বাসস
  ২৬ জুন ২০২৫, ২১:৫১

দরিদ্র দেশের শিশুদের জন্য টিকা কিনতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা প্রত্যাহারে ‘হতাশ’ গ্যাভি

ঢাকা, ২৬ জুন, ২০২৫ (বাসস) : বিশ্বের সবচেয়ে দরিদ্র দেশগুলোর শিশুদের টিকাদান কর্মসূচি পরিচালনাকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্যাভি জানিয়েছে, টিকা নিরাপত্তা নিয়ে ভিত্তিহীন প্রশ্ন তুলে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধের ঘোষণা তাদের ‘হতাশ’ করেছে।

ব্রাসেলস থেকে এএফপি জানায়, বুধবার রাতে ব্রাসেলসে গ্যাভির তহবিল সংগ্রহ সম্মেলনে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র সহায়তা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।

তিনি কোনো প্রমাণ ছাড়াই টিকার নিরাপত্তা নিয়ে ব্যাপক সন্দেহ প্রকাশ করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দেন। এ ঘটনা সম্মেলনের পরিবেশকে ছাপিয়ে যায়।

গ্যাভির প্রধান নির্বাহী সানিয়া নিশতার বৃহস্পতিবার এএফপিকে টেলিফোনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ভিডিওটি দেখে আমরা হতাশ হয়েছি। ভিডিওটিতে বলা অনেক বক্তব্যের সঙ্গে আমরা একমত নই। এটি দুর্ভাগ্যজনক, তবে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্কের বিষয়ে এখনও আশাবাদী। আমরা তাদের সঙ্গে সংযোগ রাখব।

গ্যাভি ও জাতিসংঘ এপ্রিল মাসে এক প্রতিবেদনে জানায়, ভুল তথ্য ও আন্তর্জাতিক সহায়তা কমে যাওয়ার কারণে হাম, মেনিনজাইটিস এবং ইয়েলো ফিভারের মতো টিকা-প্রতিরোধযোগ্য রোগের প্রাদুর্ভাব বিশ্বব্যাপী বাড়ছে।

গ্যাভি বুধবারের সম্মেলনে ৯ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে। তবে সংস্থাটি জানায়, আগামী পাঁচ বছরের কার্যক্রম চালাতে সংস্থাটি ১১.৯ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। তারা আগামী পাঁচ বছরে ৫০ কোটি শিশুকে প্রতিরোধযোগ্য রোগ থেকে সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

সম্মেলনে তহবিল সংগ্রহের বিষয়টিকে ইতিবাচক উল্লেখ করে নিশতার বলেন, অনেক দাতা দেশ প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়ানোর মতো অন্য অগ্রাধিকারে মনোযোগ দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আমরা যা পেয়েছি, সেটাই ইতিবাচক।

যুক্তরাষ্ট্র সংস্থাটির মূল বাজেটের প্রায় ১৩ শতাংশ যোগান দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা প্রত্যাহারের পরও গ্যাভি এখনো ‘খুব ভালো অবস্থানে’ রয়েছে বলে জানান নিশতার।

বহু বছর ধরে টিকা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানোর জন্য পরিচিত রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র বলেন, গ্যাভিকে পুনরায় জনসমর্থন অর্জন না করা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র আর কোনো অর্থ দেবে না।

তিনি অভিযোগ করেন, সর্বজনীন টিকাদানের প্রচারে গ্যাভি টিকার নিরাপত্তার বিষয়টি উপেক্ষা করেছে।

বিশেষ করে তিনি ডিফথেরিয়া, ধনুষ্টংকার ও হুপিং কাশির ডিটিপি টিকা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। এসব টিকা নিম্ন আয়ের দেশে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়।

গ্যাভি জানায়,ডিটিপি টিকা উন্নয়নশীল দেশগুলোতে ব্যবহৃত হয়। কারণ সেখানে এসব রোগের ঝুঁকি অনেক বেশি। এই টিকা তুলনামূলক বেশি কার্যকর ও দীর্ঘস্থায়ী সুরক্ষা দেয়।

সংস্থাটি আরও জানায়, যে সব এলাকায় হাসপাতাল সুবিধা সীমিত ও রোগের ঝুঁকি বেশি, সেখানে এই শক্তিশালী সুরক্ষা ব্যবস্থা টিকার সাময়িক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

নিশতার বলেন, জনসমর্থন পুনরুদ্ধারের প্রয়োজন আছে এমন ধারণাও ভুল।

তিনি বলেন, আমরা যে সব দেশে টিকা দিই, সেখানে এত চাহিদা যে আমরা সেগুলো পূরণই করতে পারি না। মাঠে গেলে দেখা যায়, মা-বোনেরা শিশুদের টিকা দেওয়ার জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেখানে আমাদের প্রতি প্রচণ্ড আস্থা রয়েছে।

ব্রাসেলসে অনুষ্ঠিত গ্যাভির সম্মেলনের সূত্র জানায়, ইউরোপীয় দেশ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্মিলিতভাবে গ্যাভিকে ২ বিলিয়ন ইউরোর বেশি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের গেটস ফাউন্ডেশন আরও ১.৬ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে।