বাসস
  ২৫ জুন ২০২৫, ২০:০৮

মহাকাশ অভিযানে ভারত, পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরির নভোচারীদের যাত্রা শুরু

ঢাকা, ২৫ জুন, ২০২৫ (বাসস): ভারত, পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরির নভোচারীদের নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাণিজ্যিক মহাকাশযান বুধবার আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র (আইএসএস)-এর উদ্দেশে যাত্রা করেছে। কয়েক দশক পর এই তিন দেশ আবারও মহাকাশ অভিযানে অংশ নিল।

কেপ ক্যানাভেরাল থেকে এএফপি জানায়, ‘অ্যাক্সিওম মিশন ৪’ বা অ্যাক্স-৪ নামে পরিচিত এ মিশনটি স্থানীয় সময় রাত ২টা ৩১ মিনিটে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে স্পেসএক্সের নতুন ক্রু ড্রাগন ক্যাপসুলে করে ফ্যালকন ৯ রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হয়।

এই যানটি বৃহস্পতিবার গ্রিনিচ মান সময় অনুযায়ী ১১টায় আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে এবং এটি সর্বোচ্চ ১৪ দিন সেখানে অবস্থান করবে।

যানটিতে রয়েছেন ভারতের শুভাংশু শুক্লা (পাইলট), পোল্যান্ডের স্লাভোস উজনানস্কি-ভিসনেভস্কি ও হাঙ্গেরির তিবার কাপু (মিশন বিশেষজ্ঞ), যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক নাসা নভোচারী এবং বর্তমানে অ্যাক্সিওম স্পেসের হয়ে কাজ করা কমান্ডার পেগি হুইটসন।

ভারত, পোল্যান্ড ও হাঙ্গেরি শেষবার যখন মহাকাশে নভোচারী পাঠায়, তখন এই অভিযানের সদস্যদের জন্মও হয়নি। তখন নভোচারীদের বলা হতো ‘কসমোনট’। তারা সেসময় ‘লৌহ যবনিকা’র যুগে সোভিয়েত ইউনিয়নের তত্ত্বাবধানে মহাকাশ অভিযানে গিয়েছিলেন।

৩৯ বছর বয়সী শুভাংশু শুক্লা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমি শুধু যন্ত্রপাতি নয়, একটি জাতির কোটি কোটি হৃদয়ের স্বপ্ন ও প্রত্যাশাও বহন করছি।’

তিনি ১৯৮৪ সালে সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন মিশন সাল্যুট-৭ মহাকাশ স্টেশনে যাওয়া ভারতীয় বৈমানিক রাকেশ শর্মার পর প্রথম ভারতীয় হিসেবে মহাকাশে পাড়ি জমালেন।

ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো এই মিশনকে ২০২৭ সালের ‘গগনযান’ কর্মসূচির আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে।

আইএসএস-এ অবস্থানকালে শুক্লা ভারতের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানা গেছে। ভারতীয় গণমাধ্যমের মতে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হতে পারেন। ধারণা করা হচ্ছে, এটি ভারতের ‘সফট পাওয়ার’ তুলে ধরার একটি উদ্যোগ।

তিন দেশই তাদের নিজ নিজ নভোচারীর খরচ বহন করছে। স্পেসনিউজ ডটকমের তথ্য অনুযায়ী, হাঙ্গেরি ২০২২ সালে এর জন্য ১০ কোটি ডলার পরিশোধ করে। তবে ভারত ও পোল্যান্ডের ব্যয় প্রকাশ করা হয়নি।

প্রথমে জুনের শুরুতে যাত্রার কথা থাকলেও নানা সমস্যার কারণে বিলম্বিত হয় অ্যাক্স-৪ মিশন। এটি এমন এক সময় উৎক্ষেপণ হলো যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং স্পেসএক্স প্রধান ইলন মাস্কের মধ্যে অনলাইনে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় ঘটে।

একসময় ট্রাম্প স্পেসএক্সের সঙ্গে যুক্ত ফেডারেল চুক্তি বাতিলের হুমকি দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে মাস্ক ক্রু ড্রাগন  মহাকাশযান পরিকল্পিত সময়ের আগেই ব্যবহার বন্ধ করে দেওয়া হুমকি দেন। তবে মাস্ক কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেই মন্তব্য প্রত্যাহার করেন এবং পরে এক্সে লিখেন, ‘আমি বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছি।’

বিশ্লেষকদের মতে, যদিও দুই পক্ষের মধ্যে বিরোধ রয়েছে, তবে এখনই সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ নাসা ও পেন্টাগনের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর জন্য স্পেসএক্স-এর ওপর  নির্ভর করতে হয়।

অ্যাক্স-৪ মিশনে স্পেসএক্সের পঞ্চম ও শেষ ‘ক্রু ড্রাগন’যানটির প্রথম যাত্রা হলো। এটি কক্ষপথে পৌঁছালে এর নাম ঘোষণা করা হবে। বর্তমানে স্পেসএক্সের সক্রিয় বহরে এন্ডেভার, রেজিলিয়েন্স, এন্ডিউরেন্স এবং ফ্রিডম নামে চারটি যান রয়েছে।

স্পেসএক্স ভবিষ্যতে এসব যান ধীরে ধীরে বন্ধ করে তাদের নতুন প্রজন্মের ‘স্টারশিপ’ ব্যবস্থার দিকে এগোবে, যা এখন উন্নয়নাধীন।

অ্যাক্স-৪ মিশনে প্রায় ৬০টি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালানো হবে। এর মধ্যে রয়েছে- অণু-শৈবাল, সালাদ বীজের অঙ্কুরোদ্গম এবং ক্ষুদ্র প্রাণী ‘টারডিগ্রেড’-এর মহাকাশ অভিযানে টিকে থাকার ক্ষমতা নিয়ে গবেষণা।