শিরোনাম
ঢাকা, ৯ জুন, ২০২৫ (বাসস) : ব্রাজিলের সুপ্রিম কোর্টের কঠোর দৃষ্টিভঙ্গির বিচারপতি আলেক্সান্দ্রে দে মোরায়েস এখন দেশটির অন্যতম ক্ষমতাধর ও বিতর্কিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন।
ব্রাসিলিয়া থেকে এএফপি জানায়, ৫৬ বছর বয়সী এই বিচারপতির নজরে রয়েছেন কট্টর ডানপন্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারো, যিনি ২০২২ সালের অক্টোবরে পুনর্নির্বাচনে পরাজয়ের পরও ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে অভিযুক্ত।
অন্যদিকে প্রযুক্তি জায়ান্ট ইলন মাস্কের সঙ্গে দ্বন্দ্ব মোরায়েসকে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের নজরেও নিয়ে এসেছে। ওই প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, যারা মার্কিন নাগরিক বা বাসিন্দাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত পোস্টের কারণে হুমকিতে ফেলেন, তাদের ভিসা প্রত্যাখ্যান করা হতে পারে।
মোরায়েস মাস্কের মালিকানাধীন ‘এক্স’ নেটওয়ার্ককে ব্রাজিলে ৪০ দিন বন্ধ রাখার আদেশ দেন, কারণ এটি বলসোনারোর সমর্থকদের ছড়ানো ভুয়া তথ্য ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছিল। এক্স-এর বৃহত্তম বাজারগুলোর একটি হলো ব্রাজিল।
তৎক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়ায় মাস্ক ক্ষোভে ফেটে পড়ে মোরায়েসকে ‘একজন দানবীয় স্বৈরাচারী' বলে
আখ্যায়িত করেন, যিনি 'বিচারকের ছদ্মবেশে গণতন্ত্র ধ্বংসের চেষ্টা করছেন’।
বলসোনারোও মোরায়েসকে ‘স্বৈরশাসক’ বলে উল্লেখ করেন। আর তার ছেলে এদুয়ার্দো বলসোনারো, যিনি একজন এমপি, যুক্তরাষ্ট্রে ‘একনায়ক বিচারপতির’ বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার জন্য লবিং করেন।
এদুয়ার্দোর বিরুদ্ধে বিচারব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা তৈরির অভিযোগে তদন্তের নির্দেশ দেন মোরায়েস।
‘জানদাও’ নামে পরিচিত মোরায়েস এখন বিভক্ত ব্রাজিলের রাজনীতির কেন্দ্রস্থলে অবস্থান করছেন।
এই বিচারপতি আগে নির্বাচনী সর্বোচ্চ আদালত টিএসই-এর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি ডানপন্থীদের ঘৃণার পাত্র, যারা তার বিরুদ্ধে ‘সেন্সরশিপ’ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তোলে।
অন্যদিকে, মুই থাই অনুরাগী এই বিচারপতিকে অনেকে গণতন্ত্র রক্ষার মিশনে নিয়োজিত একজন নায়ক বলে মনে করেন। তবে মোরায়েসের পেছনের ইতিহাস দেখে তা বোঝা কঠিন ছিল।
তিনি একসময় সাও পাওলো রাজ্যের পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে কাজ করেছেন এবং পরে রাজ্য নিরাপত্তাবিষয়ক সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। কঠোর মনোভাবের জন্য তিনি তখন বামপন্থীদের সমালোচনার মুখে পড়েন। তারা অভিযোগ তোলে, তিনি সামাজিক আন্দোলন দমন করেছেন।
তিনি মধ্য-ডানপন্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট মিশেল তেমারের অধীনে বিচারমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৭ সালে তেমার তাকে সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগ দেন।
'তিনি একজন রাজনৈতিক প্রবৃত্তিসম্পন্ন মানুষ,' বলেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ আন্তোনিও কার্লোস দে ফ্রেইতাস। সুপ্রিম কোর্টের অভ্যন্তরীণরা তাকে একজন বাস্তববাদী হিসেবেই দেখেন।
তবে বলসোনারো ও মাস্কের বিরুদ্ধে তার কঠোর পদক্ষেপ তার দৃঢ় মনোভাবের প্রকাশ ঘটিয়েছে।
মোরায়েস বলসোনারোর বিরুদ্ধে একাধিক মামলার বিচার নিষ্পত্তি করেছেন এবং ‘ট্রপিক্সের ট্রাম্প’ নামে পরিচিত বলসোনারোকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য ঘোষণা করেছেন, কারণ তিনি নির্বাচনী ব্যবস্থাকে অবমাননার চেষ্টা করেছিলেন।
তবে বলসোনারোর রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের সবচেয়ে বড় হুমকি হলো কূপচেষ্টা তদন্ত।
৭০ বছর বয়সী সাবেক সেনা ক্যাপ্টেন বলসোনারো দোষী সাব্যস্ত হলে ৪০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ডের মুখে পড়তে পারেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি বামপন্থী প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা ক্ষমতায় আসতে বাধা দেওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করেছিলেন।
রাষ্ট্রপক্ষের মতে, সেই ষড়যন্ত্রে লুলা, তার ভাইস প্রেসিডেন্ট জেরালদো আলকমিন ও বিচারপতি মোরায়েসকে গ্রেপ্তার এমনকি হত্যা করার পরিকল্পনাও অন্তর্ভুক্ত ছিল।
২০২২ সালের উত্তপ্ত নির্বাচনকালে মোরায়েস ছিলেন সর্বব্যাপী এক চরিত্র। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নির্বাচনী ভুয়া তথ্য মোকাবেলায় আদালতের আদেশগুলো কঠোরভাবে প্রয়োগ করেন।
এর আওতায় কিছু ডানপন্থী বিশিষ্ট ব্যক্তির অ্যাকাউন্টও ব্লক করে দেওয়া হয়, যা মাস্কের সঙ্গে তার দ্বন্দ্বের একটি কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মাস্কের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি তার প্ল্যাটফর্মকে ডানপন্থী ষড়যন্ত্র তত্ত্বের জন্য মঞ্চে পরিণত করেছেন।
তিন সন্তানের জনক মোরায়েস খুব কম সাক্ষাৎকার দেন এবং তার এক মিলিয়ন অনুসারী থাকা এক্স অ্যাকাউন্টেও খুব একটা পোস্ট করতেন না। তিনি ফেব্রুয়ারিতে অ্যাকাউন্টটি বন্ধ করে দেন।
'মতপ্রকাশের স্বাধীনতা মানে কাউকে আক্রমণ করার স্বাধীনতা নয়,' তিনি একবার বলেছিলেন।
'এটি কোনোভাবেই স্বৈরশাসন সমর্থনের স্বাধীনতা নয়।'
ব্রাজিলে বিচারকদের অবসরের বাধ্যতামূলক বয়স ৭৫ বছর। সেই হিসেবে মোরায়েসের অবসরের এখনও দুই দশক বাকি। ইতোমধ্যে ভবিষ্যতের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবেও তার নাম শোনা যাচ্ছে। তবে তিনি নিজে কখনও এমন কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষার কথা বলেননি।