শিরোনাম
ঢাকা, ১৪ জুন, ২০২৫ (বাসস) : ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে ইসরাইলের ভয়াবহ হামলার পর শনিবার ভোরে ইসরাইলের দিকে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে ইরান।
তেহরান থেকে এএফপি জানায়, ইসরাইল জুড়ে বিমান হামলার সাইরেন ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে, সামরিক বাহিনী বাসিন্দাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইরানের ছোড়া ডজনখানেক ক্ষেপণাস্ত্রের কয়েকটি প্রতিহত করা হলেও কিছু লক্ষ্যভেদ করেছে।
তেল আবিবের আকাশে ধোঁয়া উড়তে দেখা গেছে বলে এএফপির এক সাংবাদিক জানিয়েছেন। ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী (আইআরজিসি) জানিয়েছে, তারা ইসরাইলের বহু স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে।
ইসরাইলের দমকল বিভাগ জানিয়েছে, তারা ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় আক্রান্ত ভবনগুলোতে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে। গুস দান এলাকায় ৩৪ জন আহত হয়েছে, যাদের মধ্যে একজন নারী পরে মারা যান।
তেহরানে শনিবার ভোরে মেহরাবাদ বিমানবন্দরের কাছে আগুন ও ধোঁয়া দেখা গেছে। স্থানীয় গণমাধ্যম একটি বিস্ফোরণের খবরও দিয়েছে।
ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন জানিয়েছে, রাজধানীতে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় করা হয়েছে এবং বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
তেহরানের রাস্তায় শত শত মানুষ রাত্রিতে সেনাবাহিনীর প্রতিশোধমূলক হামলার উদ্যাপন করেছে, জাতীয় পতাকা হাতে তারা ইসরাইলবিরোধী স্লোগান দেয়।
জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত জানিয়েছেন, ইসরাইলের প্রথম দফার হামলায় ৭৮ জন নিহত এবং ৩২০ জন আহত হয়েছে।
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস উভয় দেশকে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'আর না, এবার থামো। শান্তি ও কূটনীতি প্রাধান্য পাক।'
সংলাপের আহ্বান
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা ইসরাইলকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে সহায়তা করছে, যদিও ইসরাইলের হামলায় তাদের কোনো ভূমিকা নেই বলেই দাবি করে ওয়াশিংটন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার টেলিফোনে কথা বলেন। স্টারমারের দপ্তর জানায়, উভয় নেতা সংকট প্রশমনে ‘সংলাপ ও কূটনীতির’ পক্ষে মত দেন।
এর আগে ইসরাইল জানায়, তাদের হামলায় ইরানের বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের কমান্ডার ও সামরিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। ২০০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে, যার মধ্যে পারমাণবিক কেন্দ্র ও বিমানঘাঁটিও ছিল।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি এক ভাষণে ইসরাইলকে 'ধ্বংসস্তূপে পরিণত করার' হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, 'গত ২৪ ঘণ্টায় আমরা শীর্ষ সামরিক কমান্ডার, গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক বিজ্ঞানী, মূল ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ভাণ্ডারের একটি বড় অংশ ধ্বংস করেছি।'
নিহত কমান্ডার
ইরানি সংবাদমাধ্যম জানায়, হামলায় সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি ও আইআরজিসি প্রধান হোসেইন সালামিসহ শীর্ষ সামরিক নেতারা নিহত হয়েছেন। খামেনি ইতোমধ্যে নতুন কমান্ডার নিয়োগ দিয়েছেন।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, আইআরজিসির বিমান শাখার নেতৃত্ব একটি গোপন বাংকারে ইসরাইলবিরোধী হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল—তাদের অধিকাংশই এই হামলায় নিহত হন।
তেহরানে একটি আবাসিক ভবনে ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার ছবি প্রকাশ করেছে এএফপি। তাসনিম বার্তা সংস্থা জানায়, নিহতদের মধ্যে ছয়জন পারমাণবিক বিজ্ঞানী রয়েছেন।
পারমাণবিক কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত, তেজস্ক্রিয়তা স্থিতিশীল
নাতাঞ্জ পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলায় উপরের কাঠামো ধ্বংস হয়েছে বলে ইরান জানায়। তবে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানায়, 'বাইরের তেজস্ক্রিয়তা মাত্রা অপরিবর্তিত রয়েছে।'
ইরান জানায়, ফোর্দো ও ইসফাহান কেন্দ্রগুলোতে সীমিত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি অনুযায়ী ৩.৬৭ শতাংশের সীমা থাকলেও বর্তমানে ইরান ৬০ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে—যা ৯০ শতাংশের অস্ত্রযোগ্য মাত্রার চেয়ে কম হলেও উদ্বেগজনক।
নেতানিয়াহু বলেন, 'ইরান পারমাণবিক কর্মসূচিতে এমন এক পর্যায়ে পৌঁছেছে যা আর ফেরানো যাবে না।'
বেশ কিছুদিন ধরেই আইএইএ ইরানকে অনুপালন না করার দায়ে অভিযুক্ত করে আসছে, এবং ইসরাইল আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের দাবি জানিয়ে আসছে।