শিরোনাম
ঢাকা, ৯ জুন, ২০২৫ (বাসস): চীনের রপ্তানি মে মাসে প্রত্যাশার চেয়ে ধীরগতিতে বেড়েছে। সোমবার প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যানে এই তথ্য জানা গেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের চাপানো নতুন শুল্কের ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক বাণিজ্য অস্থিরতার মধ্যে চীনের মে মাসের রপ্তানি প্রত্যাশার তুলনায় ধীরগতিতে বেড়েছে। সোমবার প্রকাশিত সরকারি তথ্য থেকে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়া এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধির ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক বাণিজ্য অস্থিরতার কারণে এই পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
বেইজিং থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী চীনের আমদানিও আশঙ্কার চেয়েও বেশি হ্রাস পেয়েছে। যা অভ্যন্তরীণ ভোক্তা ব্যয়ের দুর্বলতাকে স্পষ্ট করেছে। এরআগে সোমবার প্রকাশিত ভোক্তা মূল্যসূচক সম্পর্কিত ডেটাও তা তুলে ধরা হয়েছে।
গত মে মাসে চীনের রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় ৪ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে, যা এপ্রিলের তুলনায় কিছুটা উন্নত হলেও ব্লুমবার্গের অর্থনীতিবিদদের ৬ শতাংশ হ্রাসের পূর্বাভাসের চেয়ে খারাপ।
এই পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি এপ্রিলের তুলনায় ১২ দশমিক ৭ শতাংশ কমে গেছে, যেখানে ট্রাম্প ওই সময় চীনের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করেন। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি ১৭ দশমিক ৯ শতাংশ কমেছে। কারণ, বেইজিং পাল্টা শুল্ক ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
মে মাসে চীনের মোট রপ্তানি আগের বছরের তুলনায় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ হ্রাস পায়।
অন্যদিকে, ভিয়েতনামে রপ্তানি কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর ও ইন্দোনেশিয়াসহ অন্যান্য দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশে রপ্তানি সামান্য হ্রাস পেয়েছে।
পিনপয়েন্ট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ ঝিভেই ঝ্যাং বলেছেন, ‘চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হঠাৎ হ্রাস পেলেও অন্য দেশগুলোর প্রতি রপ্তানি বৃদ্ধির ফলে এই ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে ওঠা গেছে।’
তবে তিনি আরো বলেছেন, ‘বর্তমানে বাণিজ্য পরিস্থিতি অত্যন্ত অনিশ্চিত। ‘ফ্রন্টলোডিং’ অর্থাৎ ভবিষ্যতের সম্ভাব্য উচ্চ শুল্ক এড়াতে আগভাগেই পণ্য পাঠানোর প্রবণতা এর একটি প্রভাব।’
সোমবার প্রকাশিত তথ্যে চীনের অর্থনীতির গতি নিয়ে আরো উদ্বেগ যোগ করেছে। চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো (এনবিএস) জানায়, মে মাসে মুদ্রাস্ফীতির একটি প্রধান পরিমাপক ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) বছরের ব্যবধানে ০.১ শতাংশ কমেছে।
এটি প্রত্যাশার চেয়ে ভালো হলেও টানা চতুর্থ মাসের জন্য মূল্যহ্রাসের ইঙ্গিত দেয়। কোভিড-পরবর্তী সময়ে চীনের ভোক্তা চাহিদা পুনরুদ্ধারে ব্যর্থতা সরকারকে তার প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ করতে পারে এবং ট্রাম্পের শুল্ক চাপ থেকে অর্থনীতিকে রক্ষা করাও কঠিন হয়ে পড়ে।
মূল্যহ্রাস বা ডিফ্লেশন মানে পণ্যের দাম কমছে, যা সাধারণত ভবিষ্যতে আরো দাম কমার আশায় ভোক্তাদের কেনাকাটা বিলম্বিত করতে বাধ্য করে। এর ফলে উৎপাদন ও নিয়োগ কমে যায় এবং কোম্পানিগুলো ক্ষতির মুখে পড়ে।
এমন প্রেক্ষাপটে জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো আরো জানায়, মে মাসে উৎপাদক মূল্যসূচক (পিপিআই) ৩.৩ শতাংশ কমেছে। যা এপ্রিলের ২.৭ শতাংশ হ্রাস এবং ব্লুমবার্গ জরিপের ৩.২ শতাংশ পূর্বাভাসের তুলনায় বেশি।
এদিকে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিতীয় দফা উচ্চপর্যায়ের বাণিজ্য আলোচনা সোমবার লন্ডনে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বিশ্লেষকরা আশা করছেন, এতে দু’দেশের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমিত হবে।
আলোচনার মূল ইস্যুগুলোর একটি হবে চীনের বিরল খনিজ রপ্তানি, যা ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যাটারিসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিপণ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং দীর্ঘদিন ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।
সোমবার প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, চীন মে মাসে ১৭টি খনিজ রপ্তানি করেছে ৫,৮৬৫ টন, যা এপ্রিলের ৪,৭৮৫ টনের তুলনায় বেশি।
এই লন্ডন বৈঠক হবে এপ্রিলে ট্রাম্প তার শুল্ক যুদ্ধের শুরুর পর থেকে দ্বিতীয় দফা আনুষ্ঠানিক বৈঠক। বৈঠকটি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং এবং ট্রাম্পের মধ্যে ফোনালাপের পর ঘোষণা করা হয়। যেটিকে ট্রাম্প ‘খুব ভালো’ বলে উল্লেখ করেছিলেন।
এর আগে মে মাসের মাঝামাঝিতে জেনেভায় অনুষ্ঠিত প্রথম দফার আলোচনায় দ্বিপক্ষীয় শুল্ক কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হলেও পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য চুক্তি হয়নি।