বাসস
  ২৩ জুন ২০২৫, ২০:২৭

হরমুজ প্রণালীতে অচলাবস্থার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে এশীয় দেশগুলো

ঢাকা, ২৩ জুন, ২০২৫ (বাসস) : বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানিপথ হরমুজ প্রণালী বন্ধ হয়ে গেলে সবচেয়ে বড় বিপদে পড়বে চীন, ভারত, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানসহ এশিয়ার অর্থনীতিগুলো, যেহেতু এখান দিয়ে যাওয়া তেলের ৮৪ শতাংশই যায় এশিয়ার দিকে।

টোকিও থেকে এএফপি জানায়, মার্কিন জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের (ইআইএ) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রতিদিন ১৪.২ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল এবং ৫.৯ মিলিয়ন ব্যারেল অন্যান্য পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য হরমুজ প্রণালী দিয়ে পরিবাহিত হয়েছে, যা বিশ্ব তেল সরবরাহের প্রায় ২০ শতাংশ।

প্রায় সব ধরনের অপরিশোধিত তেল, বিশেষত সৌদি আরব, ইরাক, কুয়েত, কাতার, ইরান ও সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে- এই পথ দিয়েই বিশ্ববাজারে যায়।

বিশ্লেষকরা বলছেন, পূর্ব এশিয়ায় আমদানিকৃত মোট তেলের অর্ধেকের বেশি হরমুজ প্রণালী হয়ে যায়।

চীন চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে প্রতিদিন ৫.৪ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেল আমদানি করেছে এই পথ দিয়ে।

চীনের দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল সরবরাহকারী সৌদি আরব, যা চীনের মোট আমদানির ১৫ শতাংশ, অর্থাৎ প্রতিদিন ১.৬ মিলিয়ন ব্যারেল।

এছাড়া, ইরানের ৯০ শতাংশেরও বেশি তেল এখন চীনেই যায়।

চীন এপ্রিল মাসে প্রতিদিন ১.৩ মিলিয়ন ব্যারেল ইরানি তেল আমদানি করেছে, যদিও মার্চে সেই হার ছিল আরও বেশি।

ভারত হরমুজ প্রণালীর ওপর বেশ নির্ভরশীল। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটি প্রতিদিন ২.১ মিলিয়ন ব্যারেল তেল আমদানি করেছে এই পথে।

২০২৫ সালের শুরুতে ভারতের মোট আমদানিকৃত জ্বালানির ৫৩ শতাংশ এসেছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে, বিশেষত ইরাক ও সৌদি আরব।

যদিও মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বাড়তে থাকায় ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি বৃদ্ধি করেছে।
ভারতের জ্বালানি ও গ্যাসমন্ত্রী হারদীপ সিং পুরি বলেন, ‘আমরা পরিস্থিতি সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছি। বিগত কয়েক বছরে আমরা আমদানির উৎস বৈচিত্র্য করেছি।’

দক্ষিণ কোরিয়ার ৬৮ শতাংশ অপরিশোধিত তেল আমদানি হয় হরমুজ প্রণালী হয়ে, প্রতিদিন গড়ে ১.৭ মিলিয়ন ব্যারেল।

প্রধান জ্বালানির উৎস সৌদি আরব, যা ২০২৪ সালে দেশটির এক-তৃতীয়াংশ তেল সরবরাহ করেছে।

দেশটির বাণিজ্য ও জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানায়, ‘এখন পর্যন্ত কোনো সরবরাহ বিঘ্ন ঘটেনি, তবে ভবিষ্যতের ঝুঁকি বিবেচনায় আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ 

সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, তারা ২০০ দিনের রিজার্ভ মজুদ রেখেছে।

জাপান প্রতিদিন ১.৬ মিলিয়ন ব্যারেল তেল আমদানি করে হরমুজ প্রণালী দিয়ে। ২০২৪ সালে তাদের ৯৫ শতাংশ অপরিশোধিত তেল এসেছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে।

জাপানি জাহাজ পরিবহণ প্রতিষ্ঠান মিতসুই ওএসকে জানায়, ‘আমরা আমাদের জাহাজগুলো যেন উপসাগরে কম সময় থাকে সে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

হরমুজ প্রণালী দিয়ে প্রতিদিন থাইল্যান্ড, ফিলিপাইনসহ এশিয়ার অন্যান্য দেশে প্রায় ২ মিলিয়ন ব্যারেল তেল যায়।

এছাড়া ইউরোপে যায় ৫ লাখ ব্যারেল ও যুক্তরাষ্ট্রে যায় ৪ লাখ ব্যারেল।

এশীয় দেশগুলো তেল সরবরাহ উৎস বৈচিত্র্য করার চেষ্টা করতে পারে, কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের বিশাল পরিমাণ আমদানির বিকল্প সহজ নয়।

গটঋএ ব্যাংকের বিশ্লেষকদের মতে, ‘বিশ্বজুড়ে তেলের মজুদ, ওপেক প্লাসের অতিরিক্ত উৎপাদন সক্ষমতা ও যুক্তরাষ্ট্রের শেল অয়েল উৎপাদন কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারে।’

তবে সম্পূর্ণ হরমুজ প্রণালী বন্ধ হয়ে গেলে উপসাগরীয় অঞ্চলের অনেক উৎপাদন কেন্দ্রের প্রবেশাধিকার বাধাগ্রস্ত হবে।

সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত বিকল্প পথে সরবরাহের অবকাঠামো গড়লেও তাদের মোট সক্ষমতা মাত্র ২.৬ মিলিয়ন ব্যারেল/দিন।

ইরান নির্মিত গোহর-জাস্ক পাইপলাইন, যা ওমান উপসাগরের মাধ্যমে তেল রপ্তানির জন্য ব্যবহৃত হওয়ার কথা ছিল, ২০২৪ সাল থেকে নিষ্ক্রিয় এবং এর সর্বোচ্চ সক্ষমতা মাত্র ৩ লাখ ব্যারেল/দিন।