শিরোনাম
ঢাকা, ২৪ মে, ২০২৫ (বাসস) : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পারমাণবিক শক্তিকে উৎসাহিত করতে শুক্রবার চারটি নির্বাহী আদেশে সই করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে জটিল অনুমোদন প্রক্রিয়া সরলীকরণ এবং ইউরেনিয়াম খনন ও শোধন কার্যক্রম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত।
ওয়াশিংটন থেকে এএফপি এ খবর জানিয়েছে।
ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, “আজ আমরা গুরুত্বপূর্ণ নির্বাহী আদেশে সই করছি, যা এই খাতে আমাদেরকে বিশ্বের শীর্ষ শক্তি হিসেবে গড়ে তুলবে।”
এই আদেশগুলোর লক্ষ্য হলো, নতুন পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর নির্মাণের গতি বাড়ানো, ঘরোয়া ইউরেনিয়াম উত্তোলন ও পরিশোধন কার্যক্রম জোরদার করা এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এই গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানির আমদানি নির্ভরতা থেকে বের করে আনা।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট আরো জানান, তাঁর প্রশাসনের বিশেষ লক্ষ্য হলো ছোট আকারের পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর তৈরি করা, যা বড় প্রযুক্তি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআইও) কোম্পানির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশাল বিদ্যুৎ চাহিদা মেটাতে পারবে।
নতুন আদেশ অনুসারে, পারমাণবিক নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে (নিউক্লিয়ার রেগুলেটরি কমিশন) ১৮ মাসের মধ্যে নতুন রিঅ্যাক্টর অনুমোদনের সিদ্ধান্ত দিতে হবে। হোয়াইট হাউস মনে করছে, সংস্থাটি এতদিন ‘ঝুঁকিপ্রবণ’ বিষয়গুলো নিয়ে অতিরিক্ত সময়ক্ষেপন করেছে।
নিরাপত্তার ঝুঁকির উদ্বেগের বিষয়ে ট্রাম্প বলেন, “আমরা কাজ করব দ্রুত ও নিরাপদভাবে। এখন সময় পারমাণবিক শক্তির এবং সেটি আমরা এবার বড় পরিসরে করব।”
এ উদ্যোগ এমন এক সময় নেওয়া হয়েছে যখন যুক্তরাষ্ট্রে পারমাণবিক শক্তির প্রতি আগ্রহ বাড়ছে, যদিও এটি ব্যয়বহুল। ফুকুশিমা বিপর্যয়ের পর এখনো বিষয়টি অনেকের কাছে স্পর্শকাতরও বটে।
হোয়াইট হাউসের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নীতিবিষয়ক কার্যালয়ের পরিচালক মাইকেল ক্রাটসিয়োস বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে পারমাণবিক জাগরণের ঐতিহাসিক সূচনা করেছেন।”
হোয়াইট হাউসের এক সিনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের লক্ষ্য হলো ২০২৯ সালের জানুয়ারিতে তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই নতুন রিঅ্যাক্টরগুলো পরীক্ষা ও চালু করা।
নতুন আদেশে পারমাণবিক নিয়ন্ত্রক কমিশনের কাঠামোর আমূল সংস্কার করার কথা বলা হয়েছে। এতে অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজ হবে এবং সময় কম লাগবে।
ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম দিনেই ‘জ্বালানি জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেন, যার মাধ্যমে তেল ও গ্যাস খনন বাড়ানো হয় এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ু নীতিগুলো বাতিল করা হয়।
তবে এখন ট্রাম্প পারমাণবিক শক্তির দিকেও গুরুত্ব দিচ্ছেন। কারণ, অ্যামাজন, মাইক্রোসফট ও গুগলের মত বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো পরিবেশবান্ধব কার্বনমুক্ত বিদ্যুৎ চাইছে এবং পারমাণবিক শক্তির চুক্তি করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের দুটি জ্বালানি কোম্পানিও তাদের পুরনো পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুনরায় চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে থ্রি মাইল আইল্যান্ড, যা ১৯৭৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক দুর্ঘটনাস্থল।
যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে প্রয়োজনীয় ইউরেনিয়ামের বেশিরভাগই আমদানি করে, ট্রাম্পের খনি ও ইউরেনিয়াম শোধন কার্যক্রম বাড়ানোর এটিও বড় কারণ।
২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্র কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, কাজাখস্তান ও উজবেকিস্তান থেকে ইউরেনিয়াম আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে ২০২৪ সালে রাশিয়া থেকে আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়।
জলবায়ু পরিবর্তন ও জ্বালানি দামের ঊর্ধ্বগতির মধ্য দিয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বজুড়ে পারমাণবিক শক্তির প্রতি আগ্রহ ফের বাড়তে শুরু করেছে। যদিও ২০১১ সালের জাপানের ফুকুশিমা বিপর্যয়ের পর অনেক দেশই, বিশেষ করে জার্মানি পারমাণবিক শক্তি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল।