শিরোনাম
ঢাকা, ৩ জুন, ২০২৫ (বাসস) : মার্শাল ল’ ঘোষণা ও তা থেকে সৃষ্ট ছয় মাসের রাজনৈতিক অস্থিরতার পর দক্ষিণ কোরিয়ায় আজ মঙ্গলবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
সিউল থেকে এএফপি জানায়, সিউলের মুনরে-ডং এলাকার একটি ভোটকেন্দ্রে ভোর ৬টায় কিছু প্রবীণ ভোটারকে ভোট দিতে দেখা যায়।
৮০ বছর বয়সী ইউ বুন-ডল বলেন, ‘আমরা প্রথমে এসেছি কারণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই আমাদের প্রার্থী জয়ী হোক।’ তিনি রক্ষণশীল পিপল পাওয়ার পার্টি (পিপিপি) প্রার্থীর পক্ষে ভোট দিয়েছেন বলে জানান।
দক্ষিণ কোরিয়ার জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ভোটারদের এক-তৃতীয়াংশ আগেই ভোট দিয়েছেন। আগাম ভোটের জন্য বরাদ্দ দুই দিনেই তারা ব্যালট জমা দেন।
সবশেষ গ্যালাপ জরিপে দেখা গেছে, লিবারেল প্রার্থী লি জে-মিয়ং এখন পর্যন্ত সবচেয়ে এগিয়ে আছেন—৪৯ শতাংশ ভোটার তাকে সেরা প্রার্থী হিসেবে দেখছেন।
অন্যদিকে, সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সোক-ইওলের দল পিপিপি থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া কিম মুন-সু পেয়েছেন ৩৫ শতাংশ সমর্থন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট ইউন সোক-ইওলের বিতর্কিত মার্শাল ল’ ঘোষণার পর সৃষ্ট সংকট এই নির্বাচনে ভোটারদের মূল উদ্বেগে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম কয়েক মাসে দেশটি কার্যত নেতৃত্বহীন ছিল।
সূকমিয়ং নারী বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী কাং জু-হিউন বলেন, ‘এই নির্বাচনকে অনেকেই আগের সরকারের ওপর গণভোট হিসেবে দেখছেন। মার্শাল ল’ এবং অভিশংসনের ঘটনা কেবল মাঝামাঝি অবস্থানে থাকা ভোটারদের নয়, বরং রক্ষণশীল ঘরানার সমর্থকদের ভেতরেও ভাঙন ধরিয়েছে।’
রক্ষণশীল রাজনীতির সংকটকাল
সিউল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক কাং উন-তেক বলেন, ‘আগে রক্ষণশীল রাজনীতি দক্ষ প্রশাসনের জন্য পরিচিত ছিল। এখন তারা সেই বিশ্বাসযোগ্যতা হারাচ্ছে।’
লি জে-মিয়ংয়ের ডেমোক্রেটিক পার্টি ইতোমধ্যে পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি ডানপন্থি গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বিভাজন থেকে যায়, তাহলে বিরোধীদল হিসেবে টিকে থাকাও রক্ষণশীলদের জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট একবারেই পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচিত হন। নিয়মিত নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিদায়ী প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষে নতুন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণে সময় থাকে। কিন্তু আগাম নির্বাচনে ভোটগণনার ফল অনুমোদনের সঙ্গে সঙ্গেই নতুন প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব নেন।
এ কারণে কোরিয়ার মানুষ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও নেতৃত্বহীনতার দীর্ঘ সময় পেরিয়ে এখন স্থিতিশীলতার জন্য অধীর।
‘এটাই মোড় ঘোরার সময়’
কোরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর গওয়াংজুতে ৬৫ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক জং সে-ইউন বলেন, ‘এটাই আমাদের মোড় ঘোরার সময়। যদি এই সুযোগ হাতছাড়া হয়, তাহলে দেশকে ঘুরে দাঁড়াতে অনেক দেরি হয়ে যাবে।’
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এবারের ভোটে অংশগ্রহণের হার বেশি হবে। রাজনৈতিক গবেষণা সংস্থা ‘ভ্যালিড’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা বে কাং-হুন বলেন, ‘প্রধান প্রশ্ন হচ্ছে, লি শুধু জিতবেন কি না, তা নয়—তিনি ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পান কি না, সেটিই দেখার বিষয়।’
তিনি বলেন, ‘যদি তা হয়, তাহলে প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার জন্য সেটা হবে বড় একটি শক্তি ও গতি সঞ্চারের সুযোগ।’