শিরোনাম
ঢাকা, ২৩ মে, ২০২৫ (বাসস) : যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে নতুন দফা পারমাণবিক আলোচনা শুরুর ঠিক আগমুহূর্তে ইরান হুঁশিয়ারি দিয়েছে, তাদের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর ইসরাইল কোনো হামলা চালালে তার দায় যুক্তরাষ্ট্রকেও নিতে হবে।
তেহরান থেকে এএফপি জানায়, মঙ্গলবার সিএনএন এক প্রতিবেদনে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানায়, চলমান আলোচনা সত্ত্বেও ইসরাইল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি জাতিসংঘে এক চিঠিতে বলেন, 'ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে যদি জায়নবাদী শাসন ইসরাইল হামলা চালায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র সরকারকেও তাৎপর্যপূর্ণভাবে দায় নিতে হবে এবং তারা আইনগতভাবে জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে।'
তিনি আরও বলেন, 'জায়নবাদী রেজিমের যেকোনো দুঃসাহসিক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ইরান কঠোরভাবে হুঁশিয়ারি দিচ্ছে এবং ওই শাসনের যেকোনো হুমকি বা অবৈধ কার্যক্রমের জবাবে কড়া প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।'
এই পারমাণবিক আলোচনা ১২ এপ্রিল শুরু হয়েছিল, যা যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে ২০১৮ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে ঐতিহাসিক পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা সরে আসার পর দুই দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ের যোগাযোগ।
আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী ওমান জানিয়েছে, আলোচনার পঞ্চম দফা শুক্রবার রোমে অনুষ্ঠিত হবে।
মার্কিন প্রতিনিধি দলে থাকবেন ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও আলোচক স্টিভ উইটকফ এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নীতিনির্ধারণ প্রধান মাইকেল অ্যান্টন, যিনি এই আলোচনা সংক্রান্ত কারিগরি বিষয়েও যুক্ত।
আলোচনায় সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ ইস্যু। ২০১৫ সালের চুক্তিতে ইরানকে শুধুমাত্র বেসামরিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কম মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
বর্তমানে ইরান ৬০ শতাংশ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যা ওই চুক্তিতে নির্ধারিত ৩.৬৭ শতাংশ সীমা ছাড়িয়ে গেছে। তবে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে প্রয়োজনীয় ৯০ শতাংশের নিচে রয়েছে।
মিসাইল সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞা থাকবে
ট্রাম্প গত সপ্তাহে কাতার সফরে বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন ইরান আলোচনার গুরুত্বপূর্ণ শর্তগুলো মেনে নিতে সম্মত হয়েছে এবং তার কূটনীতি সামরিক সংঘাত এড়াবে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বুধবার কংগ্রেসে দেওয়া এক সাক্ষ্যে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের অধিকার একেবারেই মানবে না।
তিনি বলেন, 'ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে সক্ষম হতে দেওয়া মানে তাদের পরমাণু অস্ত্রের সীমায় পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ দেওয়া। আমরা তা হতে দিতে পারি না।'
২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের ওপর যে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল, তা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করছে তেহরান। এসব নিষেধাজ্ঞার আওতায় তেল রফতানি করতেও বাধার সম্মুখীন হয় ইরান।
রুবিও জানান, ইরানের ব্যালিস্টিক মিসাইল কর্মসূচি সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে, যদিও ২০১৫ সালের চুক্তিতে এ বিষয়টি সরাসরি উল্লেখ ছিল না।
তিনি বলেন, 'সন্ত্রাসবাদ, মিসাইল কর্মসূচি এবং অন্যান্য সম্পর্কিত নিষেধাজ্ঞা চুক্তির আওতায় না এলেও সেগুলো বহাল থাকবে।'
রুবিও সিএনএন প্রতিবেদনের ব্যাপারে সরাসরি কিছু বলেননি, তবে উল্লেখ করেন যে, ইসরাইল সামরিক বিকল্প বিবেচনা করছে, এটা কারও অজানা নয়।
‘ধ্বংসাত্মক জবাব’ দেবে ইরান
ইরানের চিরশত্রু ইসরাইল বারবার পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলার হুমকি দিলেও ট্রাম্প প্রশাসন এতে কিছুটা অনীহা দেখিয়েছে।
বৃহস্পতিবার ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) মুখপাত্র আলি মোহাম্মদ নায়িনি বলেন, 'জায়নবাদী রেজিম যদি কোনও বোকামিপূর্ণ হামলা চালায়, তাহলে তাদের ছোট ও দুর্বল ভূখণ্ডেই তারা ধ্বংসাত্মক ও কঠোর জবাব পাবে।'
এদিনই ইরানি সেনাবাহিনীর স্থলবাহিনী নতুন তিনটি ড্রোন উন্মোচন করেছে, যার মধ্যে দুটি নজরদারি ও একটি আত্মঘাতী (কামিকাজে) ড্রোন রয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ।
এর আগে, তেহরানের দক্ষিণে ফোর্ডো পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্রে একদল বিক্ষোভকারী দেশটির পারমাণবিক কার্যক্রমের পক্ষে সমর্থন জানান।
তারা ইরানি পতাকা উড়িয়ে 'পারমাণবিক শক্তি আমাদের অবিচ্ছেদ্য অধিকার' ও 'সমঝোতা নয়, আত্মসমর্পণ নয়, আমেরিকার বিরুদ্ধে লড়াই'- স্লোগান দেন।
ইরান ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেয় না এবং বরাবরই তাকে 'জায়নবাদী শাসন” হিসেবে উল্লেখ করে। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই ছায়াযুদ্ধ চললেও গত বছর গাজা যুদ্ধের পটভূমিতে তারা একে অপরের ওপর প্রথমবার সরাসরি হামলা চালায়।