শিরোনাম
ঢাকা, ২৬ মে, ২০২৫ (বাসস) : গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, সোমবার ভোরে গাজা সিটির একটি স্কুলে ইসরাইলি হামলায় ২০ জন নিহত এবং ৬০ জন আহত হয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে হামাসকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে হামলা জোরদার করেছে নেতানিয়াহু সরকার।
গাজা সিটি থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা টেলিগ্রামে দেওয়া বার্তায় লিখেছে, ‘সোমবার ভোরে ইসরাইলি দখলদার বাহিনী আল-দারাজ পাড়ার ফাহমি আল-জারজাওয়ি স্কুলকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালায়। পরে স্কুলটির ভেতর থেকে ১৩ জনের মরদেহ এবং ২১ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে শহরের বেসামরিক প্রতিরক্ষা দল।’
২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরাইলের ওপর হামাসের হামলার পর এ যুদ্ধের সূত্রপাত হয়। ১৮ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে হামাসকে পরাজিত করার লক্ষ্যে এ মাসেই হামলা আরো জোরদার করেছে ইসরাইল।
হামলা তীব্র হওয়ার পাশাপাশি প্রায় তিন মাস ধরে চলা ত্রাণ অবরোধের কারণে গাজায় খাদ্য, পানি, জ্বালানি ও ওষুধের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ব্যাপক নিন্দা কুড়িয়েছে।
রোববার মাদ্রিদে ইউরোপীয় ও আরব দেশগুলোর সমবেত আলোচনায় ইসরাইলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান জানান স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে মানুয়েল আলবারেস।
বৈঠক শুরুর আগে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এই আলোচনা ইসরাইলের "অমানবিক" ও ‘অযৌক্তিক’ যুদ্ধ বন্ধের জন্য।
তিনি আরো বলেন, ‘মানবিক সহায়তা গাজায় ব্যাপকভাবে, শর্তহীন ও সীমাহীনভাবে প্রবেশ করতে হবে এবং সেটি তেল আবিব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়া চলবে না।’ গাজা ভূখণ্ডকে মানবতার ‘মুক্ত ক্ষেত’ হিসেবেও বর্ণনা করেন।
হোসে মানুয়েল আলবারেস বলেন, ‘যারা চিরতরে দুই-রাষ্ট্রের সংকট সমাধান ধ্বংস করতে চায়, তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি বাতিল করে দেওয়া উচিত নয়।’
রোববার ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড জুড়ে ইসরাইলি বিমান হামলায় ২২ জন নিহত এবং কয়েক ডজন আহত হওয়ার খবর প্রকাশের পর নতুন করে এই নিন্দা জানানো হল।
বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানিয়েছেন, উত্তর গাজার জাবালিয়া এলাকায় একটি বাড়িতে হামলায় সাতজন প্রাণ হারিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন,"ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও অনেকে আটকে আছে। আমাদের কাছে উদ্ধার সরঞ্জাম বা ধ্বংসস্তূপ সরানোর ভারী যন্ত্রপাতি নেই। ফলে উদ্ধারকাজ কঠিন হয়ে পড়েছে।"
মাহমুদ বাসাল জানান, মধ্য গাজার নুসাইরাতের আশেপাশে বাস্তুচ্যুতদের আশ্রয়কেন্দ্র লক্ষ্য করে চালানো হামলায় সাত মাসের গর্ভবতীসহ দুইজন নিহত হয়েছেন। চিকিৎসকরা ওই নারীর গর্ভস্থ সন্তানকেও বাঁচাতে পারেননি।
সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন) আশরাফ আবু নার ও তার স্ত্রীও নিহতদের তালিকায় রয়েছেন। বাসালের বরাত দিয়ে জানানো হয়, নুসেইরাতে তাদের বাসভবনে চালানো বিমান হামলায় প্রাণ হারান এই দম্পতি।
বিমান হামলায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে কেন্দ্রীয় গাজার দেইর আল-বালাহ, উত্তরের বাইত লাহিয়া এবং দক্ষিণের প্রধান শহর খান ইউনুসেও।
বাসাল বলেন, বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থাগুলো রোববার অন্তত ২২ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে, যাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি শিশুও রয়েছে। আহত হয়েছে বহু মানুষ এবং বেশ কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছে।
যদিও ইসরাইলি সেনাবাহিনী এসব হামলার বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি।
সম্প্রতি হামাসকে ধ্বংস করতে গাজায় অভিযান আরও জোরদার করেছে ইসরাইল। তবে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে অবরোধ কিছুটা শিথিল করেছে দেশটি, যার ফলে খাদ্য ও ওষুধের ঘাটতি কিছুটা লাঘব হচ্ছে।
ইসরাইলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিভিল অ্যাফেয়ার্স সমন্বয়কারী সংস্থা কোগাট জানায়, “রোববার জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ১০৭টি ট্রাক মানবিক সহায়তা নিয়ে গাজায় প্রবেশ করেছে।”
দু’মাসের যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েল গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় ফের অভিযান শুরু করে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শনিবার জানায়, নতুন করে হামলা শুরুর পর এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৩ হাজার ৭৪৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৩ হাজার ৯০১ জনে, যাদের অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক।
সরকারি পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে এএফপি’র দেওয়া তথ্য অনুযায়ি, ২০২৩ সালের অক্টোবরে ইসরায়েলের ওপর হামাসের হামলায় ১,২১৮ জন নিহত হয়েছিল, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক।
সেসময় হামাস ২৫১ জনকে জিম্মি করে, যাদের মধ্যে ৫৭ জন এখনও গাজায় বন্দি অবস্থায় রয়েছেন। আর ৩৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর।