শিরোনাম
ঢাকা, ২৪ মে, ২০২৫ (বাসস) : জাতিসংঘর প্রধান অ্যান্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার বলেছেন, ফিলিস্তিনিরা গাজায় যুদ্ধের ‘নিষ্ঠুরতম পর্যায়ে’ পার করছে। সেখানে দীর্ঘ ইসরাইলি অবরোধ আংশিকভাবে শিথিল করার পর এক ডজনেরও বেশি ত্রাণবাহী ট্রাক লুট করা হয়েছে।
হামাসকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে নতুন করে সম্প্রসারিত আক্রমণ চালানোর সময় ইসরাইল সীমিত পরিমাণে খাদ্য সরবরাহ পুনরায় শুরু করার ঘোষণা দেওয়ার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চলে ত্রাণ আবারো প্রবেশ শুরু করেছে।
জাতিসংঘ থেকে এএফপি আজ এই খবর জানায়।
গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মুগাইর এএফপি’কে বলেছেন, শুক্রবার ইসরাইলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ৭১ জন নিহত হয়েছে, এবং ‘ডজন ডজন আহত হয়েছে এবং ধ্বংসস্তূপের নিচে বিপুল সংখ্যক লোক চাপা পড়ে রয়েছে।’
জাতিসংঘ প্রধান আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘গাজার ফিলিস্তিনিরা এই নিষ্ঠুর সংঘাতের সবচেয়ে নিষ্ঠুরতম পর্যায়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে’। তিনি আরো বলেছেন, ইসরাইল ‘মানবিক সাহায্য প্রবেশের অনুমতি এবং সুবিধা প্রদানে সম্মত হতে হবে।’
তবে তিনি সমস্যাগুলোর দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, সাম্প্রতিক দিনগুলোতে গাজায় প্রবেশের জন্য প্রায় ৪শ’ ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দেয়া হলেও মাত্র ১১৫টি ট্রাক প্রবেশ করতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি এক বিবৃতিতে আরো বলেছেন, ‘যাই হোক, এখন পর্যন্ত অনুমোদিত সমস্ত সাহায্য এক চা চামচ সাহায্যের সমান, যখন সাহায্যের বন্যা বয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হয়।
তিনি বলেছেন, ‘এদিকে, ইসরাইলি সামরিক আক্রমণ ভয়াবহ মাত্রায় মৃত্যু ও ধ্বংসের সাথে তীব্রতর হচ্ছে।’
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি শুক্রবার জানিয়েছে, ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির একটি বেকারিতে যাওয়ার পথে তাদের ১৫টি ‘ট্রাক গত রাতে দক্ষিণ গাজায় লুট করা হয়েছে।’
জাতিসংঘ সংস্থাটির এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘ক্ষুধা, হতাশা এবং আরো খাদ্য সহায়তা আসছে কি-না তা নিয়ে উদ্বেগ, ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতা বৃদ্ধি পেয়েছে।’
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে ‘দ্রুত আরো বেশি পরিমাণে খাদ্য সহায়তা গাজায় পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছে।’
গত ২ মার্চের পর সোমবার গাজা উপত্যকায় প্রথমবারের মতো ত্রাণ সরবরাহ শুরু হয়েছে। ইসরাইলি অবরোধের মধ্যে খাদ্য ও ওষুধের তীব্র ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
গাজা শহরের বন্দরে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি সোবি ঘাটাস বলেছেন, ‘আমি বিবেকবানদের কাছে আমাদের জন্য বিশুদ্ধ পানি ও খাবার পাঠানোর আবেদন করছি।’
‘আমার মেয়ে আজ সকাল থেকে রুটি চাইছে, আর আমাদের কাছে তাকে দেওয়ার মতো কিছুই নেই।’
ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের বেসামরিক বিষয়ক তত্ত্বাবধানকারী ইসরাইলি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংস্থা ‘কোগ্যাট’ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ১০৭টি মানবিক সহায়তা ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে।
কিন্তু ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা, ‘আনরো’-এর প্রধান ফিলিপ লাজ্জারিনি শুক্রবার বলেছেন, মার্চ মাসে ভেঙে যাওয়া ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতিতে জাতিসংঘ গড়ে প্রতিদিন ৫শ’ থেকে ৬শ’ ট্রাক এনেছে।
তিনি এক্সে এক পোস্টে বলেছেন, ‘মূল্যবান সাহায্য লুট, চুরি বা ‘হারিয়ে যাওয়ার’ দৃশ্য দেখে কারো অবাক হওয়া উচিত নয়।’ ‘গাজার মানুষ ১১ সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে অনাহারে’ রয়েছে।
ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গত দিনে তাদের বাহিনী গাজায় ‘সামরিক কম্পাউন্ড, অস্ত্র সংরক্ষণের সুযোগ-সুবিধা এবং স্নাইপার পোস্ট’ আক্রমণ করেছে।
সামরিক বাহিনী আরো বলেছে, ‘এছাড়াও বিমান বাহিনী গাজা উপত্যকা জুড়ে ৭৫টিরও বেশি সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করেছে।’
শুক্রবার বিকেলে সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, গাজার কাছাকাছি সম্প্রদায়গুলোতে বিমান হামলার সাইরেন বাজিয়ে উঠেছিল। পরে রিপোর্ট করা হয়েছিল, ‘গাজা উপত্যকা থেকে ইসরাইলি ভূখণ্ডে প্রবেশকারী একটি প্রজেক্টাইল বিমান বাহিনী দ্বারা ঠেকিয়ে দেওয়া হয়েছিল।’
গাজার উত্তরে আল-আওদা হাসপাতাল শুক্রবার জানিয়েছে, ‘ইসরাইলি কোয়াডকপ্টার ড্রোনগুলো স্থাপনাটিতে বোমা ফেলার পরে’ তাদের তিন কর্মী আহত হয়েছেন।
বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা পরে বলেছে, তারা হাসপাতালে আগুন সফলভাবে নিয়ন্ত্রণে এনেছে।
ইসরাইলি বোমা হামলার পর দক্ষিণ গাজায় ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের ওপর দিয়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়তে দেখেছেন একজন এএফপি সাংবাদিক।
ওই সাংবাদিককে উদ্দেশ্যে করে বিচলিত ইউসুফ আল-নাজ্জার বলেছেন, ‘আমাদের প্রতি দয়া করুন।’ তার স্বজনরা দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রধান শহর খান ইউনিসে বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন।
১৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতি শেষ করে ১৮ মার্চ ইসরাইল গাজায় পুনরায় অভিযান শুরু করে।
শুক্রবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তখন থেকে এই অঞ্চলে কমপক্ষে ৩,৬৭৩ জন নিহত হয়েছে। যার ফলে যুদ্ধে মোট মৃতের সংখ্যা ৫৩,৮২২ জনে দাঁড়িয়েছে। নিহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
সরকারী পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে এএফপি’র হিসাব অনুসারে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলায় ইসরাইলে ১,২১৮ জন নিহত হয়। যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক নাগরিক।
স্বাধীনতাকামী হামাস যোদ্ধারা ২৫১ জনকে জিম্মি করে, যাদের মধ্যে ৫৭ জন গাজায় রয়ে গেছে, তাদের মধ্যে ৩৪ জন মারা গেছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী।