বাসস
  ১৪ জুন ২০২৫, ১০:৪৩

নগরায়ণের চাপে হুমকিতে সাও পাওলোর পুমারা

ঢাকা, ১৪ জুন, ২০২৫ (বাসস) : ব্রাজিলের সাও পাওলো রাজ্যে বন্য প্রাণীদের আশ্রয়স্থলের আশপাশে ব্যাঙের ছাতার মতো অজস্র অ্যাপার্টমেন্ট ও বিপণিকেন্দ্র গজিয়ে উঠছে। এমন নগরায়ণের চাপে আহত পুমাদের আশ্রয়কেন্দ্র—মাতা সিলিয়ার টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। এখানে মানুষের হাতে আহত বন্য পুমাদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ব্রাজিলের জুন্ডিয়াই থেকে এএফপি জানায়, সাও পাওলো মহানগরী থেকে মাত্র ৯০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই কেন্দ্রটির আয়তন প্রায় ৪০টি ফুটবল মাঠের সমান।

এই কেন্দ্রে বর্তমানে ২৫টি পুমা ও ১০টি জাগুয়ার চিকিৎসাধীন। তাদের মধ্যে রয়েছে পাঁচ বছর বয়সী পুমা ‘বারেইরো’। এটি একটি স্টিল তার দিয়ে তৈরি ফাঁদে ধরা পড়েছিল। তার শরীরের পাশ দিয়ে গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছে।

'নগরায়ণের কারণে প্রাকৃতিক আবাস সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় পুমারা পথ হারিয়ে ফেলে—রাস্তা, গেট দিয়ে ঘেরা আবাসিক এলাকা আর মানুষের নির্মিত কাঠামোর ভেতর আটকে পড়ে,' বলেন মাতা সিলিয়ার সভাপতি জর্জ বেলিক্স।

মানববসতির বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে প্রাকৃতিক খাদ্যের উৎস যেমন হরিণ ও অন্যান্য ছোট প্রাণী কমে যাওয়ায় খাবারের খোঁজে পুমারা লোকালয়ের কাছাকাছি চলে আসে, যার মধ্যে গৃহপালিত পশুও থাকে।

এই বুনো বিড়ালগুলো গাড়ির ধাক্কায় নিহত হয়, বৈদ্যুতিক বেড়া থেকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় কিংবা শিকারি বা স্থানীয়দের পাতা ফাঁদে পড়ে যায়। কেউ কেউ আবার চামড়া বা শিকারের জন্য পুমা হত্যা করে।

'এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে কয়েক বছরের মধ্যেই বহু প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে যাবে,' বলেন বেলিক্স। প্রায় ৩০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই আশ্রয়কেন্দ্রটি এখন পর্যন্ত প্রায় ৩২,০০০ প্রাণীর চিকিৎসা দিয়েছে।

ু ‘পাথরের জঙ্গল’

মাতা সিলিয়ার কেন্দ্রে পুমা ছাড়াও বানর ও ‘ম্যানড উলফ’ রয়েছে। এটি দেশটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বুনো বিড়ালের বৈচিত্র্যের আবাসস্থল ব্রাজিলের বিশাল মাতা আতলান্তিকা অরণ্যের অংশ।

কিন্তু এই অভয়ারণ্য থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরেই সাও পাওলো শহরের সীমানা শুরু—দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বড় এই নগরীকে ‘পাথরের জঙ্গল’ বলা হয়, যেখানে ২ কোটি ১০ লাখ মানুষ বাস করে।

'অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক: সাও পাওলো অঞ্চলের প্রাণীরা নগরায়ণের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরাজিত হচ্ছে,' বলেন পশু চিকিৎসক ক্রিস্টিনা হারুমি। তিনিই বারেইরোকে উদ্ধার করে চিকিৎসা দিয়েছেন। এখন তার আশা, একদিন বারেইরোকে আবার বনে ফিরিয়ে দেওয়া যাবে।

খাদ্যশৃঙ্খলের শীর্ষে অবস্থান করায় পুমাকে পরিবেশগত ‘বায়োইন্ডিকেটর’ হিসেবে ধরা হয়। অর্থাৎ, এদের হারিয়ে যাওয়া পরিবেশ বিপর্যয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রকৃতিসম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন)-এর রেড লিস্ট অনুযায়ী, ব্রাজিলে পুমা প্রায় ‘সংকটাপন্ন’ শ্রেণিভুক্ত। তবে আমাজন অববাহিকার বাইরের সাব-প্রজাতিগুলোকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।