বাসস
  ২৪ মে ২০২৫, ১০:২১

চিপস যুদ্ধের নতুন মোড়: ট্রাম্পের আমলে চীন-মার্কিন প্রযুক্তি লড়াই

ঢাকা, ২৪ মে, ২০২৫ (বাসস) : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চালিত অত্যাধুনিক চিপের ওপর নজর রেখে চীনের হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে নতুন করে পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এমন পদক্ষেপ বলে দেয়, বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে প্রযুক্তি নিয়ে বিরোধ এখন ভিন্ন দিকে মোড় নিচ্ছে।

এএফপি'র বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে—মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে এই চিপ যুদ্ধ নতুন ধাপে প্রবেশ করেছে:

- চীনের প্রতি নতুন করে মনোযোগ -

চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্র সরকার একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা চীনের কাছে উন্নতমানের এআই চিপ হস্তান্তরে সীমা আরোপের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনছে।

১২ মে, মার্কিন বাণিজ্য দপ্তর জানায়, তারা ‘এআই ডিফিউশন রুল’ বাতিল করবে। ট্রাম্পের পূর্ববর্তী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চীনের হাত থেকে মার্কিন চিপ সুরক্ষিত রাখতে এ নিয়ম জারি করেছিলেন।

এই নিয়ম ১৫ মে থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল, যাতে তিনটি স্তরে চিপ রপ্তানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপের কথা ছিল। এতে বিশ্বস্ত মিত্রদেশগুলো অবাধে  চিপ আমদানি করতে পারলেও, চীনের মতো নিচের টিয়ারের দেশগুলোতে চিপ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বা নিষিদ্ধ করা হতো।

বাণিজ্য দপ্তরের মতে, এই নিয়ম ‘মার্কিন উদ্ভাবনকে বাধাগ্রস্ত’ করত এবং বহু দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি করত।

একই বিবৃতিতে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়—হুয়াওয়ের সবচেয়ে উন্নত চিপ ‘অ্যাসেন্ড’ ব্যবহারে মার্কিন রপ্তানি বিধিনিষেধ লঙ্ঘিত হয়। চীনা এআই মডেল প্রশিক্ষণে মার্কিন নির্মিত চিপ ব্যবহারে ‘গুরুতর পরিণতির’ হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়।

এশিয়া সোসাইটি পলিসি ইনস্টিটিউটের গবেষক লিজি লি বলেন, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ওয়াশিংটন তাদের এআই নিয়ন্ত্রণে চীনের ওপরই 'প্রধানত আঘাত হানতে চায়'।

সিঙ্গাপুরের এস রাজরত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ফেলো মনোজ হার্জানি একে ‘হুয়াওয়েকে ঘিরে স্পষ্টভাবে চীনকে নিশানা করার কৌশল’ হিসেবে বর্ণনা করেন।

- বাইডেনের চেয়ে আলাদা কৌশল -

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের চিপ নীতির ধরন বাইডেনের সময়কার কৌশল থেকে স্পষ্টত ভিন্ন।

অস্ট্রেলিয়া-চীন সম্পর্কবিষয়ক ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মারিনা ঝাং বলেন, বাইডেন মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয় করে চীনের প্রবেশাধিকার ঠেকানোর পক্ষপাতী ছিলেন।

অন্যদিকে ট্রাম্প বেছে নিয়েছেন ‘বাছাইমূলক ও দ্বিপক্ষীয়’ কৌশল। মিত্রদের বাজার রক্ষা ও নিজ দেশের কোম্পানিগুলোকে সুবিধা দিতে এই কৌশল নমনীয় হলেও হুয়াওয়ের মতো নির্দিষ্ট কোম্পানিকে একতরফাভাবে নিশানা করেছেন তিনি ।

মনোজ হার্জানি বলেন, সাধারণভাবে ট্রাম্পকে এমন এক নেতা হিসেবে দেখা হয়, যিনি ‘মিত্রদের তেমন পাত্তা দেন না’। কিন্তু এআই-ভিত্তিক নতুন অংশীদারত্ব গঠনের উদ্যোগ তার সসম্পর্কে এ ধারণাকে অনেকটা  খণ্ডন করে।

- বেইজিংয়ের প্রতিক্রিয়া -

চীন যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে ‘বুলিং’ আখ্যা দিয়ে বলেছে, ওয়াশিংটন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের অপব্যবহার করে চীনকে দমিয়ে ও ঠেকিয়ে রাখতে চাইছে।

অধ্যাপক ঝাং বলেন, চীনের এমন বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, তারা সহজে পিছু হটবে না। তবে এই নিয়ন্ত্রণ হুয়াওয়ের জন্য ‘জরুরি মার্কিন প্রযুক্তি পাওয়ায় বড় বাধা’ হয়ে দাঁড়াবে।

তিনি আরও বলেন, ‘এআই প্রতিযোগিতা এখন এমন এক স্তরে পৌঁছেছে, যেখানে সংঘাতের ঝুঁকি যেমন বেড়েছে, তেমনি ভবিষ্যতের প্রযুক্তি শাসনব্যবস্থা নিয়ে বৈশ্বিক সমঝোতা জটিলতর হয়ে পড়ছে।'

তবে চীন এখন অভ্যন্তরীণ সক্ষমতা গড়ে তোলার দিকেই মনোযোগ দিচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে উঠে এসেছে স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান ‘ডিপসিক’-এর নাম, যার চ্যাটবট তুলনামূলক কম খরচে মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বীদের সমান কর্মক্ষমতা দেখাতে সক্ষম।

আলিবাবা ও শাওমির মতো কোম্পানিগুলোও এআই-এ ব্যাপক বিনিয়োগ ঘোষণা করেছে। গবেষকরা বলছেন, এটা চীন সরকারের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য—বিদেশি সরবরাহের ওপর নির্ভরতা কমানোর সম্পূরক।

লি বলেন, ‘কৌশলটি হলো—যুক্তরাষ্ট্রকে এখনই টেক্কা দেওয়া নয়, বরং স্বল্পমেয়াদে একটি টেকসই অবস্থান নিশ্চিত করে ভবিষ্যতের জন্য ঘরোয়া সক্ষমতা গড়ে তোলা।’

- প্রযুক্তি দ্বন্দ্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা -

এই এআই প্রতিযোগিতা যুক্তরাষ্ট্র-চীনের মধ্যে বিদ্যমান বাণিজ্য উত্তেজনায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের শুরুর দিক থেকেই দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের ঘটনা ঘটে। যদিও মে মাসে ৯০ দিনের জন্য কিছু শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়, কিন্তু তাতে প্রযুক্তিগত দ্বন্দ্ব  থেমে নেই।

লি বলেন, 'শুল্ক বাড়ানো বা কমানো যায়, কিন্তু প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতা এখন জাতীয় নিরাপত্তার অংশ হয়ে উঠেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র যদি চীনের প্রধান এআই কোম্পানিগুলোকে কালো তালিকাভুক্ত করতে থাকে, তবে অন্য কোনো খাতে বেইজিংয়ের পক্ষে বড় ছাড় দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।'