বাসস
  ২৩ মে ২০২৫, ১৩:২৯

যুক্তরাষ্ট্রে বন্ড বিক্রির ধাক্কার পর এশিয়ার শেয়ারবাজারে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা.

ঢাকা, ২৩ মে, ২০২৫ (বাসস): বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের বন্ডবাজারে বিক্রি কমে যাওয়ার পর শুক্রবার এশিয়ার শেয়ারবাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে।

মার্কিন ট্রেজারি বন্ডের সামান্য পতন এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর-কর্তনের বাজেট কংগ্রেসে পাস হওয়ার খবর বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

হংকং থেকে এএফপি জানিয়েছে, এই সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতি নিয়ে উদ্বেগ আবার সামনে চলে এসেছে। যখন মুডিস দেশটির শীর্ষস্থানীয় ঋণমান প্রত্যাহার করে এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন একটি বাজেট এগিয়ে নেন, যা অনেকের মতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রমবর্ধমান ঋণের বোঝা আরো বাড়াবে।

বুধবার ২০ বছরের ট্রেজারি বন্ডের দুর্বল নিলাম সেই উদ্বেগ আরো বাড়িয়ে তোলে। যার ফলে এপ্রিল মাসে ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধির পর সাম্প্রতিক পুনরুদ্ধার হওয়া শেয়ারবাজার আবার চাপের মুখে পড়েছে।

তবে বৃহস্পতিবার নিউইয়র্কে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগের প্রতি আগ্রহ ফিরে এসেছে। যখন ট্রেজারি বন্ডের বিক্রি কিছুটা কমে যায়। এর পেছনে ছিল রিপাবলিকান-নিয়ন্ত্রিত হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে ট্রাম্পের ‘একটি বড়, সুন্দর বিল আইন’ খুব অল্প ব্যবধানে পাস হওয়া। এই বিল সামাজিক নিরাপত্তামূলক কর্মসূচিতে কাটছাঁট করে ২০১৭ সালের কর হ্রাস ১০ বছর মেয়াদে সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করে।

এখন বিলটি সিনেটে পাঠানো হবে। এটি নিয়ে রাজস্ব রক্ষণশীলদের মধ্যে সন্দেহ ছিল, যারা মনে করেন এ পথে চললে দেশ দেউলিয়া হয়ে পড়তে পারে। স্বাধীন বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, বিলটি দশ বছরের মধ্যে বাজেট ঘাটতি ৪ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে।

তবে হোয়াইট হাউস দাবি করেছে, এই বিল ৫.২ শতাংশ পর্যন্ত প্রবৃদ্ধি আনবে, ফলে এটি ৩৬ ট্রিলিয়ন ডলারের জাতীয় ঋণের ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলবে না। যদিও এই প্রবৃদ্ধির অনুমান মূলধারার বিশ্লেষকদের পূর্বাভাসের বাইরে।

পেপারস্টোনের বিশ্লেষক ক্রিস ওয়েস্টন বলেছেন, ‘অনেকেই দেখেছেন বাজেট বিলটি অতিরিক্ত প্রণোদনার ব্যবস্থা না রাখায় ২০২৬ ও ২০২৭ সালে ঘাটতি অনেকটাই হ্রাস পাবে, ফলে প্রকৃতপক্ষে এর প্রভাবও হবে বেশ নিরপেক্ষ।’

যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থান, বাড়ি বিক্রি এবং শিল্প খাতের কার্যক্রম সংক্রান্ত ইতিবাচক উপাত্ত বন্ডের চাহিদা বাড়িয়ে তুলেছে, যার ফলে ট্রেজারি ইল্ড হ্রাস পেয়েছে এবং তা বাজারে ইতিবাচক মনোভাব ফিরিয়ে এনেছে।

ওয়াল স্ট্রিটে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার পর এশিয়ার বাজারগুলো বেশিরভাগই ইতিবাচক সূচকে দিন শুরু করেছে।

হংকং, সাংহাই, টোকিও, সিডনি, সিউল ও ম্যানিলা সূচকে ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। তবে সিঙ্গাপুর, জাকার্তা, তাইপে ও ওয়েলিংটন কিছুটা পিছিয়ে ছিল।

ফেডারেল রিজার্ভ গভর্নর ক্রিস্টোফার ওয়ালারের বক্তব্যেও বিনিয়োগকারীরা খানিকটা স্বস্তি পেয়েছেন। তিনি বলেছেন, যদি ট্রাম্পের শুল্ক আবার ১০ শতাংশের আশপাশে নেমে আসে, তবে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে সুদের হার কমানো সম্ভব হতে পারে।

তিনি ‘ফক্স বিজনেস’কে বলেছেন, ‘যদি আমরা জুলাইয়ের মধ্যে শুল্ক ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারি এবং তা চূড়ান্তভাবে কার্যকর হয়, তাহলে বছরের দ্বিতীয়ভাগের জন্য অবস্থান ভালো হবে।’

এদিকে, জাপানে খাদ্যপণ্যের দাম, বিশেষ করে চালের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় প্রত্যাশার চেয়ে বেশি মুদ্রাস্ফীতির তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর ইয়েনের বিপরীতে ডলারের দর কিছুটা কমে গেছে।

সাম্প্রতিক সুদের হার বৃদ্ধির প্রেক্ষাপট এবং ট্রাম্পের শুল্কনীতির বিষয়টি জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (বিওজে) নীতিনির্ধারণে প্রভাব ফেলতে পারে।

অন্যদিকে, বিটকয়েন তার সর্বশেষ ঊর্ধ্বগতির ধারা অব্যাহত রেখেছে এবং নতুন রেকর্ড মূল্য ১১১,৯৮০.৩৩ ডলার ছুঁয়েছে। এর পেছনে রয়েছে স্টেবলকয়েন (ডলারের সঙ্গে মানানসই ক্রিপ্টো কয়েন) সম্পর্কিত একটি প্রস্তাবিত বিল ঘিরে আশাবাদ, যা ভবিষ্যতে বিটকয়েনসহ ডিজিটাল মুদ্রার জন্য পরিষ্কার নিয়ন্ত্রণ কাঠামো তৈরি করতে পারে।