বাসস
  ১১ জুন ২০২৫, ১৩:১৬

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধে ট্রাম্পকার্ড হয়ে উঠেছে ‘রেয়ার আর্থ’

ঢাকা, ১১ জুন, ২০২৫ (বাসস) : যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উচ্চঝুঁকিপূর্ণ বাণিজ্যযুদ্ধ প্রশমনে একটি চুক্তিতে উপনীত হতে চীন 'রেয়ার আর্থ’ খনিজে তার আধিপত্যের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সুবিধার ওপর নির্ভর করছে।

ইলেকট্রিক যান, হার্ডড্রাইভ, উইন্ড টারবাইন ও ক্ষেপণাস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত এই বিরল মৌল উপাদানগুলো আধুনিক অর্থনীতি ও জাতীয় প্রতিরক্ষায় অপরিহার্য।

যুক্তরাষ্ট্র-চীন আলোচনায় কীভাবে রেয়ার আর্থ বড় অন্তরায় হয়ে উঠেছে, তার ওপর আলোকপাত করেছে এএফপি।

- খনন বিস্ফোরণ -

১৯৯২ সালে চীনের প্রভাবশালী নেতা দেং জিয়াওপিং বলেছিলেন, 'মধ্যপ্রাচ্যের কাছে তেল আছে, চীনের কাছে আছে রেয়ার আর্থ।'

এরপর থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত খনন খাতে বিপুল বিনিয়োগ ও অন্যান্য দেশের তুলনায় শিথিল পরিবেশনীতি চীনকে বিশ্বের শীর্ষ সরবরাহকারী করে তুলেছে।

আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থার (আইইএ) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বৈশ্বিক পরিশোধিত রেয়ার আর্থের ৯২ শতাংশই চীনে উৎপাদিত।

তবে গত এপ্রিল থেকে বেইজিং রপ্তানির ক্ষেত্রে লাইসেন্স নেওয়া বাধ্যতামূলক করায় বিশ্বব্যাপী সরবরাহ মন্থর হয়ে পড়েছে—যা যুক্তরাষ্ট্রের ট্যারিফ ব্যবস্থার পাল্টা জবাব হিসেবে দেখা হচ্ছে।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী সাতটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ও সংশ্লিষ্ট চৌম্বক যন্ত্রপাতি রপ্তানির জন্য চীনা কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে। শিল্প সংগঠনগুলো বলছে, এই প্রক্রিয়া জটিল ও ধীর।

- গভীর প্রভাব -

এই গুরুত্বপূর্ণ উপাদানে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করাকে আলোচনায় অগ্রাধিকার দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। লন্ডনে এই সপ্তাহে দুই পক্ষের বৈঠকে বিষয়টি গুরুত্ব পাচ্ছে।

এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের গবেষক পল ট্রিওলো এক অনলাইন সেমিনারে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রে কয়েকটি প্লান্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রেয়ার আর্থ ইস্যু বাণিজ্য আলোচনার অন্য অংশকে ছাপিয়ে গেছে।'

তিনি জানান, ফোর্ডের এক্সপ্লোরার এসইউভি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনায় হোয়াইট হাউসের দৃষ্টি আকর্ষিত হয়েছে।

দুই দেশের কর্মকর্তারা মঙ্গলবার জানিয়েছেন, তারা বাণিজ্য আলোচনার জন্য একটি 'চুক্তির কাঠামো'তে পৌঁছেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য সচিব হাওয়ার্ড লুটনিক আশাবাদ প্রকাশ করে বলেন, 'রেয়ার আর্থের প্রবেশাধিকার নিয়ে উদ্বেগ দূর হবে।'

- রেয়ার আর্থে চীনের সুবিধা -

লাইসেন্স ইস্যু প্রক্রিয়া ধীর হয়ে যাওয়ায় আরও গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান উৎপাদন বন্ধের আশঙ্কায় পড়েছে।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, একটি 'দায়িত্বশীল বড় দেশ' হিসেবে কিছু সংখ্যক রপ্তানি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে তারা সংলাপ জোরদার করতে চায়।

তবে এই বোতলজাত পরিস্থিতি স্পষ্ট করেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র তার প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম তৈরিতে চীনের রেয়ার আর্থের ওপর কতটা নির্ভরশীল।

সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, একটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানে ৯০০ পাউন্ডের বেশি রেয়ার আর্থ ব্যবহৃত হয়।

গ্রেসলিন বাসকারান ও মেরিডিথ শোয়ার্জ লিখেছেন, 'খনন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ সক্ষমতা গড়ে তুলতে দীর্ঘমেয়াদি প্রচেষ্টা দরকার, ফলে যুক্তরাষ্ট্র আগামী কয়েক বছর পিছিয়েই থাকবে।'

- প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে যুক্তরাষ্ট্র -

এটি প্রথম নয়, চীন রেয়ার আর্থের সরবরাহ ব্যবস্থায় আধিপত্যকে কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে।

২০১০ সালে চীনা ট্রলার ও জাপানি কোস্টগার্ডের মধ্যে বিরোধপূর্ণ জলসীমায় সংঘর্ষের পর বেইজিং টোকিওতে রেয়ার আর্থ সরবরাহ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়।

জাপান পরে বিকল্প উৎসে বিনিয়োগ ও মজুদ বৃদ্ধির চেষ্টা করলেও সফলতা সীমিত।

ট্রিওলো বলেন, 'চীনের ওপর নির্ভরতা কমানো কতটা কঠিন, এটি তার স্পষ্ট উদাহরণ।' গত ১৫ বছরে জাপান সামান্য অগ্রগতি অর্জন করতে পেরেছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর ২০২৭ সালের মধ্যে দেশীয়ভাবে সম্পূর্ণ সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ‘মাইন-টু-ম্যাগনেট’ কৌশল গ্রহণ করেছে।

তবে চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো ভাগ্য—বিশ্বের সবচেয়ে বড় রেয়ার আর্থ মজুত রয়েছে চীনের মাটিতেই।

ইএনজি বিশ্লেষকদের ভাষ্য, 'খননযোগ্য মাত্রায় রেয়ার আর্থ পাওয়া অন্যান্য খনিজের তুলনায় অনেক কম, ফলে এর উত্তোলন অনেক ব্যয়বহুল।'

'এই জটিল ও ব্যয়বহুল প্রক্রিয়াই রেয়ার আর্থকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে,' তারা লিখেছেন। 'এটাই চীনকে শক্তিশালী আলোচক বানায়।'