে— এটাই এখন সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপার্নিকাস ক্লাইমেট মনিটর জানিয়েছে, এই তাপপ্রবাহের আগে ইউরোপে সর্বোচ্চ গরম মার্চ মাসও রেকর্ড করা হয়েছে।

কোপার্নিকাস ও বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার (ডাব্লিউএমও) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮০-এর দশক থেকে ইউরোপ বিশ্ব গড়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হারে উষ্ণ হয়ে উঠছে।

বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলছেন, এই বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে ঘূর্ণিঝড়, খরা, বন্যা ও তাপপ্রবাহের মতো চরম আবহাওয়া আরও ঘন ঘন ও তীব্র আকারে দেখা দিচ্ছে।

অনুমান অনুযায়ী, ইতিহাসের সবচেয়ে উষ্ণ বছর ২০২৪ সালে বিশ্বজুড়ে দুর্যোগের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৩০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি।