শিরোনাম
ঢাকা, ২৪ মে, ২০২৫ (বাসস) : ভেনিজুয়েলায় আসন্ন পার্লামেন্ট ও আঞ্চলিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিরোধীরা বর্জনের ডাক দেওয়ার মধ্যেই দেশটির শীর্ষস্থানীয় বিরোধী রাজনীতিক হুয়ান পাবলো গুয়ানিপাকে শুক্রবার গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
কারাকাস থেকে এএফপি জানায়, ৬০ বছর বয়সী এই সাবেক এমপি ও বিরোধী নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাদোর ঘনিষ্ঠ সহযোগী গুয়ানিপার বিরুদ্ধে অভিযোগ—তিনি ভোট বানচালের ষড়যন্ত্রে যুক্ত ছিলেন।
রোববারের ভোটের মাত্র দুই দিন আগে তার এই গ্রেপ্তারে দেশটিতে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে হওয়া প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পর থেকেই গুয়ানিপা ও মাচাডো আত্মগোপনে ছিলেন। দেশটির বিরোধী শিবির ও আন্তর্জাতিক মহলের একটি বড় অংশ বিশ্বাস করে ওই নির্বাচনে বিরোধী প্রার্থী এডমুন্ডো গনজালেস উরুতিয়ার বিজয় চুরি করেছেন।
ভেনিজুয়েলার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দিয়োসদাদো কাবেলো শুক্রবার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেন, গুয়ানিপা একটি ‘সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের’ শীর্ষ নেতা। তার কাছ থেকে পাওয়া চারটি মোবাইল ফোন ও একটি ল্যাপটপ থেকে ভোট বানচালের ষড়যন্ত্রের বিস্তারিত তথ্য উদ্ধার হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘তারা হাসপাতাল, মেট্রো স্টেশন, পুলিশ স্টেশন ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে বোমা পেতে রাখতে চেয়েছিল।’
এ ছাড়া পুলিশ তাদের কাছ থেকে বিস্ফোরক, অস্ত্র, ডিটোনেটর ও নগদ অর্থ জব্দ করেছে বলে জানান তিনি।
কাবেলো আরও জানান, এ ষড়যন্ত্রে জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত ৭০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ইকুয়েডর, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, সার্বিয়া ও ‘কয়েকজন’ পাকিস্তানি নাগরিক রয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক বিবৃতিতে বলেন, ‘হুয়ান পাবলো গুয়ানিপাসহ ৭০ জনের অন্যায় ও স্বেচ্ছাচারী গ্রেপ্তারে আমরা উদ্বিগ্ন। এটা মাদুরো সরকারের নিপীড়নের নতুন ঢেউ।’
গ্রেপ্তারের পর গুয়ানিপার এক্স অ্যাকাউন্টে পোস্ট করা হয়: ‘আপনি যদি এটি পড়েন, তবে বুঝবেন আমি নিকোলাস মাদুরোর বাহিনীর হাতে অপহৃত হয়েছি।’
তিনি লেখেন, ‘আমি জানি না সামনে আমার কী হবে, কিন্তু এটা নিশ্চিত করে বলতে পারি—স্বৈরতন্ত্রবিরোধী এই দীর্ঘ লড়াইয়ে আমরা জিতব।’
‘রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ’ -
বিরোধী নেতা মারিয়া কোরিনা মাচাডো এই গ্রেপ্তারকে ‘নিরেট রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, গুয়ানিপা দেশের ও বিদেশের সব নাগরিক ও রাজনৈতিক নেতাদের জন্য ‘এক অনুকরণীয় উদাহরণ’।
প্রায় ১২ বছরের শাসনে মাদুরোর বিরুদ্ধে দেশটির তেলসমৃদ্ধ অর্থনীতিকে ধ্বংস করে ফেলার অভিযোগ রয়েছে। এর ফলে লাখ লাখ মানুষ দেশ ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন।
গত জুলাইয়ে তৃতীয় মেয়াদে নির্বাচনে বিজয় দাবি করেন মাদুরো, তবে সে ফলাফলের পক্ষে কোনো বিশদ তথ্য দেননি তিনি। বরং বিরোধীরা নিজেদের গঠিত ফলাফলে গনজালেস উরুতিয়ার বিপুল বিজয়ের দাবি করে।
সরকারি কৌঁসুলির দপ্তর শুক্রবার জানায়, গুয়ানিপা শুধু আসন্ন নয়, বরং ২০২৪ সালের নির্বাচনের সময়ও ‘নাশকতার পরিকল্পনায় জড়িত’ একটি অপরাধী সংগঠনের সদস্য ছিলেন।
২০১৩ সালে প্রয়াত সমাজতান্ত্রিক নেতা হুগো শাভেজের মনোনীত উত্তরসূরি হিসেবে ক্ষমতায় আসা সাবেক বাসচালক মাদুরো প্রায়ই দাবি করে থাকেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও কলম্বিয়া-সমর্থিত অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার শিকার।
সমালোচকদের গণহারে গ্রেপ্তার করা এখন দেশটির এক রুটিন ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
সোমবার সরকার কলম্বিয়া থেকে ফ্লাইট স্থগিত করেছে। কারণ হিসেবে বলা হয়, ‘সন্ত্রাসী ভাড়াটে বাহিনী’ সীমান্ত পেরিয়ে ভেনিজুয়েলায় প্রবেশ করেছে এবং তাদের মধ্যে বহুজনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আইনজীবী হিসেবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গুয়ানিপা ২০১৮ সালের বিতর্কিত নির্বাচনের পর বিরোধী নেতা হুয়ান গুইদো গঠিত সমান্তরাল সরকারের উপ-প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সবচেয়ে জনপ্রিয় বিরোধী প্রার্থীদের অংশ নিতে দেওয়া হয়নি বলে বিরোধীরা ওই নির্বাচন বর্জন করে।