শিরোনাম
ঢাকা, ১০ জুন, ২০২৫ (বাসস) : ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর বিরুদ্ধে চলমান অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার মামলায় এক সহ-অভিযুক্ত সোমবার আদালতে স্বীকার করেছেন যে ২০২২ সালের নির্বাচনে পরাজয়ের পর বলসোনারো ওই নির্বাচন ‘পুনরায় আয়োজনের’ একটি পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করেছিলেন।
ব্রাসিলিয়া থেকে এএফপি জানায়, ৭০ বছর বয়সী ডানপন্থী এ নেতার বিরুদ্ধে ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বামপন্থী প্রার্থী লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার বিজয় ঠেকাতে একটি ‘অপরাধী সংগঠন’ গড়ে তুলেছিলেন এবং ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার ষড়যন্ত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, মূলত সেনাবাহিনীর সমর্থন না পাওয়ায় পরিকল্পনাটি ব্যর্থ হয়।
সোমবার বলসোনারোসহ ছয় অভিযুক্ত সুপ্রিম কোর্টে হাজির হয়ে কয়েক দিনের শুনানির জন্য আদালতের মুখোমুখি হন। আরেকজন অভিযুক্ত কারাগার থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নেন।
শুনানির বিরতিতে বলসোনারো সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে কিছুই নেই, আমার বিবেক পরিষ্কার।’
এদিন সাধারণত দেশটির জাতীয় পতাকার রঙের টি-শার্টে দেখা গেলেও বলসোনারো কালো স্যুট পরেছিলেন। আদালতে তিনি মামলার বিচারক ও নিজের অন্যতম সমালোচক আলেক্সান্দ্রে দে মোরায়েসের মুখোমুখি বসেন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট মনোযোগ দিয়ে শুনানিতে অংশ নেন এবং মাঝেমধ্যে কিছু নোট নেন। এই সময় তার সাবেক ঘনিষ্ঠ সহকারী ও এখন রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী মাউরো সিদ বলেন, বলসোনারো একটি জরুরি অবস্থা জারির খসড়া ডিক্রি ‘গ্রহণ ও পাঠ’ করেছিলেন।
সিদ জানান, এই ডিক্রিতে নির্বাচনের ফল বাতিলের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল এবং কিছু কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করার কথাও বলা হয়েছিল। বলসোনারোর সম্পাদনায় সেই গ্রেপ্তারযোগ্য ব্যক্তির তালিকায় শুধু বিচারক মোরায়েসের নাম রাখা হয়—এই তথ্য শুনে আদালতে হাসাহাসিও হয়।
এছাড়া, সিদ সাক্ষ্য দেন যে, বলসোনারোর সাবেক সহ-প্রার্থী ও তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়াল্টার ব্রাগা নেটোর কাছ থেকে তিনি ওয়াইন বাক্সে ভরা নগদ অর্থ পেয়েছিলেন।
তদন্তকারীরা বলছেন, এই অর্থ ব্যবহারের উদ্দেশ্য ছিল বিশেষ বাহিনী দিয়ে লুলা, তার ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেরালদো আলকমিন এবং বিচারক মোরায়েসকে হত্যা করা।
২০২৬ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পুনরায় প্রার্থী হওয়ার আশা থাকলেও বলসোনারো বর্তমানে নির্বাচনের জন্য অযোগ্য ঘোষিত। তবে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আইন অনুযায়ী তিনি চুপ থাকার অধিকার রাখলেও বলসোনারো সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘আমি কোনো সমস্যা ছাড়াই জবাব দেব।’ ‘এটি
এই ক্যু প্রচেষ্টার বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলার দারুণ সুযোগ। আমি খুশি হবো, কারণ সত্যটা বলার সময় এসেছে।’
- ‘স্বৈরাচার’ -
ব্রাসিলিয়ার সুপ্রিম কোর্ট ভবনেই এ শুনানি হচ্ছে—যা ছিল ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে বলসোনারোর উগ্রপন্থী সমর্থকদের তাণ্ডবের লক্ষ্যবস্তু। সেই ঘটনায় তারা লুলাকে উৎখাত করতে সামরিক হস্তক্ষেপের দাবিতে সরকারি ভবনগুলোতে হামলা চালিয়েছিল।
সেসময় বলসোনারো দেশের বাইরে ছিলেন।
সোমবারের শুনানিকে অনেকেই বলসোনারোর পুরোনো সাথী ও নতুন ‘শত্রুদের’ সঙ্গে এক পুনর্মিলন হিসেবেই দেখছেন। তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যদাতা সিদকে অনেকেই ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে অভিহিত করছেন।
সিদের সাক্ষ্যের মাধ্যমে তদন্তকারীরা ক্যু প্রচেষ্টায় সম্পৃক্ত বিভিন্ন ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে পেরেছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ধার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
চার সাবেক মন্ত্রী, ব্রাজিলের নৌবাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধানদেরও চলমান শুনানিতে জবানবন্দি দেওয়ার কথা রয়েছে। আগামী শুক্রবারের মধ্যে সশরীরে সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব শেষ হওয়ার কথা। পুরো কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
মোরায়েসকেও বলসোনারো ‘স্বৈরাচারী’ বলে অভিহিত করেছেন।
- ঐতিহাসিক নজির -
সাও পাওলো রাজ্যের গভর্নর এবং বলসোনারোর সাবেক অবকাঠামোমন্ত্রী তারসিসিও দে ফ্রেইতাসের বাসভবনে বসে তিনি গত সপ্তাহান্তে তার আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষ্য প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।
পূর্ববর্তী এক প্রাথমিক শুনানিতে ফ্রেইতাস আদালতে বলেছিলেন, বলসোনারো কখনও কুপচেষ্টা নিয়ে আলোচনা করেননি।
তবে দেশটির দুই সাবেক সেনাপ্রধান আদালতে জানিয়েছেন, বলসোনারো একটি বৈঠকে জরুরি অবস্থা ঘোষণার মাধ্যমে লুলার বিজয় বাতিল করার বিষয়ে আলোচনা করেছিলেন।
গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ব্রাজিলে এটি কোনো ক্যু প্রচেষ্টার প্রথম বিচার। রায়ের আগে আরও নতুন সাক্ষী হাজির হতে পারেন।