শিরোনাম
ঢাকা, ৯ জুন, ২০২৫ (বাসস) : ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর সঙ্গে দেশটির বেশ কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী ও সামরিক কর্মকর্তা ২০২২ সালের অক্টোবরের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভার বিজয়ের পর তাকে ক্ষমতায় আসতে বাধা দিতে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন।
ব্রাসিলিয়া থেকে এএফপি জানায়, বলসোনারোর মতোই তার সাতজন প্রধান সহঅভিযুক্ত আগামী সপ্তাহে ক্যু প্রচেষ্টা মামলায় আদালতের মুখোমুখি হবেন। দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের প্রত্যেকের ৪০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
ঘনিষ্ঠ সহকারী
লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাউরো সিড এক সময় বলসোনারোর ডানহাত হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনিই এই মামলায় মূল অভিযুক্তদের একজন, আবার প্রসিকিউশনের প্রধান সাক্ষীও। দোষী সাব্যস্ত হলে স্বীকারোক্তির বিনিময়ে তার সাজা লঘু হতে পারে।
প্রসিকিউটরদের মতে, ৪৬ বছর বয়সী সিড ২০২২ সালের নির্বাচনে কথিত জালিয়াতির প্রমাণ সংগ্রহের দায়িত্বে ছিলেন এবং এ কাজে হ্যাকারদের সহায়তা নিয়েছিলেন।
তার ফোনে এমন একটি ভাষণ খুঁজে পান তদন্তকারীরা, যা বলসোনারো ক্ষমতা দখলের পর পড়ার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন বলে অভিযোগ।
সিড অন্যান্য ষড়যন্ত্রকারীর কাছে বলসোনারোর বার্তা পৌঁছে দেওয়ার কাজেও যুক্ত ছিলেন।
সহপ্রার্থী
জেনারেল ওয়ালটার ব্রাগা নেত্তো ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বলসোনারোর সহপ্রার্থী ছিলেন এবং এর আগে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।
৬৮ বছর বয়সী নেত্তো ব্রাজিলের ১৯৬৪-৮৫ সামরিক শাসনের প্রতি অনুরাগ প্রকাশ করেছেন বহুবার।
তিনি ষড়যন্ত্রের অন্যতম নেতার ভূমিকায় ছিলেন বলে অভিযোগ। অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘সবুজ-হলুদ খঞ্জর’ নামে একটি পরিকল্পনায় তিনি লুলা, তার ভাইস-প্রেসিডেন্ট ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আলেক্সান্দ্রে দে মোরায়েসকে হত্যার ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিলেন।
তদন্ত কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে তাকে গত ডিসেম্বরে গ্রেপ্তার করা হয়। কারাগার থেকেই ভিডিও লিংকে তিনি সাক্ষ্য দেবেন।
সামরিক প্রশিক্ষক
৭৭ বছর বয়সী জেনারেল অগুস্তো হেলেনো রিবেইরো ১৯৭০-এর দশকে বলসোনারোর সামরিক প্রশিক্ষক ছিলেন। পরে তিনি বলসোনারোর নিরাপত্তাবিষয়ক সচিবের দায়িত্ব পালন করেন এবং গোয়েন্দা তৎপরতা সমন্বয় করতেন।
তিনি ব্রাজিলের প্যারিস দূতাবাসে সামরিক উপদেষ্টা ও জাতিসংঘের হাইতি শান্তিরক্ষা মিশনের (মিনুসতা) প্রধান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।
প্রসিকিউটরদের মতে, তিনি ব্রাজিলের ইলেকট্রনিক ভোটিং ব্যবস্থার বিরুদ্ধে সন্দেহ ছড়ানোর পিছনে অন্যতম উস্কানিদাতা ছিলেন, যার মাধ্যমে জনমনে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করা হয়।
‘ডিক্রি রক্ষক’
অ্যান্ডারসন তোর্সেস বলসোনারোর সরকারের আইনমন্ত্রী ছিলেন। লুলা দায়িত্ব নেওয়ার এক সপ্তাহ পর ব্রাসিলিয়ায় বলসোনারো-সমর্থকদের সশস্ত্র হামলার সময় তিনি অস্থায়ী নিরাপত্তা প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন।
তার বাসায় পুলিশ একটি খসড়া ডিক্রি খুঁজে পায়, যেখানে নির্বাচনের ফল বাতিল করার প্রস্তাব ছিল।
রাজনৈতিক হেভিওয়েট
৬৬ বছর বয়সী জেনারেল পাওলো সের্জিও নোগুয়েরা বলসোনারোর সরকারের শেষ দিকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী ছিলেন।
তিনি এমন একটি বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ, যেখানে বলসোনারো ও অন্যরা জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করে সামরিক হস্তক্ষেপের পরিকল্পনা করেন।
চার্জশিটে বলা হয়েছে, তার সম্মতিই প্রেসিডেন্টকে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বোচ্চ রাজনৈতিক সমর্থন দিয়েছিল, যদিও সামরিক বাহিনীর শীর্ষ পর্যায় শেষ পর্যন্ত ওই পরিকল্পনায় রাজি হয়নি।
নৌবাহিনীর কর্মকর্তা
৬৪ বছর বয়সী অ্যাডমিরাল আলমির গার্নিয়ের সান্তোস ২০২১ সালে বলসোনারো তাকে ব্রাজিলীয় নৌবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেন।
প্রসিকিউটররা জানিয়েছেন, তিনি ২০২২ সালে দুটি বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন, যেখানে কুপচেষ্টা নিয়ে আলোচনা হয়।
সেখানে তিনি বলসোনারোকে জানান যে ‘নৌবাহিনী প্রেসিডেন্টের নির্দেশে প্রস্তুত থাকবে’।
এই তথ্য প্রকাশ করেন তৎকালীন বিমানবাহিনী প্রধান কার্লোস দে আলমেইদা ব্যাপতিস্তা জুনিয়র, যিনি ওই পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন।
গোয়েন্দা প্রধান
৫৩ বছর বয়সী আলেক্সান্দ্রে রামাগেম এক সময় পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন এবং বলসোনারোর আমলে ব্রাজিলের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা এবিআইএনের প্রধান ছিলেন। বর্তমানে তিনি একজন কংগ্রেসম্যান।
তাকে বলসোনারোর বিরোধীদের বিরুদ্ধে সামাজিক মাধ্যমে ভুয়া তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই কাজে পুলিশ ও গোয়েন্দা সদস্যদের একটি ‘সমান্তরাল’ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়েছিল বলে অভিযোগ।