বাসস
  ২১ জুন ২০২৫, ১৫:৫৩

ইউক্রেনের সুমি নগরী দখলের চেষ্টা করতে পারে রাশিয়া: পুতিন

ঢাকা, ২১ জুন, ২০২৫ (বাসস): রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুক্রবার রাশিয়ান বাহিনী ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় নগরী সুমি দখলের চেষ্টার বিষয়টিকে ‘উড়িয়ে দিচ্ছেন না।’ 

তার এ বক্তব্য মস্কো ও কিয়েভের শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা নিয়ে নতুন করে সন্দেহের উদ্রেক করেছে।
সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে। 

ইউক্রেন বলেছে, পুতিনের মন্তব্য শান্তি প্রক্রিয়ার প্রতি ‘অবমাননার’ বহিঃপ্রকাশ।

তিন বছরের সংঘাত অবসানের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সম্প্রতি স্থবির হয়ে পড়েছে। ইউক্রেনের ওপর পূর্ণাঙ্গ আক্রমণ দীর্ঘায়িত করার লক্ষ্যে মস্কোর বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃতভাবে শান্তি চুক্তি নস্যাৎ করার অভিযোগ করেছে কিয়েভ।

রাশিয়া বর্তমানে ইউক্রেনের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ এলাকা দখল করে আছে। ২০১৪ সালে দখলকৃত ক্রিমিয়ান উপদ্বীপ ছাড়াও ২০২২ সালে আক্রমণ শুরু করার পর থেকে চারটি ইউক্রেনীয় অঞ্চলকে নিজেদের বলে দাবি করছে রাশিয়া।

সুমি অঞ্চলটি মস্কোর আনুষ্ঠানিক সংযুক্ত অঞ্চলগুলোর মধ্যে নেই।  তবে রাশিয়ান বাহিনী সম্প্রতি তিন বছরের চলমান যুদ্ধে প্রথমবারের মতো সেখানে প্রবেশ করেছে।

সেন্ট পিটার্সবার্গে রাশিয়ার প্রধান অর্থনৈতিক ফোরামে, ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রত্বের প্রতি অস্বীকারের পুনরাবৃত্তি করে পুতিন বলেন, মস্কো সীমান্তে একটি ‘বাফার জোন’ তৈরির অংশ হিসেবে সুমি দখল করতে পারে।

তিনি আরো বলেন, সুমি অঞ্চলটির দখল নেওয়ার উদ্দেশ্য না থাকলেও, এটি সীমান্তবর্তী এলাকায় ক্রমাগত গোলাবর্ষণ হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। যে কারণে তিনি নীতিগতভাবে এটি উড়িয়ে দিচ্ছেন না।

সেনাবাহিনী কেন এমন জায়গায় প্রবেশ করছে যেটি মস্কো তাদের নিজস্ব বলে দাবি করে না- এমন প্রশ্নের জবাবে পুতিন বলেন, ‘আমি রাশিয়ান ও ইউক্রেনীয়দের এক জাতি বলে মনে করি। সেই অর্থে, সমস্ত ইউক্রেন আমাদের।’ 

তিনি বলেন, ‘যেখানেই একজন রাশিয়ান সৈন্য পা রাখবে, সেটাই আমাদের বলে প্রচলিত রয়েছে।’

ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিগা পুতিনের মন্তব্যকে ‘অবাস্তব’ বলে অভিহিত করে কিয়েভের মিত্রদের রাশিয়ার ওপর ‘কঠোর নিষেধাজ্ঞা’ আরোপের আহ্বান জানিয়েছেন।

- 'তারা সমস্যা তৈরি করছে'-

পুতিনের ক্রমবর্ধমান অঞ্চল দখলের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির বিরক্তি উস্কে দিয়েছে। 

মস্কোর বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধ না করতে চাওয়ার অভিযোগ আনেন তিনি।

মে ও জুন মাসে ইস্তাম্বুলে দুই পক্ষ সরাসরি আলোচনা করে। তবে মস্কোর বিরুদ্ধে ‘ভুল’ আলোচকদের পাঠানোর অভিযোগ এনে কিয়েভ জানায়, তাদের শান্তি চুক্তি করার প্রকৃত ক্ষমতা নেই।

ব্যক্তিগতভাবে শান্তি আলোচনায় অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানান পুতিন। তিনি বৃহস্পতিবার বলেন, তিনি কেবল তিন বছরের সংঘাতের অবসানের আলোচনার ‘চূড়ান্ত পর্যায়ে’ জেলেনস্কির সঙ্গে দেখা করবেন।

তিনি ইউক্রেনকে শান্তির জন্য ইতোমধ্যেই মস্কো নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার জন্য জোর দিয়েছেন।

কিয়েভ বলেছে, তারা তাদের ভূমির কোনো অংশে রাশিয়ার দখল মেনে নিতে পারে না এবং নেবেও না।

ইউক্রেনকে ‘আত্মসমর্পণ’ করার আহ্বান জানানোর কথা অস্বীকার করে শুক্রবারের বক্তব্যে রাশিয়ান নেতা বলেন, ‘আমরা ইউক্রেনের আত্মসমর্পণ চাইছি না। আমরা স্থলভাগে যে বাস্তবতা বিকশিত হয়েছে, তা স্বীকৃতি দেওয়ার ওপর জোর দিচ্ছি।’

পুতিন পুনরাবৃত্তি করেন যে, মস্কো ‘সকল ফ্রন্টে অগ্রসর হচ্ছে’ ও তার সৈন্যরা সুমি অঞ্চলে ১২ কিলোমিটার (সাত মাইল) পর্যন্ত ঢুকে পড়েছে।

গত আগস্টে রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে অনুপ্রবেশ শুরু করায় তিনি কিয়েভের ওপর ‘বোকামি’ করার অভিযোগও করেছেন। 

তিনি বলেন,‘তারা নিজেদের জন্য সমস্যা তৈরি করছে।’

রাশিয়া কয়েক মাস ধরে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে তার প্রতিবেশীর ওপর মারাত্মক আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছে।