বাসস
  ০৫ জুন ২০২৫, ১২:০২

ইউরোপের সঙ্গে অগ্রগতি হলেও চীনের সঙ্গে চুক্তি ‘ভীষণ কঠিন’ : ট্রাম্প

ঢাকা, ৫ জুন, ২০২৫ (বাসস) : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, চীনের সঙ্গে একটি বাণিজ্যচুক্তিতে পৌঁছানো ‘ভীষণ কঠিন’, যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে আলোচনা এগিয়ে চলেছে। একইসঙ্গে তিনি অ্যালুমিনিয়াম ও স্টিলে শুল্ক দ্বিগুণ করেছেন।

ওয়াশিংটন থেকে এএফপি জানায়, এদিনই প্যারিসে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) এক বৈঠকে বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন বিভিন্ন দেশের মন্ত্রীরা।

বাণিজ্য সহযোগী ও প্রতিপক্ষ—দুই পক্ষের ওপরই ট্রাম্পের আরোপিত শুল্কপদ্ধতি আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে জটিল করে তুলেছে। তবে চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংয়ের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে হোয়াইট হাউস, যা নতুন করে চুক্তির আশাও জাগায়।

তবে বুধবার সকালে ট্রাম্প নিজেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ লিখেন, ‘আমি চীনের প্রেসিডেন্ট শিকে পছন্দ করি এবং সবসময় করে আসছি। তবে তিনি অত্যন্ত কঠোর এবং তার সঙ্গে চুক্তি করা ভীষণ কঠিন!!!’

ট্রাম্পের মন্তব্য সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লিন জিয়ান বলেন, ‘চীন-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক গঠনে আমাদের নীতিমালা ও অবস্থান বরাবরই একই রয়েছে।’

এপ্রিলে ট্রাম্প চীনের পণ্যের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন, যার পাল্টা জবাবে চীন ১২৫ শতাংশ শুল্ক বসায় যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর।

তবে গত মে মাসে উভয় পক্ষই সাময়িকভাবে উত্তেজনা প্রশমনে সম্মত হয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশগুলোর জন্য শুল্ক কার্যকর স্থগিত রাখলেও চীনের ক্ষেত্রে তা অব্যাহত থাকে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে ‘দ্রুত অগ্রগতি’

ট্রাম্প বুধবার স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করার ঘোষণা দেন। যদিও যুক্তরাজ্যকে তিনি এই বাড়তি শুল্ক থেকে ছাড় দিয়েছেন।

তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের ওপর ৯ জুলাই থেকে ৫০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে, যদি না তার আগে ইইউ ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছায়। ইইউ এর পাল্টা জবাব দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে।

মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার প্যারিসে ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট মারোশ সেফচোভিচের সঙ্গে বৈঠক শেষে বলেন, ‘আলোচনা দ্রুত অগ্রসর হচ্ছে।’

গ্রিয়ার আরও বলেন, ‘আমরা গঠনমূলক আলোচনা করেছি এবং ইইউ যে পারস্পরিক বাণিজ্যের জন্য বাস্তবসম্মত পথ খুঁজছে, তা স্পষ্ট।’

সেফচোভিচ বলেন, ‘শুল্ক দ্বিগুণ করাটা আলোচনায় সহায়ক নয়, তবে আমরা অগ্রগতি করছি।’

তিনি বলেন, ‘আমি এখনও বিশ্বাস করি আমরা একটি ইতিবাচক ফল পেতে পারি।’

ওইসিডি একদিন আগেই বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস হ্রাস করে এবং এর জন্য ট্রাম্পের শুল্কনীতিকেই দায়ী করে।

ফরাসি বাণিজ্য মন্ত্রী লরঁ সাঁ-মার্তাঁ বলেন, ‘আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে এবং দেখাতে হবে যে এ ধরনের শুল্ক কেউ চায় না।’

ছাড় পেল যুক্তরাজ্য, মেক্সিকো চায় অব্যাহতি

মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের বাণিজ্যমন্ত্রী জোনাথন রেনল্ডসের সঙ্গে বৈঠকের পর যুক্তরাষ্ট্র জানায়, ব্রিটিশ রপ্তানির ওপর শুল্ক আপাতত ২৫ শতাংশই থাকছে।

যুক্তরাজ্য সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের চুক্তির কারণে যুক্তরাজ্যের স্টিল পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক কার্যকর হবে না—এটি আমাদের জন্য স্বস্তির।’

মেক্সিকোর অর্থনীতিমন্ত্রী মার্সেলো এবরার্দ জানান, তার দেশ বাড়তি শুল্ক থেকে অব্যাহতির অনুরোধ করবে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রই সেখানে স্টিল রপ্তানিতে বেশি লাভবান।

তিনি বলেন, ‘যে পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বৃত্ত রয়েছে, তার ওপর শুল্ক আরোপ অর্থহীন।’ মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল—তাদের ৮০ শতাংশ রপ্তানি মার্কিন বাজারে যায়।

ট্রাম্পের আরোপিত অনেক শুল্ক আদালতে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেও আপিল প্রক্রিয়া চলার সময় সেগুলো বলবৎ রয়েছে।

হোয়াইট হাউসের প্রেসসচিব ক্যারোলিন লেভিট জানান, ট্রাম্প প্রশাসন বুধবারের মধ্যেই বিভিন্ন দেশের সরকারগুলোকে প্রস্তাব দিতে অনুরোধ জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। ৯ জুলাইয়ের সময়সীমা ঘনিয়ে আসায় আলোচনায় গতি আনার চাপ বাড়ছে।