ঢাকা, ৫ জুন, ২০২৫ (বাসস) : দশ লাখেরও বেশি হজযাত্রী প্রখর রোদের নিচে ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন বুধবার।

গত বছরের তীব্র গরমে ১ হাজারেরও বেশি মৃত্যু এড়াতে সৌদি আয়োজকরা হজ শুরু করেছেন।

তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) ছাড়িয়ে যাওয়ার সাথে সাথে পোশাক পরিহিত হজযাত্রীরা ধীরে ধীরে কাবা প্রদক্ষিণ করেছেন। যা মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত কালো ঘনক এবং ইসলামের সবচেয়ে পবিত্র স্থান।

অন্যরা মক্কার উপকণ্ঠে বিস্তৃত তাঁবুর শহর মিনায় একত্রিত হয়েছেন। সেখানে তারা বৃহস্পতিবার হজের সর্বোচ্চ স্থান আরাফার পর্বতে নামাজ পড়ার আগে রাত্রি যাপন করবেন। যেখানে নবী মুহাম্মদ (সা.) তাঁর বিদায় হজের শেষ খুতবা দিয়েছিলেন বলে মনে করা হয়। 

পবিত্র মক্কা নগরী থেকে এএফপি এ খবর জানায়।

৬৩ বছর বয়সী হজযাত্রী খিতাম এএফপি’কে ফোনে বলেছেন, ‘আপনার মনে হচ্ছে আপনি এই পৃথিবীতে নেই’, ‘হজের আগে আমি সারাদিন টিভিতে গ্র্যান্ড মসজিদ দেখতাম।’

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রায় ১৫ লক্ষ হজযাত্রী সৌদি আরবে এসেছেন

হজ, ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে একটি, যা সকল মুসলমানের জন্য কমপক্ষে একবার পালন করা আবশ্যক।
কর্তৃপক্ষ তাপ সুরক্ষা ব্যবস্থা যেমন অতিরিক্ত ছায়া তৈরি করেছে, যাতে গত বছরের পুনরাবৃত্তি এড়ানো যায়। গত বছর তাপমাত্রা ৫১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছানোর ফলে ১,৩০১ জন মারা গিয়েছিল।

বুধবার হজযাত্রীরা পবিত্র কাবা শরীফ তাওয়াফ করবেন। কাবা ঘরের চারপাশে সাতবার হেঁটে যাবেন, যার দিকে কেবলামুখী হয়ে মুসলমানরা প্রতিদিন নামাজ আদায় করেন।

মক্কায় প্রবেশের আগে হজযাত্রীদের প্রথমে পবিত্রতার একটি অবস্থায় প্রবেশ করতে হবে, যাকে ইহরাম বলা হয়, যার জন্য বিশেষ পোশাক এবং নিয়ম প্রয়োজন।

পুরুষরা একটি বিজোড় কাফনের মতো সাদা পোশাক পরেন যা সামাজিক অবস্থান বা জাতীয়তা নির্বিশেষে বিশ্বাসীদের মধ্যে ঐক্যের ওপর জোর দেয়।

মহিলারা অবশ্য ঢিলেঢালা পোশাক পরেন, যা কেবল তাদের মুখ এবং হাত ঢেকে রাখে।

মঙ্গলবার দুপুরে বাসে করে আসা হজযাত্রীরা মিনায় প্রবেশ শুরু করেন। কর্মীরা তাদের কফি এবং খেজুর দিয়ে স্বাগত জানিয়েছেন।

প্রথমবারের মতো হজ পালনকারী ৩৫ বছর বয়সী সৌদি নাগরিক রিম আল-শোগরে বলেছেন, ‘আমি খুব খুশি, এটি একটি বিস্ময়কর অনুভূতি।’

- কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা -

গত বছরের মারাত্মক তাপদাহের পর কর্তৃপক্ষ সুরক্ষা উন্নত করার জন্য ৪০টিরও বেশি সরকারি সংস্থা এবং ২৫০,০০০ কর্মকর্তা মোতায়েন করেছে।

ছায়াযুক্ত এলাকা ৫০ হাজার বর্গমিটার (১২ একর) এলাকা সম্প্রসারিত করা হয়েছে।

হজমন্ত্রী তৌফিক আল-রাবিয়াহ গত সপ্তাহে এএফপি’কে বলেছেন, হাজার হাজার অতিরিক্ত চিকিৎসক প্রস্তুত থাকবেন এবং ৪শ’ টিরও বেশি শীতলকারী ইউনিট মোতায়েন করা হবে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি বিশাল জনতাকে আরো ভালভাবে পরিচালনা করার জন্য ড্রোনের একটি নতুন বহরের ভিডিওসহ তথ্যের বন্যা প্রক্রিয়া করতে সহায়তা করবে।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত বছর বেশিরভাগ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে অনিবন্ধিত হাজীদের মধ্যে যাদের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত তাঁবু এবং বাসে যাতায়াতের সুযোগ ছিল না।

এই বছর, তারা অনিবন্ধিত হাজীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। ঘন ঘন হামলা, ড্রোন নজরদারি এবং টেক্সট সতর্কতার ব্যারেজ ব্যবহার করেছে।

মক্কায় পৌঁছানোর সময় ‘পারমিট ছাড়া হজ নয়’ লেখা একটি বিলবোর্ড হাজীদের স্বাগত জানিয়েছে।

হজের পারমিট কোটার ভিত্তিতে বিভিন্ন দেশে বরাদ্দ করা হয় এবং লটারির মাধ্যমে ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করা হয়।

কিন্তু যারা এগুলো পেতে পারেন তাদের জন্যও উচ্চ মূল্যের কারণে অনেকেই পারিমিট ছাড়াই হজ করার চেষ্টা করতে প্ররোচিত করে, যদিও ধরা পড়লে গ্রেপ্তার এবং নির্বাসনের ঝুঁকি থাকে।

হজে বিপুল সংখ্যক জনতা অতীতে বিপজ্জনক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। বিশেষ করে ২০১৫ সালে যখন মিনায় ‘শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ’ অনুষ্ঠানের সময় পদদলিত হয়ে সবচেয়ে মারাত্মক হজ দুর্ঘটনায় ২,৩০০ জন নিহত হন।

সৌদি আরব হজ থেকে বছরে কোটি কোটি ডলার আয় করে এবং বছরের অন্যান্য সময়ে করা ওমরাহ নামে পরিচিত ছোট হজযাত্রা থেকেও আয় করে।