শিরোনাম
ঢাকা, ২৩ মে, ২০২৫ (বাসস) : পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে শুক্রবার ইতালির রোমে পঞ্চম দফায় আলোচনায় বসেছে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল।
ওমানের রাজধানী মাসকাটে অনুষ্ঠিত শেষ বৈঠকটি তেহরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ নিয়ে মতবিরোধের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছিল।
তেহরান থেকে এএফপি জানায়, চলতি বছরের এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া ধারাবাহিক এ আলোচনা উভয় দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ। ২০১৫ সালের ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর এবারই যুক্তরাষ্ট্র বড় উদ্যোগ নিয়েছে।
ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় ক্ষমতায় আসার পর ইরানের ওপর আবারও ‘সর্বোচ্চ চাপ’ প্রয়োগ নীতি গ্রহণ করেন। তিনি আলোচনার পক্ষে থাকলেও কূটনৈতিক উদ্যোগ ব্যর্থ হলে সামরিক ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
ইরান অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে একটি নতুন চুক্তি করতে চায়। তেহরান বলছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ করতে বলে, তবে কোনো চুক্তি সম্ভব নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ বলেছেন, ‘আমরা এক শতাংশ সমৃদ্ধকরণও অনুমোদন দিতে পারি না।’
যুক্তরাষ্ট্রের এ অবস্থানকে ‘রেডলাইন’ উল্লেখ করে ইরান বলেছে, পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি অনুযায়ী ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করা তাদের অধিকার।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি স্বীকার করেছেন, দুই পক্ষের মধ্যে ‘মৌলিক মতপার্থক্য’ এখনও রয়ে গেছে। তবে তিনি জানান, ইরান বিশ্ববাসীকে তার পরমাণু স্থাপনাগুলোতে আরও পরিদর্শনের সুযোগ দিতে প্রস্তুত।
পঞ্চম দফায় আলোচনায় বসার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১টায়। এ আলোচনা এমন এক সময়ে হচ্ছে, যখন জুনে জাতিসংঘের পরমাণু নজরদারি সংস্থা ও ভিয়েনাভিত্তিক আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইএইএ)-এর বৈঠক রয়েছে। অপরদিকে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির মেয়াদও অক্টোবরে শেষ হবে।
২০১৫ সালের চুক্তিটি জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অব অ্যাকশন (জেসিপিওএ) নামে পরিচিত। ইরান পরমাণু অস্ত্রে শক্তিধর হওয়ার চেষ্টা করছে, এমন সন্দেহে ইরানের বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লাগে পশ্চিমা বিশ্ব।
পরে ইরান বিশ্বের ছয়টি পরাশক্তির সঙ্গে তার পরমাণু কর্মসূচি সংক্রান্ত একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে আসতে সম্মত হয়। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন এবং রাশিয়া, অর্থাৎ পি ফাইভ প্লাস ওয়ান নামে পরিচিত পরাশক্তিগুলো ছিল এই চুক্তির অংশীদার।
চুক্তিটির ফলে কিছু নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের শর্তে, ইরান পরমাণু কার্যক্রম সীমিত করে। কিন্তুমার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১৮ সালে তার প্রথম মেয়াদে একতরফাভাবে ইরানের তেল রপ্তানি ও ব্যাংকিং খাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চুক্তিটি লঙ্ঘন করেন।
এক বছর পর ইরান চুক্তির প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসতে শুরু করে এবং পরমাণু কর্মসূচি জোরদার করে। বর্তমানে তারা ইউরেনিয়াম সম্প্রসারণ ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে, যা চুক্তির নির্ধারিত সীমা ৩.৬৭ শতাংশের অনেক বেশি। তবুও এটি পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় মাত্রা ৯০ শতাংশের নিচে রয়েছে।
তেহরানের পরমাণু বিশ্লেষক মোহাম্মদ মারান্দি বলেন, বিষয়টা সহজ, যদি যুক্তরাষ্ট্র চায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ হোক, তবে কোনো চুক্তি হবে না।
ইরানের পরমাণু শক্তি সংস্থার তথ্য মতে, তাদের পরমাণু খাতে ১৭ হাজার কর্মী রয়েছে। এ সংখ্যা অন্যান্য দেশের মতো, যেখানে শান্তিপূর্ণ কাজে ব্যবহারের জন্য ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ হয়।
সংস্থাটির মুখপাত্র বেহরুজ কামালভান্দি বলেছেন, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল ও জাপান পরশাণু অস্ত্র তৈরি ছাড়াই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে।
পরমাণু আলোচনায় রয়েছে ইরান-ইসরাইল শত্রুতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তাদের উদ্ধৃত করে সিএনএন জানায়, ইসরাইল ইরানের ওপর হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে জাতিসংঘে দেওয়া এক চিঠিতে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দেন, ‘যদি জায়নবাদী শাসক আমাদের পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায়, তবে যুক্তরাষ্ট্রকেও এর দায় নিতে হবে।’
এদিকে হোয়াইট হাউস জানায়, বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ‘গঠনমূলক আলোচনা’ করেছেন। আলোচনায় ছিল ইরানের পরিস্থিতি ও ওয়াশিংটনে ইসরাইলি দূতাবাসের দুই কর্মীর নিহত হওয়ার ঘটনা।
জুনে ভিয়েনায় আইএইএ-এর সভায় ইরানের পরমাণু কার্যক্রম নিয়ে পর্যালোচনা হবে। ২০১৫ সালের চুক্তিতে বলা হয়েছে, যদি ইরান তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়,তবে ‘স্ন্যাপব্যাক’ নামে পরিচিত এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞাগুলো পুনরায় আরোপ করা হবে।
চুক্তির তিনটি ইউরোপীয় পক্ষ বৃটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি হুঁশিয়ারি দিয়েছে, ইউরোপের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়লে তারা এই স্ন্যাপব্যাক প্রক্রিয়া সক্রিয় করবে।
এর জবাবে ইরান বলছে, এমনটি হলে ইউরোপের ভূমিকা শেষ হয়ে যাবে এবং পরিস্থিতি ‘অপরিবর্তনীয় উত্তেজনার’ দিকে গড়াবে।