বাসস
  ১৩ জুন ২০২৫, ২২:০৮

শেষ হলো জাতিসংঘ সম্মেলন, উপেক্ষিত জীবাশ্ম জ্বালানি প্রসঙ্গ

ঢাকা, ১৩ জুন, ২০২৫ (বাসস) : বিশ্ব মহাসাগর নিয়ে আয়োজিত জাতিসংঘ সম্মেলন শুক্রবার শেষ হয়েছে সাগর সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতির মাধ্যমে। তবে গভীর সমুদ্র খনন নিয়ে বিরোধিতা জোরালো হলেও জীবাশ্ম জ্বালানি প্রসঙ্গ আলোচ্যসূচি থেকেই বাদ পড়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছে সম্মেলন।

নিস থেকে এএফপি জানায়, উন্নয়নশীল দেশগুলো, বিশেষত দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো, সাগরের উচ্চতা বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত মৎস্য আহরণ মোকাবিলায় আর্থিক সহায়তার যে আশা করেছিল, তাও অপূর্ণই রয়ে গেছে।

পাঁচদিনের এই সম্মেলনে ফ্রান্সের নিস শহরে ৬০টিরও বেশি রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, সহস্রাধিক বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী ও পরিবেশবাদীরা অংশ নেন।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, বিশ্বের মহাসাগর এখন ‘জরুরি অবস্থা’র মুখোমুখি। নিস সম্মেলন ছিল জাতিসংঘের উদ্যোগে তৃতীয় ও সর্ববৃহৎ বৈশ্বিক সমাবেশ যা একমাত্র সাগরকে ঘিরে আয়োজিত।

বিশেষজ্ঞরা আন্তর্জাতিক জলসীমায় (যা জাতীয় সীমানার বাইরে ৬০ শতাংশ মহাসাগর) সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ঐতিহাসিক চুক্তি অনুমোদনের পথ প্রশস্ত হওয়াকে সম্মেলনের সবচেয়ে ইতিবাচক অর্জন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

‘হাই সিজ ট্রিটি’ নামে পরিচিত এই চুক্তিতে নিসে ১৯টি দেশ নতুন করে স্বাক্ষর করেছে, ফলে মোট স্বাক্ষরকারী সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০। চুক্তি কার্যকর করতে ৬০টি দেশের অনুমোদন প্রয়োজন।

ফ্রান্সের মহাসাগর বিষয়ক বিশেষ দূত অলিভিয়ের পোভ্র দারভোর বলেন, সেপ্টেম্বর মাসে নিউইয়র্কে চূড়ান্ত স্বাক্ষর অনুষ্ঠান হওয়ার কথা এবং জানুয়ারি ২০২৬ থেকে এটি কার্যকর হবে।

জুলাই মাসে গভীর সমুদ্র খনন সংক্রান্ত বৈশ্বিক নিয়ম এবং আগস্টে প্লাস্টিক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি নিয়ে আলোচনার প্রেক্ষাপটে এই সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়েছে।

নিসে ৯০টির বেশি দেশের মন্ত্রীরা প্লাস্টিক উৎপাদন ও ব্যবহারে সীমা আরোপের পক্ষে প্রতীকী সমর্থন জানান, যা তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর বিরোধিতার মুখে আছে।

সম্মেলনে সবচেয়ে আলোচিত অনুপস্থিত বিষয় ছিল জীবাশ্ম জ্বালানি। সমুদ্র উষ্ণায়নের মূল কারণ হওয়া সত্ত্বেও এই প্রসঙ্গ চূড়ান্ত ঘোষণায় অনুপস্থিত।

সাবেক মার্কিন জলবায়ু দূত জন কেরি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মহাসাগরকে রক্ষা করা অসম্ভব, যদি আমরা এর প্রধান কারণ জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে নির্গত দূষণের মোকাবিলা না করি।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একতরফা গভীর সমুদ্র খনন ত্বরান্বিত করার উদ্যোগের বিরুদ্ধে বিশ্ব নেতারা শক্ত অবস্থান নেন।

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ এটিকে ‘পাগলামি’ বলেন এবং ব্রাজিলের লুলা দা সিলভা একে ‘লুণ্ঠনপ্রবণ প্রতিযোগিতা’ হিসেবে অভিহিত করেন।

তবে গভীর সমুদ্র খননের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক জোটে মাত্র চারটি নতুন দেশ যোগ দিয়েছে, মোট সদস্য দাঁড়িয়েছে ৩৭টি। এই জোট আগামী মাসে আন্তর্জাতিক সমুদ্রতল কর্তৃপক্ষের বৈঠকে খননের বিরোধিতা করবে বলে জানিয়েছে।

কয়েকটি দেশ বিশাল সামুদ্রিক সংরক্ষিত অঞ্চল ঘোষণা করে এবং ‘বটম ট্রলিং’ নামে পরিচিত ধ্বংসাত্মক মৎস্য আহরণ পদ্ধতির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়।

পরিবেশবাদীরা সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা চাইলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।

এদিকে, ধনীদের পক্ষ থেকে অর্থ প্রতিশ্রুতি এলেও রাষ্ট্রীয় স্তরে অনুদান ছিল খুবই সীমিত। ফ্রান্স কেবল প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর জন্য২০ লাখ ইউরো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় একটি যৌথ রাজনৈতিক ঘোষণার মাধ্যমে সম্মেলনের শেষ হয়, যা বহু মাস ধরে আলোচনা করে তৈরি হলেও জীবাশ্ম জ্বালানির প্রসঙ্গ বাদ থাকায় সমালোচিত হয়েছে।

ইউরোপীয় জলবায়ু ফাউন্ডেশনের প্রধান লরেন্স টিউবিয়ানা বলেন, ‘চুক্তি স্বাক্ষর আর বাস্তব সমাধানের মধ্যে পার্থক্য আছে। কোনো ঘোষণায় সমুদ্রের উত্তাপ কমে না।’