বাসস
  ০৭ জুন ২০২৫, ১৩:২১

যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসনবিরোধী অভিযান জোরদার

ঢাকা, ৭ জুন, ২০২৫ (বাসস) : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অবৈধ অভিবাসনবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে শুক্রবার লস অ্যাঞ্জেলেসে মুখোশধারী ও সশস্ত্র ফেডারেল এজেন্টরা ব্যাপক তল্লাশি অভিযান চালিয়েছে। একই দিন নিউইয়র্কের একটি আদালত চত্বর থেকে কয়েকজন অভিবাসীকে আটক করা হয়।

লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে এএফপি জানায়, বিশ্বের অন্যতম বৈচিত্র্যময় এই দুই শহরের আদালত চত্বর থেকে শুরু করে হার্ডওয়্যার দোকানের পার্কিং লট পর্যন্ত—নির্বিচারে অভিবাসীদের হাতকড়া পরিয়ে চিহ্নবিহীন গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়েছে।

লস অ্যাঞ্জেলেসের অন্তত তিনটি এলাকায় নজিরবিহীনভাবে অভিযান চালিয়ে ডজনখানেক মানুষকে আটক করে এজেন্টরা।

লস অ্যাঞ্জেলেস সিটি হল থেকে মাত্র দুই মাইল দূরের এক অভিযানে, জনতা ক্ষোভে ফেটে পড়লে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ‘ফ্ল্যাশুব্যাং গ্রেনেড’ ছুড়ে মারে এজেন্টরা। তারা যখন অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই)-এর গাড়ি বহরের পাশে প্রতিবাদ করছিল, তখন তাদের লক্ষ্য করে ডিম ছোড়া হয় এবং বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যম।

আতঙ্কের রাজনীতি

লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র ক্যারেন ব্যাস বলেন, 'আমি এমন এক শহরের মেয়র যেখানে অভিবাসীরা আমাদের সমাজে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। আজকের ঘটনার কারণে আমি গভীরভাবে ক্ষুব্ধ। এসব পদ্ধতি আমাদের সমাজে আতঙ্ক ছড়ায় এবং নিরাপত্তার মৌলিক নীতিগুলোকে ভঙ্গ করে।'

তবে হোয়াইট হাউসের ডেপুটি চিফ অব স্টাফ স্টিফেন মিলার, যিনি লস অ্যাঞ্জেলেসের সান্তা মনিকায় বড় হয়েছেন, এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে বলেন, 'ক্যারেন ব্যাসের এতে কোনো বক্তব্যের অধিকার নেই। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আইন সর্বোচ্চ, এবং তা প্রয়োগ হবেই।'

লস অ্যাঞ্জেলেসে আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ছিলেন সার্ভিস এমপ্লয়িজ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়নের নেতা ডেভিড হুয়েরতা। পরে মুক্তি পাওয়ার পর এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, 'পরিশ্রমী মানুষদের, আমাদের পরিবারের সদস্যদের, আমাদের সমাজের সদস্যদের সঙ্গে অপরাধীর মতো আচরণ করা হচ্ছে।'

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ইনভেস্টিগেশনসের মুখপাত্র ইয়াসমিন পিটস ও’কিফ ‘লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস’কে বলেন, এজেন্টরা যেসব বাসায় অনুপ্রবেশ করেছেন, সেগুলোর বিরুদ্ধে দেশে অবৈধভাবে অবস্থানরতদের লুকিয়ে রাখার অভিযোগে সার্চ ওয়ারেন্ট জারি হয়েছিল।

সূর্যাস্তের পর, স্থানীয় সংবাদমাধ্যম এবিসি৭ জানায়, ডজনখানেক বিক্ষোভকারী আটক ব্যক্তিদের মুক্তির দাবিতে ডাউনটাউনে রাস্তায় নেমে আসে। পুলিশ দাঙ্গা প্রতিরোধী পোশাকে এসে তাদের ছত্রভঙ্গ হওয়ার নির্দেশ দেয়।

নিউইয়র্ক আদালত চত্বরে ধরপাকড়

দেশের অপর প্রান্তে, নিউইয়র্ক শহরের একটি আদালত ভবনের হলওয়েতে শুক্রবার সাদা পোশাকে দুই অভিবাসীকে গ্রেপ্তার করে মার্কিন এজেন্টরা।

এএফপি’র প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এজেন্টরা চিৎকার করে ওই দুই ব্যক্তিকে নড়াচড়া করতে নিষেধ করেন, এরপর তাদের মাটিতে চিৎ করে শুইয়ে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

ঠিক কী কারণে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি।

ট্রাম্প তার দ্বিতীয় মেয়াদে অভিবাসনবিরোধী কঠোর অবস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েই নির্বাচিত হয়েছেন। সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আদালতের ভেতরেুবাইরে আইসিই এজেন্টদের তৎপরতা বেড়েছে।

চলতি বছরের জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণের পর ট্রাম্প প্রশাসন আদালতের মতো ‘নিরাপদ এলাকাগুলোতে’ এজেন্টদের প্রবেশ সীমিত করে রাখা আগের নীতিমালা বাতিল করেছে।

নিউইয়র্কে আটক দুজনের মধ্যে একজন ৩৪ বছর বয়সী ডোমিনিকান নাগরিক জোয়াকিন রোসারিও। তিনি এক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে এসে প্রবেশের সময় নিজেকে নিবন্ধন করেন এবং শুক্রবার ছিল তার প্রথম অভিবাসন শুনানি। এক আত্মীয় জুলিয়ান রোসারিও জানান, 'তিনি একেবারে নির্ভার ছিলেন। ভাবেননি যে এমন কিছু হতে পারে। এমনকি তিনি তার আইনজীবীকেও সঙ্গে আনেননি।'

আরেকজন আটক ব্যক্তিকে দেখতে এশীয় বংশোদ্ভূত বলে মনে হচ্ছিল। তিনি কেবল একটি অভিবাসন অধিকার কর্মী গোষ্ঠীর এক স্বেচ্ছাসেবীর সঙ্গে আদালতে এসেছিলেন। তিনি অভিবাসীদের আদালত পর্যন্ত আসাুযাওয়ায় সহায়তা করেন।

এই দুই ব্যক্তিকে এজেন্টরা যখন ধরে, তখন ওই স্বেচ্ছাসেবীরা চিৎকার করলেও তা থামাতে পারেননি।

‘অ্যালার্ম বাজাতে হবে’

মানবাধিকার সংস্থাগুলো এই ঘটনাগুলোতে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলছে, এর ফলে আদালতের ওপর মানুষের আস্থা কমছে এবং অভিবাসন প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে আগ্রহীরা এখন আদালতে যেতেও ভয় পাচ্ছেন।

আদালতের এক কর্মী কারেন অর্টিজ, যিনি নিজেও বিক্ষোভে অংশ নিচ্ছিলেন, বলেন, 'এগুলো বেআইনি অপহরণ। আমাদের এখনই সতর্কতা ঘণ্টা বাজাতে হবে। এসবের ভয়াবহতা মানুষকে বোঝানোর একটি উপায় হচ্ছে—আমরা সরাসরি মুখোশধারী আইসিই এজেন্ট আর তাদের টার্গেটের মাঝে দাঁড়িয়ে যাই।'

ক্ষমতায় ফেরার পর ট্রাম্প নির্বিচারে নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছেন। তিনি যুক্তি দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে অপরাধী ও ‘অবাঞ্ছিত’ লোকজন ‘আক্রমণ’ চালাচ্ছে।