বাসস
  ০৬ জুন ২০২৫, ১৪:৫৮

যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে আফ্রিকার সাতটি দেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা ট্রাম্পের

ঢাকা, ৬ জুন, ২০২৫ (বাসস) : শাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, নিরক্ষীয় গিনি, ইরিত্রিয়া, লিবিয়া, সোমালিয়া এবং সুদানের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কের ক্ষেত্রে মারাত্মক অবনতি ঘটবে।

সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকি এবং ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই অবস্থানের প্রবণতার কথা উল্লেখ করে সাতটি আফ্রিকান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

৯ জুন থেকে, শাদ, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, নিরক্ষীয় গিনি, ইরিত্রিয়া, লিবিয়া, সোমালিয়া এবং সুদানের নাগরিকদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ নিষিদ্ধ করা হবে। বিশ্বব্যাপী এই নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি ১২টি দেশের তালিকার মধ্যে আফ্রিকার ৭ দেশ একটি অংশ।

বুরুন্ডি, সিয়েরা লিওন এবং টোগো বিশ্বব্যাপী আংশিক বিধিনিষেধের শিকার সাতটি দেশের মধ্যে রয়েছে।

দেশগুলোকে এই তালিকাভুক্ত করার কারণগুলো  প্রেসিডেন্টের ঘোষণাপত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে , যেখানে নিরক্ষীয় গিনি এবং কঙ্গো প্রজাতন্ত্রের মতো দেশগুলোর জন্য ভিসার মেয়াদোত্তীর্ণ এবং সোমালিয়া ও লিবিয়ার মতো দেশগুলো থেকে উদ্ভূত সন্ত্রাসী উদ্বেগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ট্রুথ সোশ্যাল প্ল্যাটফর্মে একটি ভিডিওতে বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর তত্ত্বাবধানে ‘উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলগুলোর বিশ্লেষণে লক্ষ্যবস্তুভুক্ত দেশগুলোতে ‘সন্ত্রাসীদের ব্যাপক উপস্থিতি, ভিসা সুরক্ষায় সহযোগিতা করতে ব্যর্থতা, ভ্রমণকারীদের পরিচয় যাচাই করতে অক্ষমতা, অপরাধমূলক ইতিহাসের অপর্যাপ্ত রেকর্ড রাখা এবং অবৈধ ভিসা ওভার-স্টে এবং অন্যান্য বিষয়গুলোর ক্রমাগত উচ্চ হার’ পাওয়া গেছে।

তিনি বলেছেন,  ‘কলোরাডোর বোল্ডারে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলা আমাদের দেশে প্রবেশের ফলে যে চরম বিপদের সৃষ্টি হয়েছে তা তুলে ধরেছে, যাদের সঠিকভাবে যাচাই করা হয়নি, সেইসাথে যারা এখানে অস্থায়ী দর্শনার্থী হিসেবে আসেন এবং ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও এখানে থাকেন - আমরা তাদের চাই না ।
ট্রাম্প বলেছেন,  প্রযোজ্য বিধিনিষেধের শর্ত ‘উদ্ভূত হুমকির তীব্রতার ওপর নির্ভর করে’ এবং বলেছেন, ‘বস্তুগত উন্নতি করা হয়েছে কিনা’ তার ওপর ভিত্তি করে তালিকাটি সংশোধন করা হবে।

সোমালিয়া  জোর দিয়ে বলেছে, তারা ট্রাম্পের নিরাপত্তা উদ্বেগের বিষয়ে তার সাথে কাজ করতে প্রস্তুত। থচ মার্কিন সরকার যাকে ‘সন্ত্রাসীদের নিরাপদ স্বর্গ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে সোমালি রাষ্ট্রদূত দাহির হাসান আবদি এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘সোমালিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তার দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ককে মূল্য দেয় এবং উত্থাপিত উদ্বেগগুলো সমাধানের জন্য সংলাপে অংশ নিতে প্রস্তুত।’

এই পদক্ষেপটি ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে আফ্রিকা এবং অন্যান্য স্থানের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে প্রবর্তিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার একটি বিস্তৃত রূপ।

ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছেন, এই নিষেধাজ্ঞাগুলো ‘আমাদের সবচেয়ে সফল নীতিগুলোর মধ্যে একটি’ এবং মার্কিন মাটিতে সন্ত্রাসী হামলা প্রতিরোধ করেছে।

মার্কিন-আফ্রিকা সম্পর্কের উপর আরও চাপ

কিন্তু এই পদক্ষেপ আফ্রিকার সাথে মার্কিন সম্পর্কের আরো অবনতি ঘটাচ্ছে।

এক বিবৃতিতে, আফ্রিকান ইউনিয়ন কমিশন বলেছে, তারা ‘সম্মানজনকভাবে মার্কিন প্রশাসনকে আরো পরামর্শমূলক পদ্ধতি গ্রহণের কথা বিবেচনা করার এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সাথে গঠনমূলক সংলাপে বসার আহ্বান জানিয়েছে।’

আফ্রিকান ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থাটি বলেছে, ‘এই ধরনের পদক্ষেপের ফলে মানুষে মানুষে সম্পর্ক, শিক্ষাগত বিনিময়, বাণিজ্যিক সম্পৃক্ততা এবং কয়েক দশক ধরে যত্ন সহকারে লালিত বৃহত্তর কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে তারা উদ্বিগ্ন। শান্তি, সমৃদ্ধি এবং বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা প্রচারে আফ্রিকা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পারস্পরিক স্বার্থ ভাগ করে নেয়।’

এতে বলা হয়েছে, ‘সকল জাতির তাদের সীমান্ত রক্ষা এবং তাদের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সার্বভৌম অধিকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার পাশাপাশি, আফ্রিকান ইউনিয়ন কমিশন সম্মানের সাথে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আবেদন করছে, তারা এই অধিকারটি এমনভাবে প্রয়োগ করুক যা ভারসাম্যপূর্ণ, প্রমাণ-ভিত্তিক এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং আফ্রিকার মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী অংশীদারিত্বের প্রতিফলন ঘটায়।’

এপ্রিল মাসে, ট্রাম্প  তার ‘মুক্তি দিবস’ উপলক্ষে মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্কের পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি আফ্রিকান দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করেছিলেন। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো হল লেসোথো, যাদের পণ্যের ওপর ৫০শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে; মাদাগাস্কার (৪৭শতাংশ); এবং মরিশাস (৪০শতাংশ)। পরবর্তী আলোচনার জন্য তিন মাসের জন্য এই শুল্ক এবং অন্যান্য শুল্ক ১০শতাংশ সার্বজনীন শুল্কে নামিয়ে আনা হয়েছে। তবে আফ্রিকান দেশগুলো  শুল্ক ব্যবস্থার প্রভাব এবং আফ্রিকা এবং চীনের মতো তার প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারদের ওপর সম্ভাব্য প্রভাবের আশঙ্কা করছে।

মে মাসে ওভাল অফিসে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার ওপর ট্রাম্পের হাই-প্রোফাইল আক্রমণ,  যেখানে তিনি দেশে ‘শ্বেতাঙ্গ গণহত্যা’ সম্পর্কে কুখ্যাত তত্ত্বগুলো তুলে ধরেছিলে। এরফলে সম্পর্কে আরো টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে।