শিরোনাম
ঢাকা, ৪ জুন, ২০২৫ (বাসস) : মেক্সিকোর সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন এক আদিবাসী অধিকারকর্মী ও সাবেক জাপাতিস্তা উপদেষ্টা হুগো আগুইলার। এই পদে সাধারণত অভিজাত শ্রেণির আইনজ্ঞদেরই স্থান হয়ে থাকে।
মেক্সিকো সিটি থেকে এএফপি জানায়, রোববার দেশটির বিচার বিভাগে নজিরবিহীনভাবে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রথমবারের মতো জনগণের ভোটে সব বিচারপতি নির্বাচিত হন। এ ধরনের নির্বাচন বিশ্বের আর কোনো দেশে চালু নেই।
জাতীয় নির্বাচনী প্রতিষ্ঠান (আইএনই) জানায়, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির পদের জন্য ৯৬ শতাংশ ভোট গণনা শেষে মিক্সটেক আদিবাসী গোষ্ঠীর সদস্য হুগো আগুইলার সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন।
নির্বাচনি প্রচারে আগুইলার বলেন, ‘এবার আমাদের সময়।’ তিনি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ‘বর্জন ও অবহেলার’ বিরুদ্ধে সোচ্চার হন।
মেক্সিকোর প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ নিজেদের আদিবাসী বলে পরিচয় দেন।
আদিবাসী পটভূমি থেকে সুপ্রিম কোর্টে আগেই এসেছেন বেনিতো জুয়ারেজ—মেক্সিকোর প্রথম আদিবাসী প্রেসিডেন্ট, যিনি ১৮৫৭-৫৮ সালে দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।
সাংবিধানিক আইন বিশেষজ্ঞ আগুইলার প্রেসিডেন্ট ক্লাউডিয়া শেইনবাউমের মোরেনা দলের সদস্য লেনিয়া বাত্রেসের চেয়ে অল্প ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন।
আইএনআই প্রেসিডেন্ট গুয়াদালুপে তাদেই জানান, 'সাংবিধানিক সংস্কারে এটা স্পষ্ট বলা হয়েছে, যে প্রার্থী সর্বোচ্চ ভোট পাবেন, তিনিই প্রথম দুই বছরের জন্য সুপ্রিম কোর্টের প্রেসিডেন্ট হবেন।'
তবে এর আগেই প্রেসিডেন্ট শেইনবাউম ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ভোটের ফলের বাইরেও ‘নারী প্রতিনিধিত্বের নীতির’ কারণে একজন নারীও এই পদে মনোনীত হতে পারেন।
‘ঋণ রয়ে গেছে’
হুগো আগুইলার ১৯৯৪ সালে সশস্ত্র অভ্যুত্থানের পর জাপাতিস্তা গেরিলা গোষ্ঠীর সঙ্গে সরকারের আলোচনায় আইনি উপদেষ্টা হিসেবে যুক্ত ছিলেন।
তিনি বলেন, 'মেক্সিকোর আদিবাসীদের প্রতি রাষ্ট্রের একটি বড় ঋণ রয়ে গেছে।'
সাবেক প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেস ম্যানুয়েল লোপেস ওব্রাদরের শাসনামলে তিনি আদিবাসী জনগণের জাতীয় ইনস্টিটিউটে কাজ করেছেন।
তিনি তার প্রচারে বারবার বলেন, 'নাগরিকরা এই বিচারব্যবস্থায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে।' এমন বক্তব্যের সঙ্গে লোপেস ওব্রাদর ও বর্তমান প্রেসিডেন্ট শেইনবাউমের ভাষার মিল রয়েছে, যারা বিচার বিভাগকে ‘রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অভিজাতদের স্বার্থে কাজ করছে’ বলে অভিযোগ করে থাকেন।
আংশিক ফলাফলে দেখা গেছে, শাসক দলের ঘনিষ্ঠ বিচারপতিরাই সুপ্রিম কোর্টে প্রভাব বিস্তার করতে যাচ্ছেন।
যদিও মাত্র ১৩ শতাংশ ভোটার ভোট দিয়েছেন এবং ভোট নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্তিও ছিল, তবু প্রেসিডেন্ট শেইনবাউম একে ‘সফল নির্বাচন’ বলে অভিহিত করেছেন।
তার বিরোধীরা অবশ্য একে ‘প্রহসন’ বলে আখ্যা দিয়ে সতর্ক করেছেন যে, এর ফলে বিচার বিভাগও শাসক দলের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে—যা সংসদের দুই কক্ষেই তারা ইতিমধ্যেই অর্জন করেছে।
পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে গত বছর অধিকাংশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদত্যাগ করেন এবং নির্বাচনে দাঁড়াতে অস্বীকৃতি জানান।
‘জনগণের কাছে জবাবদিহিতা’
সাবেক প্রেসিডেন্ট লোপেস ওব্রাদর বিচার বিভাগ নিয়ে নিয়মিত বিরোধিতা করতেন, বিশেষত সংবিধান পরিপন্থী হিসেবে তার নীতিমালাগুলো আটকে দেওয়ায়।
নিম্ন ভোটার উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্নের জবাবে প্রেসিডেন্ট শেইনবাউম বলেন, আগে যেখানে কয়েকজন সিনেটর প্রেসিডেন্টের দেওয়া তালিকা থেকে বিচারপতি মনোনীত করতেন, সেখানে এবার ১৩ মিলিয়ন মানুষ ভোট দিয়েছেন, যা আরও ‘প্রতিনিধিত্বশীল’।
তিনি বলেন, 'মেক্সিকো এখন বিশ্বের সবচেয়ে গণতান্ত্রিক দেশ।' 'এখন বিচারপতিরা জনগণের কাছে জবাবদিহি করবেন,'—যোগ করেন তিনি।
অপরদিকে বিরোধী ইনস্টিটিউশনাল রেভ্যুলুশনারি পার্টি (পিআরআই)'র নেতা আলেহান্দ্রো মোরেনো বলেন, 'এটি গণতন্ত্রের জন্য একটি কালো দিন।'
এ নির্বাচনে প্রায় ৮৮০ জন ফেডারেল বিচারক ও আরও শত শত স্থানীয় বিচারক এবং ম্যাজিস্ট্রেট নির্বাচন হয়।
তবে দীর্ঘ প্রার্থীতালিকা ও অপরিচিত নাম দেখে অনেক ভোটারই বিভ্রান্ত বোধ করেন।
প্রার্থীদের অবশ্যই আইন বিষয়ে ডিগ্রি, পেশাগত অভিজ্ঞতা, অপরাধমুক্ত রেকর্ড ও ‘সততার পরিচয়’ থাকা বাধ্যতামূলক ছিল।
মেক্সিকোর অবশিষ্ট বিচারপতিদের নির্বাচন ২০২৭ সালে অনুষ্ঠিত হবে।