বাসস
  ০৫ জুন ২০২৫, ১৩:৩৩

গাজা যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে ভেটো যুক্তরাষ্ট্রের

ঢাকা, ৫ জুন, ২০২৫(বাসস): জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে নিঃশর্ত গাজা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। স্থায়ী পাঁচটি সদস্য রাষ্ট্রের সকলেই ‘তাৎক্ষণিক, নিঃশর্ত এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির’ পক্ষে ভোট দিয়েছে। গাজায় ‘তাৎক্ষণিক, নিঃশর্ত এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির’ আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছেমার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল ৪ জুন বুধবার এই ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৫ সদস্যের স্থায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে একমাত্র যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া পরিষদের বাকি ১৪টি দেশ পক্ষে ভোট দিয়েছে। 

‘দ্য গার্ডিয়ানের’ একটি প্রতিবেদনে এই খবর জানা গেছে।

ভেটো দেওয়া প্রস্তাবে গাজার পরিস্থিতিকে ‘বিপর্যয়কর’ বলেও অভিহিত করা হয়েছে এবং ‘গাজায় মানবিক সাহায্য প্রবেশ এবং জাতিসংঘ এবং মানবিক অংশীদারদের দ্বারা এর নিরাপদ ও নিরবচ্ছিন্ন বিতরণের ওপর সমস্ত নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে এবং নিঃশর্তভাবে তুলে নেওয়ার’ দাবি করা হয়েছে। ইসরাইলকে রক্ষা করার জন্য এটি পঞ্চমবারের মতো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা পরিষদের খসড়া যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে। বাইডেন প্রশাসনের অধীনে নভেম্বরে ওয়াশিংটন একই ধরণের একটি প্রস্তাব ভেটো দিয়েছিল। কারণ, যুদ্ধবিরতির দাবি হামাস কর্তৃক আটক সকল জিম্মির তাৎক্ষণিক এবং নিঃশর্ত মুক্তির সাথে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। আলজেরিয়া, ডেনমার্ক, গ্রীস, গায়ানা, পাকিস্তান, পানামা, দক্ষিণ কোরিয়া, সিয়েরা লিওন, স্লোভেনিয়া এবং সোমালিয়া এই প্রস্তাবের সহ-স্পন্সর করেছিল। রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্যও পক্ষে ভোট দিয়েছে। 

জাতিসংঘে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জেরোম বোনাফন্ট বলেছেন, ‘আমাদের বেশিরভাগই একই দৃষ্টিভঙ্গিতে একত্রিত হচ্ছে বলে মনে হলেও কাউন্সিলকে তার দায়িত্ব পালন করতে বাধা দেওয়া হয়েছিল।’ 

নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভূটির পর মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘আজ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাজায় ইসরাইলকে লক্ষ্য করে একটি প্রতিকূল জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবে ভেটো দিয়ে একটি শক্তিশালী বার্তা পাঠিয়েছে।’  

তিনি বলেছেন, ওয়াশিংটন এমন কোনো প্রস্তাবকে সমর্থন করবে না যা ‘ইসরাইল এবং হামাসের মধ্যে মিথ্যা সমতা তৈরি করে অথবা ইসরাইলের আত্মরক্ষার অধিকারকে অবজ্ঞা করে।’ ‘যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘে ইসরাইলের সাথে থাকবে।’ ইসরাইল ও মার্কিন ভেটোকে স্বাগত জানিয়েছে। 

ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সার এক্সে এক বার্তায় লিখেছেন, ‘জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে এই একতরফা প্রস্তাবে ইসরাইলের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়ানোর জন্য এবং ভেটো দেওয়ার জন্য আমি এবং মার্কিন প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।’ ‘প্রস্তাবিত প্রস্তাবটি কেবল হামাসকে শক্তিশালী করে এবং জিম্মি চুক্তি অর্জনের জন্য আমেরিকান প্রচেষ্টাকে দুর্বল করে।’ 

যুক্তরাজ্য এই প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে। এক বিবৃতিতে যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত বারবারা উডওয়ার্ড ইসরাইলের নতুন সাহায্য ব্যবস্থাকে ‘অমানবিক’ বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন, ইসরাইলের ‘এখনই সাহায্যের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞাগুলো তুলে নেয়া উচিত।’ 

তিনি বলেছেন, ‘গাজায় সামরিক অভিযান সম্প্রসারণ এবং সাহায্য কঠোরভাবে সীমিত করার ইসরাইলি সরকারের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক, অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং বিপরীতমুখী’। ‘এবং যুক্তরাজ্য তাদের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করে।’

নিরাপত্তা পরিষদের অন্যান্য সদস্যরা ভেটো দেওয়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করেছেন। জাতিসংঘে পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ব্যর্থ প্রস্তাবটি ‘এই পরিষদের বিবেকের ওপর কেবল একটি নৈতিক দাগই থাকবে না, বরং রাজনৈতিক প্রয়োগের একটি দুর্ভাগ্যজনক মুহূর্ত যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে প্রতিধ্বনিত হবে।’ 

জাতিসংঘে চীনের রাষ্ট্রদূত ফু কং বলেছেন, ‘আজকের ভোটের ফলাফল আবারও প্রকাশ করে যে গাজায় সংঘাত নিরসনে কাউন্সিলের অক্ষমতার মূল কারণ হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বার বার বাধা।’ দীর্ঘ সময় ধরে সাহায্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং মার্কিন ও ইসরাইলি সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) নামক একটি প্রকল্পের অস্থির বাস্তবায়নের পর জাতিসংঘ এবং সাহায্য সংস্থাগুলো গাজায় দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি সম্পর্কে সতর্ক করার পর এই প্রস্তাবটি ভোটের জন্য উত্থাপন করা হয়েছিল। রাফায় মানবিক সাহায্য গ্রহণের জন্য জড়ো হওয়া ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি বাহিনী গুলি চালানোর ঘটনায় প্রাণ গেছে বিপুল সংখ্যাক লোকের। গাজার নাসের হাসপাতালে একজন আহত মেয়েকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। 

বুধবার জাতিসংঘের ত্রাণ প্রধান টম ফ্লেচার বলেছেন, ‘গাজার একটি খাদ্য কেন্দ্রে ফিলিস্তিনিদের হত্যা সম্পর্কে আমরা যা জানি ‘বিশ্ব দিনের পর দিন দেখছে, ফিলিস্তিনিদের খাওয়ার চেষ্টা করার সময় গুলি করা, আহত করা বা হত্যা করার ভয়াবহ দৃশ্য’। রাজনৈতিক সমর্থন এবং তহবিলের অস্পষ্টতা রয়েছে এমন জিএইচএফ ঘোষণা করেছে  বৃহস্পতিবার সকালে গাজায় তাদের বিতরণ কেন্দ্রগুলো দ্বিতীয় দিনের জন্য বন্ধ থাকবে। মঙ্গলবার জিএইচএফ বিতরণ কেন্দ্রে খাবারের জন্য অপেক্ষা করার সময় ইসরাইলি গুলিতে কমপক্ষে ২৭ জন নিহত এবং শত শত আহত হয়েছে। 

জাতিসংঘে যুক্তরাজ্যের স্থায়ী প্রতিনিধি উডওয়ার্ড জানিয়েছেন, ‘জাতিসংঘের পক্ষ থেকে ‘এই ঘটনাগুলোর অবিলম্বে স্বাধীন তদন্ত এবং অপরাধীদের জবাবদিহি করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

এদিকে, গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ১শ’ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি মানবিক সহায়তা প্রবেশ প্রায় পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে।