বাসস
  ০৪ জুন ২০২৫, ১১:৩১

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নিলেন লি জে-মিয়ং

ঢাকা, ৪ জুন, ২০২৫ (বাসস) : দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্য-বাম রাজনীতিক লি জে-মিয়ংকে বুধবার প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করা হয়েছে। আগাম নির্বাচনে বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর দেশটির নেতৃত্ব গ্রহণ করেছেন তিনি। সদ্য পদত্যাগকারী প্রেসিডেন্টের মার্শাল ল' জারির ব্যর্থ চেষ্টার পর গভীরভাবে বিভক্ত এক দেশের দায়িত্ব নিলেন লি।

লি তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী, রক্ষণশীল কিম মুন-সুকে বিশাল ব্যবধানে পরাজিত করেছেন। কিম ছিলেন কলঙ্কিত সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওলের দলের প্রার্থী। বুধবার ভোরে জাতীয় নির্বাচন কমিশন ভোটের ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার পরই লির মেয়াদ শুরু হয়।

সিউল থেকে এএফপি জানায়, লি পেয়েছেন মোট ভোটের ৪৯.৪ শতাংশ, যেখানে কিম পেয়েছেন ৪১.২ শতাংশ। কিমের পরাজয়ের পেছনে ছিল দলীয় কোন্দল ও ডানপন্থীদের ভোট ভাগ করে নেওয়া তৃতীয় পক্ষের এক প্রার্থী।

দক্ষিণ কোরিয়ায় সাধারণত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর কিছুদিনের হস্তান্তরকাল থাকে, কিন্তু ইউন সুক ইওলের অভিশংসনের কারণে এ নির্বাচনে জয় পাওয়া লির জন্য এই সময়সীমা প্রযোজ্য হয়নি। ফলে বিজয়ের সঙ্গে সঙ্গেই তার দায়িত্বগ্রহণ সম্পন্ন হয়।

জাতীয় নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান রো তে-আক বলেন, ‘গণতান্ত্রিক পার্টির লি জে-মিয়ংকে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করা হলো।’

চূড়ান্ত গণনার আগেই কিম পরাজয় স্বীকার করেন। আনুষ্ঠানিক ফলাফলে দেখা গেছে, তার জয়ের কোনো সম্ভাবনাই ছিল না।

লি যখন দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন থেকেই যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়াম রপ্তানির ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। তবে বাজার এই পরিবর্তনে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে—কেইওএসপিআই সূচক ও দক্ষিণ কোরিয়ার মুদ্রা ‘উওন’ উর্ধ্বমুখী হয়েছে।

লি এমন এক সময় নেতৃত্ব গ্রহণ করছেন, যখন দেশটি গত ডিসেম্বরে ইউনের মার্শাল ল' ঘোষণার অভিঘাত থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। এর ফলে দেশটিতে চরম ডানপন্থার উত্থান ঘটে, যা দেশটির গণতান্ত্রিক চেতনায় গভীর অভিঘাত হানে বলে বিশ্লেষকরা মত দেন।

ভোরে সমর্থকদের উদ্দেশে দেওয়া এক বক্তৃতায় লি বলেন, ‘এই মুহূর্ত থেকেই আমরা আশাবাদ নিয়ে সামনে এগিয়ে যাব এবং নতুন করে যাত্রা শুরু করব।’

তিনি আরও বলেন, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে ‘সংলাপ, যোগাযোগ ও সহযোগিতার’ মাধ্যমে ‘শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও সমৃদ্ধির পথ’ খুঁজে বের করার চেষ্টা করবেন।

দায়িত্বগ্রহণের প্রথম দিনেই তিনি সেনাবাহিনীর প্রধানের সঙ্গে কথা বলেন এবং দেশের সশস্ত্র বাহিনীর কার্যকর নিয়ন্ত্রণ তার হাতে স্থানান্তরের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেন।

তিনি সেনাদের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন ‘উত্তর কোরিয়ার যেকোনো হুমকির বিরুদ্ধে দৃঢ় প্রস্তুতি বজায় রাখে’। সেই সঙ্গে সেনাবাহিনীর প্রশংসা করে বলেন, মার্শাল ল' সঙ্কটের সময় তারা ‘দেশকে আরও গভীর বিশৃঙ্খলায় পতিত হওয়া থেকে রক্ষা করেছেন’।

পরে লি জাতীয় সমাধিক্ষেত্রে যান, যেখানে অনেক সাবেক প্রেসিডেন্ট সমাহিত আছেন, এবং শ্রদ্ধা জানান।

-ব্লু হাউসের ভবিষ্যৎ -

উপলক্ষ্যটি হবে অপেক্ষাকৃত সংক্ষিপ্ত—মাত্র কয়েকশ’ অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এটি হবে পার্লামেন্ট ভবনে, যেখানেই ইউন সামরিক বাহিনী পাঠিয়ে বেসামরিক শাসন স্থগিতের চেষ্টা করেছিলেন।

নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এরপর প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদসহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রিপরিষদ সদস্যদের নাম ঘোষণা করবেন।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন ঐতিহ্যবাহী ব্লু হাউস ছেড়ে ইয়ংসানের একটি দ্রুত রূপান্তরিত সরকারি ভবনে কার্যালয় সরিয়ে নিয়েছিলেন। তবে লি আগে বলেছিলেন, তিনি সেটি ব্যবহার করবেন না।

বর্তমানে দৃষ্টি থাকবে প্রেসিডেন্টের চিফ অব স্টাফ, প্রধানমন্ত্রী এবং জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক হিসেবে কাদের নিযুক্ত করা হয়, সে দিকেই।

দিনশেষে বিভিন্ন দেশের নেতাদের কাছ থেকে অভিনন্দন বার্তা পাওয়ার কথা রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথম ফোন করতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ট্রাম্পের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও দ্রুত অভিনন্দন জানিয়ে লির সঙ্গে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। যদিও লি অতীতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব বজায় রাখার পক্ষে ছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সিওলের সঙ্গে ওয়াশিংটনের জোট ‘অটুট’। কারণ এটি ‘সাম্প্রতিক মূল্যবোধ ও গভীর অর্থনৈতিক সম্পর্কের’ ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত।

লি এমন সময় ক্ষমতায় এলেন, যখন তাঁর দল আগেই পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে—যা আরও তিন বছর পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে। ফলে তাঁর আইনপ্রণয়ন কার্যক্রমে তেমন প্রতিবন্ধকতা আসবে না।

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্বের অধ্যাপক গি-উক শিন বলেন, লি-র ক্ষমতা গ্রহণ দক্ষিণ কোরিয়ার পররাষ্ট্রনীতিতে একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে।

তিনি বলেন, ‘লি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জোটকে অগ্রাধিকার দিতে পারেন, তবে একইসঙ্গে চীন ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করবেন।’

এটি পূর্বসূরি ইউনের নীতির সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য। ইউন কেবলমাত্র যুক্তরাষ্ট্র ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গেই আলাদা আলাদা করে কাজ করার ওপর জোর দিয়েছিলেন।