বাসস
  ১৪ জুন ২০২৫, ১৫:৪৯

মার্কিন আদালত এখন অভিবাসীদের জন্য উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ স্থান

ঢাকা, ১৪ জুন, ২০২৫ (বাসস): এই সপ্তাহের শুরুতে, হিউস্টনের একটি ফেডারেল আদালতে অভিবাসন বিচারক তার আশ্রয় আবেদন খারিজ করার কয়েক মিনিট পরই আদালত থেকে বেরিয়ে আসার সময় অস্কার গ্যাটো সানচেজকে গ্রেপ্তার করা হয়। হিউস্টন থেকে এএফপি এ সংবাদ জানায়।

সোমবার সাদা পোশাকধারী কর্মকর্তারা যখন তাকে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন তিনি এএফপিকে বলেন, আমি একজন কিউবান নাগরিক, আমাকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে। পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন তার ফুফু ৫৪ বছর বয়সী যুক্তরাষ্ট্রের বৈধ বাসিন্দা ওলেইডিস সানচেজ।

গাটো সানচেজকে একটি চিহ্নহীন ধূসর গাড়িতে তোলা হয়, যেটি সাইরেন বাজিয়ে হিউস্টন থেকে প্রায় ৮০ কিমি দূরে কনরো অভিবাসন আটক কেন্দ্রে নিয়ে যায়। তিনি সেখানে ডজনখানেক অভিবাসীর সঙ্গে আটক রয়েছেন। যাদের প্রত্যাবাসনের অপেক্ষা চলছে।

আদালতে ধরপাকড় বেড়েছে: সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আদালত প্রাঙ্গণে অভিবাসন কর্তৃপক্ষের ধরপাকড় বেড়েছে, যেখানে হাজার হাজার অভিবাসী তাদের আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে হাজির হচ্ছেন।

অভিবাসন অধিকারকর্মীরা দাবি করেন, ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)- এর এজেন্টরা বিনা পরিচয়পত্রে আদালত চত্বরে প্রবেশ করছেন। আর যারা পরিচয়পত্র পরেন, তারা প্রায়ই মুখ ঢেকে রাখেন।

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর আইসিইউকে আদালতে সরাসরি অভিযান চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

এএফপি সাংবাদিকরা নিউ ইয়র্কেও এ রকম গ্রেফতারের ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন। মে মাসের শেষ দিকে টেক্সাসের সান আন্তোনিও আদালতের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। যেখানে একজন গ্রেফতারকৃত নারী চিৎকার করে বলেছেন তার সন্তানদের কেউ যেন স্কুল থেকে নিয়ে যায়। পাশে থাকা এক শিশু তখন তার মাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিল।

আদালতের দোরগোড়ায় গ্রেফতার: গাটো সানচেজ ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। অনেক অভিবাসীর মতো নিজেই আত্মসমর্পণ করেন। শর্ত ছিল তিনি আদালতে হাজির হবেন। ২০২৪ সালের মে মাসে আশ্রয় আবেদন করেন এবং সোমবার হিউস্টনের আদালতে উপস্থিত হন। যেখানে তার মামলার শুনানির তারিখ নির্ধারিত হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু আদালতের সরকারি কৌঁসুলি বলেন, ‘এই মামলা এখন আর সরকারের স্বার্থে নয়।

তারপরপরই, আইনজীবী বিয়াঙ্কা সান্তোরিনি তাকে আইনি সহায়তা দিতে এগিয়ে আসেন। সান্টোরিনি বলেন, ‘আশ্রয় আবেদন খারিজ হওয়ার সাথে সাথে মামলাও শেষ হয়ে যায়। তখন তার আর কিছুই বিচারাধীন থাকে না। ঠিক তখনই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

আদালতের ভেতরে ‘তথ্যদাতা’ : সান্টোরিনির দাবি করেন, আদালতের ভেতরে এখন আইসিই’র তথ্যদাতা রয়েছে। তারা আদালত থেকে বের হওয়া প্রতিটি ব্যক্তিকে থামিয়ে জিজ্ঞাসা করছে না। তারা আগে থেকেই জানে, কে কী রায় পেয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, আশ্রয় আবেদন চলমান থাকা সত্ত্বেও গাটো সানচেজ তার 'আদালতের দিন' পাচ্ছেন না। যা সংবিধান অনুযায়ী তার অধিকার। আপনি জিতবেন, এমন নিশ্চয়তা নেই। আপনি থেকে যেতে পারবেন, এমনও না। কিন্তু আপনার বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। সেই তারিখটা অন্তত দিন।’

অভিবাসন অধিকার সংগঠন ‘এফআইইএল’ এর নির্বাহী পরিচালক সিজার এস্পিনোসা বলেন, ‘অধিকাংশ অভিবাসী নিয়ম মেনেই আদালতে আসেন। তারা চেষ্টা করছেন আইন অনুযায়ী নিজেদের অবস্থান বৈধ করতে।’

এদিকে লস অ্যাঞ্জেলেসে, এক হোম ইমপ্রুভমেন্ট স্টোরের বাইরে অবৈধ অভিবাসীদের লক্ষ্য করে আইসিই অভিযান চালালে প্রতিবাদ ও সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এর জেরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ন্যাশনাল গার্ড ও মেরিন সেনা মোতায়েনের বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেন।

এস্পিনোসা বলেন, কিছু আমেরিকান অভিবাসী-বিরোধী অভিযানকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং আটক ব্যক্তিদের সম্পর্কে অভিযোগ করেছেন। কিন্তু ‘যখন তারা আমাদের সেবা দেন, আমাদের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হয়ে কাজ করেন, তখন কেউ কোন অভিযোগ করে না।