বাসস
  ০৫ জুন ২০২৫, ১০:১০

ক্ষুদ্র নক্ষত্রকে ঘিরে ঘুরছে বিশাল গ্রহ, হতবাক বিজ্ঞানীরা

ঢাকা, ৫ জুন, ২০২৫ (বাসস) : এক ক্ষুদ্র নক্ষত্রের চারপাশে একটি বিশাল গ্রহ আবিষ্কারের কথা ঘোষণা করেছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। অদ্ভুত এই যুগল নিয়ে গবেষকরা রীতিমতো হতবাক।

প্যারিস থেকে এএফপি জানায়, আকাশগঙ্গা ছায়াপথে থাকা বেশিরভাগ নক্ষত্রই ছোট আকৃতির লাল বামন নক্ষত্র, যেমন টিওআই-৬৮৯৪বি, যার ভর আমাদের সূর্যের মাত্র ২০ শতাংশ। এমন ক্ষুদ্র, দুর্বল নক্ষত্রগুলো বড় ধরনের গ্রহ গঠনের উপযুক্ত পরিবেশ দিতে পারে—এ ধারণা আগে ছিল না।

কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় আন্তর্জাতিক গবেষক দল নিশ্চিত হয়েছেন, টিওআই-৬৮৯৪বি-এর কক্ষপথে রয়েছে এক গ্যাসীয় দৈত্যগ্রহ। গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে নেচার এস্ট্রোনমি সাময়িকীতে।

এই আবিষ্কারের ফলে টিওআই-৬৮৯৪বি-কে এখন পর্যন্ত ক্ষুদ্রতম নক্ষত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যার চারপাশে গ্যাসীয় দৈত্যগ্রহ রয়েছে।

নতুন গ্রহটির ব্যাসার্ধ শনি গ্রহের চেয়ে কিছুটা বেশি হলেও এর ভর শনির অর্ধেকেরও কম। এটি মাত্র তিন দিনের কিছু বেশি সময়ে নিজের নক্ষত্রকে একবার প্রদক্ষিণ করে।

নাসার টেস মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্রের পর্যবেক্ষণে ৯১ হাজারের বেশি স্বল্প-ভরের লাল বামন নক্ষত্র ঘেঁটে এই গ্রহটি শনাক্ত করেন গবেষকরা।

এরপর চিলির ‘অতি বৃহৎ টেলিস্কোপ’সহ কয়েকটি স্থলভিত্তিক দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে এ আবিষ্কার নিশ্চিত করা হয়।

গবেষণার সহলেখক ও যুক্তরাজ্যের ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয়ের ড্যানিয়েল বেইলিস বলেন, 'এমন ক্ষুদ্র নক্ষত্রে একটি বিশাল গ্রহ থাকার অর্থ হলো—আমাদের ছায়াপথে এই ধরনের দৈত্যগ্রহের সংখ্যা আমাদের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি হতে পারে।'

আরেক সহলেখক, ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের ভিনসেন্ট ভ্যান আইলেন একে ‘রহস্যময় আবিষ্কার’ আখ্যা দিয়ে বলেন, 'আমরা এখনো বুঝে উঠতে পারিনি, এত কম ভরের একটি নক্ষত্র কীভাবে এত বিশাল একটি গ্রহ গঠন করল!'

'আমাদের সৌরজগতের বাইরের এমন ভিন্ন ধরনের গ্রহের সন্ধান পাওয়াই এক্সোপ্ল্যানেট অনুসন্ধানের অন্যতম লক্ষ্য। এতে আমাদের মডেলগুলো যাচাই করা সম্ভব হয় এবং বোঝা যায় আমাদের নিজস্ব সৌরজগত কীভাবে গঠিত হয়েছিল।'

গ্রহ গঠনের সবচেয়ে প্রচলিত তত্ত্ব হলো ‘কোর অ্যাক্রেশন’। এতে বলা হয়, সদ্য জন্ম নেওয়া একটি নক্ষত্রকে ঘিরে গ্যাস ও ধুলাবালির একটি চাকতি (প্রোটোপ্ল্যানেটারি ডিস্ক) থাকে। সেখান থেকে একটি কেন্দ্রীয় মূল তৈরি হয়, যা পরে আরও গ্যাস আকর্ষণ করে এবং একটি বায়ুমণ্ডল গঠনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে একটি গ্যাসীয় গ্রহে পরিণত হয়।

এই তত্ত্ব অনুসারে, স্বল্প ভরের নক্ষত্রগুলোর আশেপাশে পর্যাপ্ত গ্যাস বা ধুলাবালি না থাকায় সেগুলোর গ্রহ তৈরি করার সম্ভাবনা খুবই কম।

বিকল্প একটি তত্ত্ব বলছে, কিছু প্রোটোপ্ল্যানেটারি ডিস্ক অভিকর্ষীয় অস্থিতিশীলতায় ভেঙে গিয়ে সরাসরি গ্যাস ও ধুলার পতনের মাধ্যমে গ্রহ তৈরি করে।

তবে গবেষকদের মতে, এই দুটি তত্ত্বের কোনোটিই টিওআই-৬৮৯৪বি নামের এই নতুন গ্রহের অস্তিত্বকে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করতে পারছে না।

এই গ্রহ বিজ্ঞানীদের আরও আগ্রহের বিষয় হয়ে উঠেছে এর অস্বাভাবিক শীতল তাপমাত্রার কারণে।

সৌরজগতের বাইরে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত অধিকাংশ গ্যাসীয় দৈত্যগ্রহই ‘হট জুপিটার’ নামে পরিচিত—যেগুলোর তাপমাত্রা এক হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যায়।

কিন্তু টিওআই-৬৮৯৪বি গ্রহটির তাপমাত্রা ১৫০ ডিগ্রির নিচে বলেই ধারণা করছেন গবেষকেরা।

গবেষণার সহলেখক, বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আমরি ট্রিয়ো বলেন, 'তাপমাত্রা এতটাই কম যে, এই গ্রহের বায়ুমণ্ডলে অ্যামোনিয়ার উপস্থিতিও শনাক্ত করা সম্ভব হতে পারে—যা এক্সোপ্ল্যানেটের বায়ুমণ্ডলে প্রথমবারের মতো পাওয়া যাবে।'

আগামী এক বছরের মধ্যে জেমস ওয়েব মহাকাশ দূরবীক্ষণ যন্ত্র এই গ্রহের দিকে তাক করবে, যা হয়তো এই রহস্যময় গ্রহটির আরও অজানা তথ্য উদঘাটনে সহায়তা করবে।