বাসস
  ১৪ জুন ২০২৫, ১০:০৪

ইসরাইলের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ ইরানের

ঢাকা, ১৪ জুন, ২০২৫ (বাসস) : ইরান শুক্রবার ইসরাইলের হামলার তীব্রতাকে যুদ্ধ হিসেবে ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তেহরানকে সতর্ক করে বলেছেন, যদি তারা তাদের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে কোনো চুক্তি না করে তবে তারা ‘আরো নৃশংস’ হামলা চালাবে। 

তেহরান থেকে এএফপি এ খবর জানায়।

ইসরাইল জানিয়েছে, তাদের বিমান হামলায় ইরানের বেশ কয়েকজন শীর্ষ জেনারেল নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে বিপ্লবী গার্ডের বিমান বাহিনীর বেশিরভাগ জ্যেষ্ঠ নেতৃত্বও রয়েছেন এবং পরমাণু স্থাপনাসহ প্রায় ১শ’টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হেনেছে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ইসরাইলকে সতর্ক করে বলেছেন, হামলার জন্য তারা ‘তিক্ত ও বেদনাদায়ক’ পরিণতির মুখোমুখি হবে। অন্যদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি এই হামলাকে ‘যুদ্ধ ঘোষণা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, ‘ইরান শত্রুদের তাদের বোকামিপূর্ণ কাজের জন্য অনুতপ্ত করবে।’

ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইরান প্রতিশোধমূলক প্রায় ১শ’টি ড্রোন নিক্ষেপ করেছে।

বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী ইসরাইলি ভূখণ্ডের বাইরে সেগুলোকে প্রতিহত করেছে। অন্যদিকে প্রতিবেশী জর্ডান জানিয়েছে, তারা তাদের আকাশসীমা লঙ্ঘনকারী ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে।

এই হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্প শুক্রবার ইরানকে ‘একটি চুক্তি করতে’ আহ্বান জানিয়েছেন।

যুক্তরাষ্ট্র জোর দিয়ে বলেছে, তারা ইসরাইলি পদক্ষেপে তারা জড়িত নয় এবং ইরানকে তার কর্মী বা স্বার্থে আক্রমণ না করার জন্য সতর্ক করেছে। 
কিন্তু তেহরান বলেছে, পরিণামের জন্য ওয়াশিংটন দায়ী থাকবে।

প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইসরাইল ‘ইরানের পরমাণু সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচির কেন্দ্রবিন্দুতে’ আঘাত করেছে। পরমাণু বিজ্ঞানী এবং নাতাঞ্জের প্রধান ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাকে টার্গেট করে হামলা চালিয়েছে।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই হামলা ‘যত দিন সময় লাগে তত দিন অব্যাহত থাকবে’ যদিও সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গোয়েন্দা তথ্য দেখায় যে, ইরান তার পরমাণু কর্মসূচিতে ‘প্রত্যাবর্তনের কোনো বিন্দু’-এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।

ইরানের গণমাধ্যম জানিয়েছে, এই হামলায় ইরানের সর্বোচ্চ পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা, সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি এবং বিপ্লবী গার্ডের প্রধান হোসেইন সালামি নিহত হয়েছেন।

‘স্পষ্ট বার্তা’

খামেনি দ্রুত নিহতদের স্থলাভিষিক্ত করার জন্য নতুন কমান্ডার নিয়োগ করেছেন। অন্যদিকে রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, সর্বোচ্চ নেতার একজন সিনিয়র উপদেষ্টা নিজেই আহত হয়েছেন।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ‘ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কর্পসের বিমান বাহিনীর সিনিয়র চেইন অফ কমান্ড ইসরাইল রাষ্ট্রের ওপর আক্রমণের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য একটি ভূগর্ভস্থ কমান্ড সেন্টারে একত্রিত হয়েছিল।’ তাদের বেশিরভাগই হামলায় নিহত হয়েছে।

ইরান নিশ্চিত করেছে, গার্ডের মহাকাশ কমান্ডার, ‘সাহসী এবং নিবেদিতপ্রাণ যোদ্ধাদের একটি দলসহ’ নিহত হয়েছেন।

ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাটজ বলেছেন, ‘সিনিয়র কমান্ডারদের সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তু একটি শক্তিশালী এবং স্পষ্ট বার্তা পাঠিয়েছে, যারা ইসরাইলের ধ্বংসের দিকে কাজ করে তাদের নির্মূল করা হবে।’

এএফপি’র ছবিতে তেহরানের একটি আবাসিক ভবনের পাশে একটি ফাঁকা গর্ত দেখা গেছে।  যেখানে লক্ষ্যবস্তু এবং স্থানীয়ভাবে হামলা চালানো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে, তবে সঠিক সংখ্যা প্রদান করা হয়নি।

এদিকে জরুরি পরিষেবার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন ৬ শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানীসহ শতাধিক নিহত এবং তিনশ’র ও বেশি আহত হয়েছেন। 

তাসনিম সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ছয়জন পারমাণবিক বিজ্ঞানী রয়েছেন।

শুক্রবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ জানিয়েছে, তারা একটি জরুরি বৈঠক করবে স্থানীয় সময় বিকাল ৩টায়। একটি কূটনৈতিক সূত্র এএফপি’কে জানিয়েছে, বৈঠকটি ইরানের এবং রাশিয়া ও চীন অনুরোধে হবে।

‘ভয়ঙ্কর প্রতিক্রিয়া’

তেহরানের রাস্তাগুলো জনশূন্য ছিল। পেট্রল স্টেশনগুলোতে সারিবদ্ধভাবে তেলের জন্য অনেক গাড়ি অপেক্ষা করছিল। 

৬২ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত আহমেদ মোয়াদি জিজ্ঞাসা করলেন ‘আমরা আর কতদিন ভয়ে বাস করব?।’

‘একজন ইরানি হিসেবে, আমি বিশ্বাস করি যে এটি আমার একটি অপ্রতিরোধ্য প্রতিক্রিয়া, একটি তীব্র প্রতিক্রিয়া।’

তেহরানের প্রধান প্রবেশপথ ইমাম খোমেনি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ইরাক, জর্ডান এবং সিরিয়া তাদের আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে।

এই অঞ্চলে অনিশ্চয়তার ঢেউয়ের মধ্যে উদ্বেগ বেড়ে যাওয়ায় ইসরাইল জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।

তেল আবিবের বাসিন্দা ভেরেড সার এএফপি’কে বলেছেন, ‘আমি আমার সন্তানদের জন্য এবং আমার জীবিকা নির্বাহের জন্যও চিন্তিত। কারণ, এটি বাজারকে প্রভাবিত করে। আপনি কাজ করতে পারবেন না, আপনি কিছুই করতে পারবেন না।’ 

নেতানিয়াহু শুক্রবার বলেছিলেন, তিনি ‘ইরানি আক্রমণের বেশ কয়েকটি ঢেউ’ আশা করেছিলেন।

ইসরাইলের সামরিক বাহিনী ‘প্রতিরক্ষা এবং আক্রমণ’ এর জন্য প্রস্তুত থাকার জন্য ‘সারা দেশে’ সমস্ত যুদ্ধক্ষেত্রে রিজার্ভ সৈন্য মোতায়েন শুরু করেছে।

ইসরাইলি হামলার কারণে তেলের দাম বেড়ে গেছে। ট্রাম্পের এই অঞ্চলে ‘ব্যাপক সংঘাত’ সম্পর্কে সতর্কীকরণের পরে যখন মজুদ কমে গেছে তখন তেলের দাম বেড়ে যায়।

ট্রাম্প আরো বলেছেন, যদি সংঘাত শুরু হয় তবে ইরান এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য করে হামলা চালানোর হুমকি দেওয়ার পর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্য থেকে কর্মীদের প্রত্যাহার করছে।

হামলার আগে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচির ওপর একটি চুক্তি ‘মোটামুটি কাছাকাছি’, তবে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, ইরানের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ওপর ইসরাইলি আক্রমণ চুক্তির সম্ভাবনা নষ্ট করতে পারে।

‘নাগালের মধ্যে’

ট্রাম্প বলেছেন, সহিংসতার কারণে রোববার ওমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে পরিকল্পিত ষষ্ঠ দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। 
ওয়াশিংটন ‘আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার আশা করছে’।

ইসরাইলের লক্ষ্যবস্তুগুলোর মধ্যে নাতানজ ছিল তা নিশ্চিত করে আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা।