বাসস
  ০৯ জুন ২০২৫, ১৫:৫৮

জাইর বলসোনারো : ব্রাজিলের উগ্র-ডানপন্থী নেতা ও ট্রাম্প ভক্ত

ঢাকা, ৯ জুন, ২০২৫ (বাসস) : জাইর বলসোনারো—এমন এক নেতা যিনি ভীষণভাবে বিভাজন সৃষ্টি করেছেন: তিনি ব্রাজিলের সাবেক সামরিক শাসনের প্রকাশ্য সমর্থক, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোরতর ভক্ত এবং, সবচেয়ে বিতর্কিতভাবে, সম্ভাব্য এক অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রকারী।

ব্রাসিলিয়া থেকে এএফপি জানায়, ৭০ বছর বয়সী এই উগ্র-ডানপন্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারো আজ বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ২০২২ সালের পুনঃনির্বাচনে ব্যর্থ হওয়ার পরেও ক্ষমতায় থাকার জন্য ষড়যন্ত্র করেছেন।

দোষী সাব্যস্ত হলে তার ৪০ বছরের বেশি কারাদণ্ড হতে পারে।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গুরুতর, গত এপ্রিল ও মে মাসে পেটের অস্ত্রোপচারের জন্য প্রায় তিন সপ্তাহ হাসপাতালে কাটালেও বলসোনারোর লড়াকু মনোভাবে এতটুকু চিড় ধরেনি।

সম্প্রতি তিনি বলেছেন, 'আমার শব্দভাণ্ডারে ‘ক্যু’ (অভ্যুত্থান) শব্দটি কখনও ছিল না।'

২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত চার বছর বলসোনারো ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, যা ছিল মহামারির বিশৃঙ্খলা ও গভীর রাজনৈতিক বিভাজনে পরিপূর্ণ এক শাসনকাল।

-ট্রাম্পের মতো প্রত্যাবর্তনের স্বপ্ন -

২০২২ সালের অক্টোবরে বামপন্থী নেতা লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার কাছে পরাজয়ের পর থেকে বলসোনারোর বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগে তদন্ত চলছে। ব্রাজিলের ইলেকট্রনিক ভোটিং ব্যবস্থা সম্পর্কে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে তিনি ২০৩০ সাল পর্যন্ত জনসেবা থেকে নিষিদ্ধ হয়েছেন।

তার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান সংক্রান্ত অভিযোগ এখন পর্যন্ত সবচেয়ে গুরুতর। অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি একটি ‘অপরাধী সংগঠনের’ নেতৃত্ব দিয়েছেন, যার লক্ষ্য ছিল যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকা।

যদি তিনি দোষী সাব্যস্ত হন, তার বাকি জীবন জেলেই কাটতে পারে।

আর যদি মুক্তি পান, তাহলে তিনি নিজের রাজনৈতিক আদর্শিক নায়ক ট্রাম্পের মতো প্রত্যাবর্তনের আশা করছেন।

-‘মেসিয়া’ বলসোনারো -

বলসোনারোর সমর্থকরা তাকে এমন একজন সোজাসাপ্টা মানুষ বলে মনে করেন, যিনি তথাকথিত রাজনৈতিক শুদ্ধাচারকে ঘৃণা করেন।

তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বামপন্থা, ‘জেন্ডার ভাবধারা’ ও তার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আলেক্সান্দ্রে দে মোরায়েসকে আক্রমণ করে ডানপন্থীদের উসকে দিতে সিদ্ধহস্ত।

তিনি ব্রাজিলের প্রভাবশালী ‘বাইবেলস, বুলেটস অ্যান্ড বিফ’ জোট—অর্থাৎ, ইভানজেলিক খ্রিষ্টান, নিরাপত্তা-কঠোরপন্থী ও কৃষি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর সমর্থন উপভোগ করেন।

বিভিন্ন মামলার মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও বলসোনারো ব্রাজিলের ডানপন্থার নিরঙ্কুশ নেতা, এবং কংগ্রেসে (যেখানে তিনি তিন দশক ধরে সংসদ সদস্য ছিলেন) তার প্রভাব এখনও যথেষ্ট।

সমর্থকদের চোখে তিনি দুর্নীতিপরায়ণ বামপন্থার বিরুদ্ধে এক প্রাচীর, আর সমালোচকদের মতে, তিনি বিপজ্জনক এক ফ্যাসিবাদী প্রবণতাসম্পন্ন জনতাবাদী নেতা।

২০১৮ সালের প্রচারণায় ছুরিকাঘাতের শিকার হন বলসোনারো, পরে হামলাকারীকে মানসিকভাবে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।

এই ঘটনা তার অনুসারীদের ‘মেসিয়া’ নামক উপাধি আরও পোক্ত করে—বলসোনারোর মধ্য নামই ‘মেসিয়াস’। তার সহজ জয় এবং নিজের ওপর হামলার তুলনা তিনি করেছেন ২০২৪ সালে ট্রাম্পের ওপর হওয়া হামলার সঙ্গে।

কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বলসোনারো প্রশাসন বেহাল ছিল। তিনি এই মহামারিকে ‘সাধারণ ফ্লু’ বলেছিলেন।

ফলে ব্রাজিলে প্রাণ হারায় ৭ লাখের বেশি মানুষ—যুক্তরাষ্ট্রের পর সর্বোচ্চ।

জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সন্দেহপ্রবণ বলসোনারো তার শাসনামলে আমাজন বনের ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন।

ক্ষমতা ছাড়ার পরেও বিতর্ক তার পিছু ছাড়েনি।

তিনি মেয়াদ শেষ হওয়ার দুদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় চলে যান। লুলার অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেননি।

এর এক সপ্তাহ পরই, তার সমর্থকেরা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ, কংগ্রেস এবং সুপ্রিম কোর্টে হামলা চালিয়ে লুলাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালায়।

এই স্বল্পস্থায়ী বিদ্রোহের পর অভিযোগ ওঠে, বলসোনারো এর পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন, এমনকি প্রতিদ্বন্দ্বী লুলাকে গ্রেপ্তার বা হত্যা করার পরিকল্পনা সম্পর্কেও তিনি জানতেন।

- ‘ওই নারী ধর্ষণের যোগ্য নয়’ -

বলসোনারোর জন্ম১৯৫৫ সালে ইতালীয় বংশোদ্ভূত এক ক্যাথলিক পরিবারে, তিনি সেনাবাহিনীতে ক্যাপ্টেন হিসেবে কর্মরত ছিলেন, ১৯৮৮ সালে রিও ডি জেনেইরোর সিটি কাউন্সিলর হয়ে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন।

তিনি ১৯৬৪-১৯৮৫ সালের সামরিক শাসনের প্রশংসাকারী ছিলেন, বলেছিলেন: 'ওদের ভুল ছিল শুধু এটুকু—তারা নির্যাতন করেছে, হত্যা করেনি।'

১৯৯০ সালে নিম্নকক্ষের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগ পর্যন্ত টানা সেখানেই ছিলে।

২০১১ সালে প্লেবয় ম্যাগাজিনকে তিনি বলেন, 'আমার ছেলেরা যদি সমকামী হয়, তাদের

বরং অপঘাতে মারা যাওয়া ভালো।'

২০১৪ সালে এক নারী সংসদ সদস্য সম্পর্কে বলেন, 'তাকে ধর্ষণের উপযুক্ত মনে করি না, সে খুবই কুৎসিত।'

তার দুবার বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে। তার পাঁচ সন্তানের মধ্যে চারজনই রাজনীতিক।

তার ছেলে এদুয়ার্দো ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান, ট্রাম্প প্রশাসনের কাছ থেকে সমর্থন আদায় এবং বিচারপতি মোরায়েসের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার জন্য লবিং করেন।

এর জবাবে মোরায়েস তার বিরুদ্ধে ‘বিচার ব্যাহত করার’ অভিযোগে তদন্তের নির্দেশ দেন।